পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দশক শেষ শুক্রবার থেকে শুরু হলো মাগফিরাতের অংশ। বিখ্যাত সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে শুরু করব আজকের লেখা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজান সবর, ধৈর্য ও তিতিক্ষার মাস। আর সবরের প্রতিফল হলো- আল্লাহর কাছ থেকে জান্নাতপ্রাপ্তি।’
রমজান পারস্পরিক হৃদ্যতা এবং সৌজন্য প্রদর্শনের মাস। এ মাসে মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দেবেন এবং তাকে আসল রোজার সওয়াব দেওয়া হবে, কিন্তু সে জন্য রোজাদারের সওয়াব কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের অধীন লোকদের শ্রম হালকা করে দেবে, আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে দোজখ থেকে মুক্তি দেবেন। এ সুসংবাদ কেবল রোজাদারদের জন্য সংরক্ষিত।
মহানবী (সা.) বলেছেন, কোনো সমাজে যদি ক্ষুধার্ত ব্যক্তি থাকেন, তাহলে সেই সমাজের লোকদের রোজা কবুল হবে না। তাই সচ্ছল ও ধনী রোজাদার ভাইবোনদের ভেবে দেখা উচিত,তারা অনাথ ও দরিদ্র মানুষের জন্য কী করতে পেরেছেন? কতটুকু দান করেছেন? নিজেকে দায়িত্বশীল ভেবে অনাথদের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, রমজানের সময় ঠিক উল্টো চিত্রটি কোনো কোনো মহলে পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাস এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম না কমিয়ে যথাসম্ভব বাড়িয়ে দেন। অথচ এ কাজ না করে তিনি যদি এই পবিত্র মাসে অন্য সময়ের চেয়ে কিছু কম লাভ করেন, তাহলে তার এ লাভে কি বেশি বরকত হবে না?
যিনি কারখানার মালিক বা অফিসের বড় কর্মকর্তা, তাকে ভেবে দেখতে হবে রমজান উপলক্ষে তিনি শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি বা রোজাদার শ্রমিকদের শ্রমের মাত্রা কমিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন কি-না?
বস্তুত রোজা এমন একটি ইবাদত, যার মধ্যে কোনো লৌকিকতা নেই। কাজী আয়াজ বলেছেন, প্রত্যেক ইবাদতের মধ্যে লৌকিকতার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু রোজার মধ্যে এর সম্ভাবনা নেই। যেমন কেউ রুকু, সিজদা, বৈঠক ইত্যাদি করল, সবাই বলবে নামাজ পড়ছে। হজে গিয়ে অনুষ্ঠানাদি পালন করলে বলবে হাজি। কিন্তু কেউ গোপনে খেয়ে-দেয়ে মানুষের সামনে যতই বলুক- আমি রোজা রেখেছি, প্রকৃতপক্ষে সে রোজাই রাখেনি। নামাজ, হজ, জাকাত ইত্যাদি ইবাদত আল্লাহ ফরজ করেছেন ঠিকই, তবে এসবের পরিপূর্ণ বর্ণনা কোরআনে নেই।
রোজার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বিধানসহ পবিত্র কোরআনে সবিস্তারে যেভাবে বর্ণনা দিয়েছেন, অন্যান্য ফরজ ইবাদতের তেমন বর্ণনা দেওয়া হয়নি। সুতরাং বোঝা যায়, আল্লাহতায়ালা শুধু রোজা ফরজই করেননি, বরং এর বিস্তারিত নিয়ম-কানুন, বিধানাবলি বর্ণনা করে দিয়েছেন। হয়তো এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্যই, আর এর প্রতিদান আমিই দেবো।’
বিবার্তা/জিয়া