‘শাহী দৌলতের মাঝে শান্তি আমি পাইনি কখনো তাইতো দুঃসহ দিন, স্বপ্ন-রাত্রি দুঃসহ আমার এ বালাখানা। পাই না প্রাণের স্পর্শ। মানুষের আনন্দ বেদনা থেকে নির্বাসিত রঙ্গমঞ্চে আমি চাইনি এ প্রবঞ্চনা জীবনের মিথ্যা অভিনয়ে। অথচ এখানে এই মহলের কক্ষে, কক্ষান্তরে প্রাণহীন জৌলুসের মাঝে দেখি কৃত্রিম ছলনা অর্থহীন। কৃত্রিম সৌজন্যে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। পাই না সহজ শান্তি কোনখানে। অন্ধ অহমিকা এখানে চেনে না প্রেম, পণ্ডিতের ভ্রান্ত অহংকার হৃদয়ের রাখে না সন্ধান। নাই সমবেদনার অশ্রুকণা এ মহলে। অন্ধ এরা স্বার্থের জিঞ্জিরে ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ ইব্লিসের কারাবন্দী যেন। ঘৃণ্য এ জিন্দান থেকে মুক্তি চাই, মুক্তি চাই আমি প্রমুক্ত জ্ঞানের পথে, ইনসানের খিদমতের পথে। আল্লাহ আলম আর মখ্লুকাত আশ্চর্য্য সুন্দর, সুন্দর পৃথিবী, ফুল, রাত্রির সিতারা; মাহ্তাব ভোরের আফতাব। সুন্দর বর্ষার মেঘ, সারি বাঁধা কালো কবুতর। কিন্তু যা সুন্দরতর-সে বান্দা মানুষ-বান্দা এলাহির। দিন রাত্রি ঘুরি সেই ইন্সানের খিদমতের পথে।’
কথাগুলো কবি ফররুখ আহমদের একান্তই একার। যিনি ছিলেন বাংলা কাব্য-সাহিত্যের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। আমাদের সাহিত্য-ইতিহাসের স্বল্পালোচিত ব্যক্তিসমূহের অন্যতম। অথচ বাংলা কাব্যে তাঁর আসন তর্কাতীতভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। নজরুলের মতই বাংলা কাব্যগগণে তাঁর আবির্ভাব ছিল ধূমকেতুর মত।
ফররুখ আহমদের সমসাময়িক কবিকূলের মধ্যে তিনি এতটাই বিশিষ্ট, স্বতন্ত্র ও একক ছিলেন যে তাঁকে সহজে কারো সঙ্গে তুলনা করা যায় না। তিনি এক বিশেষ কাব্যধারার অনুসারী এবং নিজস্ব একটা আদর্শ আর ভাবকল্পে ছিলেন বিশ্বাসী, তাঁর কাব্যদেহে এসবের প্রতিফলন অসন্দিগ্ধ। বিশেষ ভাবাদর্শে রচিত বহু কবিতা হয়ে উঠেছে উজ্জ্বল, উচ্ছ্বল ও হৃদয়স্পর্শী।
অনড় বিশ্বাস আর আবেগের তোড়ে তিনি খাঁটি কবিতার সীমা লঙ্ঘন করেননি, বক্তব্যের উচ্চরোল অনেক সময় কবিতাকে বিঘাত করে, ফররুখ আহমদের বেলায় তা ঘটেনি, কবিতার মূল্যে কণ্ঠস্বরের দাম বাড়াবার চেষ্টাও করেননি তিনি। খাঁটি কবির এসব লক্ষণ তাঁর কবিসত্তার মর্মমূলে সব সময় সক্রিয় ছিল বলে তাঁর কবিতা কখনো হয়ে পড়েনি স্রেফ প্রচারসর্বস্ব।
কবি ফররুখ আহমদ ছিলেন এক বিশেষ ঐতিহ্যানুসারী সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন ঐতিহ্যসন্ধানী। বাঙলা কাব্যে তিনি নতুন ঐতিহ্য নির্মাণ করেন। ইসলামের হারানো ইতিহাস আর নানা কাব্য ও কল্পকাহিনীতে তিনি তাঁর ধ্যান আর কবিতার উপজীব্য খুঁজেছেন এবং তাঁর সৃজনশীলতাকে তাতেই রেখেছিলেন অনেকখানি সীমিত। সিন্দাবাদ, হাতেম ও নৌফেল ইত্যাদি নাম-চরিত্র ছিল তাঁর কাব্যের অনুষঙ্গ। আরব্যোপন্যাসের মুগ্ধ পাঠক ছিলেন জন্যেই বোধকরি হাজার এক রজনী’র বহু ঘটনা ও চরিত্র তাঁর হাতের ছোঁয়ায় নতুন প্রাণ পেয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলামের পর বাংলা কাব্যে ইসলামী ধারার নতুনতর, স্বতন্ত্রতর দিগন্ত উন্মোচন সম্ভব, এমনটি চিন্তা যখন অনেকেই করেন নি, তখনই র্ফরুখ আহমেদের আবির্ভাব। নজরুল-যুগের পর ফররুখ-যুগ যেকোন বিচারে ছিল বাংলা সাহিত্য-ইতিহাসে অনন্য। ফররুখ আহমদ একটি যুগের স্রষ্টা। কাব্যক্ষেত্রে তিনি এমন সব নতুন আঙ্গিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, যা আগে অনেকেই কল্পনা করেন নি।
ফররুখ আহমদের সাফল্য ছিল তর্কাতীত। তিনি নতুন ভাবধারা এবং নতুন পথের সন্ধান করেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন নতুন এক জগতের। মুসলিম সমাজের জড়তা স্থবিরতাকে ভেঙে-চুরে তিনি গান গেয়েছেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার। একটি সুনির্দিষ্ট মতাদর্শে প্রবলভাবে বিশ্বাসী থেকেও তিনি ছিলেন বিশুদ্ধ কবি।
ফররুখ আহমদের সমস্ত চিন্তা বিশ্ব মানুষের কল্যাণে সমর্পিত, তাঁর সমস্ত ভালবাসা নিগৃহীত মানুষকে নিয়ে আবর্তিত; এবং যেহেতু আত্মকেন্দ্রিকতার ঘৃণ্য ফাঁদ তাঁকে বন্দী করতে পারনি, তাই দেশ-কাল-পাত্রের সীমাকে তাঁর প্রতিভা অনায়াসে গেছে অতিক্রম ক’রে- তিনি হ’য়ে উঠেছেন শিল্পের প্রথিতযশা সন্তান।
ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ-এর সংঘাতময় দিন তিনি দেখেছেন। জীবনের বহু ঝড়-ঝাপটায়, দুঃখ-দুর্দিনেও তিনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হন নি। তিনি কখনও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করেননি।
বৃটিশ আমলে একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সন্তান ফররুখ আহমদ জন্মেছিলেন রূপোর চামচ মুখে দিয়ে। আজীবন সৎ, ন্যায়-নীতিবান কবি ফররুখ আহমদ চরম অভাব ও দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করেছেন। বিপ্লবী চেতনা তাঁকে কখনোই প্রচলিত সমাজব্যবস্থার সাথে আপস করতে দেয়নি।
‘নৌফেল ও হাতেম’ কবি ফররুখ আহমদের লেখা প্রায় তিনশ পৃষ্ঠার এক বিরাট মহাকাব্য। ‘সাত সাগরের মাঝি’ কবির কাব্য-জীবনের প্রথম পর্যায়ের সৃষ্টি। ‘সিরাজুম মুনীরা’ কবির কাব্যজীবনের দ্বিতীয় পর্যায়। ‘নৌফেল ও হাতেম’ ফররুখ আহমদের একটি দু:সাহসিক কবিকর্ম। ফররুখ আহমদ কাব্যনাট্য লেখার আঙ্গিক সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন ১৮ মাত্রার অমিত্রাক্ষরের, যা মধুসূদনের অনুসরণ হলেও এক নতুন আবিষ্কার।
যদিও অনেক সমালোচক এই কাব্যটিকে মহাকাব্য বলতে অস্বীকার করেছেন। আবার অনেকে মহাকাব্য হিসেবে স্বীকার করেলেও এই কাব্য-গ্রন্থটিকে অকাব্য বলেছেন। তারা মত প্রকাশ করেছেন, জীবনবোধে ফররুখ আহমেদ কাব্যপ্রীতি থেকে সরে গেছেন এবং ধর্মপ্রীতিকে জীবনাদর্শের শ্রেষ্ঠনীতি ব’লে গ্রহণ করেছেন।
‘সাত সাগরের মাঝি’, ‘পাঞ্জেরী’ এবং ‘ডাহুক’ কাবতা তাঁর সেরা সৃষ্টি। তিনি শিশুদের জন্য অনেক লিখেছেন। অজস্র ব্যঙ্গ কবিতা রচনা করেছেন। ‘সাত সাগরের মাঝি’তে মাত্রাবৃত্তের বিলম্বিত লয়ে সুর, ছন্দ ও চিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। মানুষের রহস্যময় জীবনকে অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, নিরুদ্বেল ও বাস্তব দৃষ্টিসম্পন্ন করেছে।
এই কবিতা ফররুখ আহমদকে সৌন্দর্য ও জাগরণের কবির স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও ধোলাই কাব্য (১৯৬৩), কাফেলা (১৯৮০), চিড়িয়াখানা (১৯৮০), হাবেদা মরুর কাহিনী (১৯৮১), সিরাজাম নুনীরা (১৯৫২), সিন্দাবাদ (১৯৮৩), দিলরুবা, মুহূর্তের কবিতা (১৯৬৩) হে বন্য স্বপ্নেরা (১৯৭৬), তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্য গ্রন্থ।
অস্থিমজ্জায় তিনি একটি বিশেষ আদর্শ ধারণ করলেও একই সঙ্গে তিনি ছিলেন হৃদয়ব্যাপী একজন খাঁটি কবি। কবিতার যে একটা কৌতুহলোদ্দীপক জগৎ আছে- যার অনেকখানি সম্পর্ক স্বপ্নের সঙ্গে কল্পনাকে যা আরও শানিত করে এবং খোরাক যোগায়। প্রত্যেক কবিরই মানস-ভুমির একটি দিক থাকে: একটি ভাবগত এবং অন্যটি শিল্পগত বিষয়- যাকে আমরা আঙ্গিক বলি।
কবিতার এই অঙ্গ অলঙ্কৃত হতে পারে আবার তা নিরলঙ্কৃতও হতে পারে। চিন্তাকে ভাবোপযোগী করে ব্যক্ত করতে সাহায্য করে এই অলঙ্কার। বলা বাহুল্য, কাব্যের ক্ষেত্রে এই অলঙ্কারের সাহায্য প্রায় অনিবার্য; এবং কবির ব্যক্তি বৈশিষ্ট ও স্বরূপ প্রকাশে এই অলঙ্কার বড় ভূমিকা রাখে।
ফররুখ আহমদ সেই কাব্য-জগৎকে আবিস্কার করতে পেরেছেলেন। তাঁর কল্পনাকে এক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল আরব্য উপন্যাস এবং পুঁথি। জাহাজ, সিন্দাবাদ, নাবিক, মাল্লা এবং জ্বিন পরীর মুল্লুকে তার ভ্রমণ। র্ফরুখ আহমদের কবিতায় উঠে এসেছে ব্যতিক্রমধর্মী ফুল, তার রূপ-গন্ধ, সেই সঙ্গে ঘ্রাণ-উদ্দীপ্তকর রন্ধনকর্মে ব্যবহৃত মশলা- এলাচি লবঙ্গ দারুচিনি ইত্যাদি; ব্যবহৃত হয়েছে দৃষ্টি-সম্মোহনকারী হরেক রকম উজ্জ্বল রঙীন পাথরের নাম।
প্রত্যেক কবিরই একটি ব্যক্তিগত আদর্শ থাকে। ফররুখ আহমদেরও একটি আদর্শ ছিল। তা হচ্ছে ইসলামী আদর্শ। বস্তুত তাঁর ইসলাম প্রীতির কারণ মানবপ্রীতি। শিল্পীর ব্যক্তিচরিত্রের ভালো-লাগার ব্যপারটা সব সময়ই ব্যতিক্রমধর্মী।
ফররুখ আহমদের ব্যক্তিগত জীবনাদর্শ এবং তাঁর কাব্যের দর্শন আগাগোড়া একই সমান্তরাল রেখায় প্রবাহিত হয়নি। পথ ও মতের পরিবর্তন ঘটেছে তাঁর জীবনেও, তবে ঘটেছে একবার। কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করে তিনি যখন সেন্টপল কলেজে বিএন ক্লাসে ভর্তি হন তখন তাঁর পরিচয় হয় বিপ্লবী কম্যুনিস্ট নেতা এম এন রায়ের সাথে।
ফররুখ আহমদ র্যা ডিক্যাল হিউমেনিস্টদের মতাদর্শে অনুরক্ত হন। তিনি কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য কম্যুনিস্টদের সঙ্গে কাজ করেন। এর পর লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব উত্থাপন হওয়ার পর তিনি সমাজবাদী শিবির থেকে বিপরীত বলয়ে চলে যান। তবে তিনি মানবতাবাদের মূলমন্ত্র থেকে আমৃত্যু একচুলও বিচ্যুত হননি। তাঁর কাব্যের ইসলাম এবং ধর্মান্ধদের ইসলামের মধ্যে ব্যবধান আকাশ-পাতাল।
ফররুখ আহমদের কাব্যমানস বিচার করতে হলে তাঁর সময় বা কাল এবং সমাজের দিকেও তাকাতে হবে। বড় কোন প্রতিভা কখনও আত্মকেন্দ্রিক হয় না। সকল বড় প্রতিভাই বিকশিত হয় সমষ্টির অনুভূতিকে আত্ম-অনুভূতিতে সঞ্চার করে। তখন মুসলিম সমাজ ছিল পশ্চাতপদ, দরিদ্র, নিরাশা-পীড়িত। তিনি সেই সময় অনগ্রসর গোষ্ঠীকে জাগ্রত এবং আহস জুগিয়েছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে।
ব্যক্তিগত জীবনে ফররুখ আহ্মদ ছিলেন উন্নত শির, অপরাজেয়, তেমনি শৈল্পিক জীবনেও ছিলেন মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী। লোভী মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে মৃতের শব তাঁকে পীড়িত ও ব্যথিত করেছে, তিনি কখনই মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশ হননি। তাই তো তিনি লিখতে পেরেছিলেন,
তারপর আসিলে সময়
বিশ্বময়
তোমার শৃংখলগত মাংসপিণ্ডে পদাঘাত হানি’
নিয়ে যাব জাহান্নাম দ্বার-প্রান্তে টানি’
আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যুদীর্ণ নিখিলেও অভিশাপ বও:
ধ্বংস হও
তুমি ধ্বংস হও।
ফররুখ আহমদ ‘ডাহুক’ কবিতায় তাঁর কবি প্রতিভার পরিচয় তুলে করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর কবিতার প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাক্প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্টে সমুজ্জ্বল। এই কবিতায় তিনি একজন দক্ষ শিল্পীর পরচয় দিয়েছেন।
রাত্রিভ’র ডাহুকের ডাক...
এখানে ঘুমের পাড়া, স্তব্ধদীঘি অতল সুপ্তির!
দীর্ঘ রাত্রি একা জেগে আছি।
ছলনার পাশা খেলা আজ পড়ে থাক,
ঘুমাক বিশ্রান্ত শাখে দিনের মৌমাছি,
কান পেতে শোনো আজ ডাহুকের ডাক।...
কবির অপর বিখ্যাত কবিতা ‘পাঞ্জেরী’। আরবি, ফারসি শব্দের সঠিক ব্যবহারে ৪২ লাইনের কবিতায় তিনি সুন্দর ছন্দে তাঁর কবি মনের গভীর কথাটি তুলে ধরেছেন মুন্সিয়ানার সঙ্গে-
রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘ?
সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।...
ফররুখ আহমদ শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া-কবিতা লিখেছেন। তার ‘পাখীর বাসা’, ‘ইলশে গুড়ি’, ‘ঝড়ের গান’, ‘চৈত্রের গান’, ‘শ্রাবণের বৃষ্টি’ বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
বিষ্টি নামে রিমঝিমিয়ে,
রিমঝিমিয়ে, ঝিমঝিমিয়ে,
টিনের চালে, গাছের ডালে,
বিষ্টি ঝড়ে হাওয়ার তালে,
হাওয়ার তালে গাছের ডালে;
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
বিষ্টি নামে মিষ্টি মধুর,
যুঁই চামেলী ফুলের বোঁটায়,
বিষ্টি নামে ফোঁটায় ফোঁটায়,
বাদলা দিনের একটানা সুর
বিষ্টি নামে ঝুমুর ঝুমুর ॥
ফররুখ আহমদ অজস্র কবিতা লিখেছেন। প্রায় বারো’শ টুকরো কবিতা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর সব কবিতা উদ্ধার করা যায়নি। একথা স্বীকার করতেই হবে যে তিনি ছিলেন মনেপ্রাণে একজন কবি এবং অবশ্যই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের।
ফররুখ আহমদের জন্ম মাগুড়া জেলার (সাবেক যশোর জেলা) মাঝআইল গ্রামে ১৯১৮-এর ১০ জুন। পিতা: সৈয়দ খান সাহেব হাতেম আলী, মাতা: বেগম রওশন আখতার। শৈশবে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে কৈশরে কলকাতার তালতলা মডেল স্কুল, বালিগঞ্জ হাই স্কুল ও পরে খুলনা স্কুল। খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করে তিনি ১৯৩৯ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন।
তিনি দর্শন এবং ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে বিএ-তে ভর্তি হন। কর্মজীবনে প্রবেশ করায় এবং কাব্য চর্চা করার জন্য তার আর অনার্স পরীক্ষা দেয়া হয়নি। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন বিভাগে চাকরি করেন। পরে ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ বিভাগের অব্যবহিত পরে রেডিও পাকিস্তানে যোগদান করেন। আমৃত্যু তিনি বাংলাদেশ বেতারে চাকরি করেন।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার এবং ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ‘হাতিম তা’য়ী’র জন্যে ‘আদমজী পুরস্কার’ পান। একই বছর ‘পাখীর বাসা’ লিখে ‘ইউনেস্কো পুরস্কার’ পান। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে মরণোত্তর ‘একুশে পদক’, ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৮৪ সালে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৪-এর ১৯ অক্টোবর ৫৬ বছর বয়সে ঢাকায় কবি মৃত্যুবরণ করেন।
বিবার্তা/জিয়া