আমরা সবাই গুগলের উপর কম বেশি নির্ভর করি। কারণ কম্পিউটারের ব্রাউজার যখন আমরা ওপেন করি তখন প্রথমেই আমরা সার্চ শুরু করি গুগল দিয়ে। কখনও কি ভেবেছেন যদি এই গুগল কোনদিন ৩০ মিনিট বন্ধ রাখা হয় তাহলে আমাদের বাস্তব জীবনে এর কী প্রভাব পড়বে?
২০১৩ সালের আগস্টে একবার ২-৩ মিনিটের জন্য গুগল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিস্ময়কর তথ্য হলো শুধু এই ২-৩ মিনিটের মধ্যেই সমগ্র ইন্টারনেট ট্রাফিক ৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এরকম একটা ঘটনা ২০০৯ সালের মে মাসেও ঘটেছিল। এবার ভাবুন এই ২০১৬ কিংবা এর পরবর্তী কোন সময়ে গুগল যদি অন্তত ৩০ মিনিট বন্ধ থাকে তাহলে কী হবে?
প্রথমে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না যে গুগল কাজ করছে না। ফলে প্রথম কয়েক মিনিট সবাই নিজেদের ইন্টারনেট কানেকশন চেক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কেউ কেউ তাদের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের কল দিবে সমস্যার কথা জানিয়ে। আবার কেউ কেউ তাদের কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ত্রুটি নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে দিবে। ভাবুনতো আপনিই কি সহজে বিশ্বাস করতে পারবেন এই ঘটনা?
যখন বিশ্বাস হবে তখন যা হবে: কিছু কিছু মানুষ তখন বুঝতে পারবে গুগল বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কিছু মানুষ তখন বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মাঝে অবস্থান করবে। তারা মরিয়া হয়ে গুগলের হোম পেইজ রিলোড দিতে থাকবে কখন এটা কাজ করবে। কারণ যখন কোন জিনিস থাকে না তখনই তার প্রয়োজনীয়তা বেশি অনুভব করে মানুষ। আর যখন তারা বুঝতে পারবে যেগুগল বন্ধ তখন তারা যে কাজগুলো করবে-
● সারা পৃথিবীর মানুষ গুগল সার্ভার এররের স্ক্রিনশট শেয়ার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
● ফেসবুক নিউজ ফিডে একটা ঝড় উঠে যাবে গুগলের বন্ধ হওয়া নিয়ে। বাংলাদেশের যতো ইস্যু আছে, যেমন জঙ্গিবাদ, ভারতীয় হাতি, ধর্ষণ, দুর্নীতি সবকিছুই গুগলের নিচে হারিয়ে যাবে।
● মানুষজন বিকল্প সার্চ ইঞ্জিন খুঁজা শুরু করবে। কিন্তু খুঁজবে কী দিয়ে? কারণ অধিকাংশ মানুষই তো জানে না গুগল ছাড়া আরও সার্চ ইঞ্জিন আছে। নিজে একবার ভাবুন তো আপনি কয়টা সার্চ ইঞ্জিন চিনেন?
● মাইক্রোসফট Bing এবং Yahoo সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে ট্রাফিক উপচে পড়বে। কারণ আসল ঘটনা জানতে এগুলোর উপরই তখন শেষ ভরসা।
● DuckDuckGo (একটা সার্চ ইঞ্জিন, যেটা কখনও ট্র্যাক করে না) এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলো নিজেদের প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কিছু মানুষ মনে করবে গুগল বন্ধ হয়ে ভালোই হয়েছে, আপাততো মানুষকে এখন আর ট্র্যাক করা হবে না।
● অনেকগুলো ইন্টারনেট অ্যাপ্লিকেশন যেগুলো গুগল সার্ভিস ব্যবহার করে চলে সেগুলো কাজ করা বন্ধ করে দিবে। আর শুধুমাত্র জিমেইল বন্ধ থাকার কারণেই পুরো বিশ্বের ট্রেড এন্ড কমার্সে ধস নামবে।
● শুধু গুগল নয়, বিশ্বের যে কোম্পানিগুলো গুগল নির্ভর তাদের অধিকাংশের ব্যাপক ব্যবসায়ী ক্ষতি হয়ে যাবে।
● যারা গুগল ম্যাপ ব্যবহার করেন করেন তারা পথের মাঝখানে রাস্তা হারিয়ে ফেলতে পারেন।
● ইউটিউবপ্রেমীরা মুখ গোমড়া করে বসে থাকবেন এবং গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা এ সময় আনন্দের গান গাইতে থাকবে। কেউ কেউ বিভিন্ন ট্রল বানাতে ব্যস্ত হয়ে যাবে।
● কিন্তু এতো কিছুর পরেও চীনে কোন সমস্যা হবে না। কারণ দেশটিতে গুগলের বিকল্প রয়েছে।
যখন গুগল আবার স্বরূপে ফিরে আসবে তখন যা হবে: গুগল যখন সব সমস্যা সমাধান করে ফিরে আসবে তখন প্রথমেই তারা এই সমস্যা বিশ্লেষণ করে একটা প্রেস ব্রিফিং দিবে। বিশ্বের প্রযুক্তিপ্রেমীরা এর বিভিন্ন ধরনের কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করবে। সত্য মিথ্যা না জেনেই তারা বিভিন্ন টিউমেন্ট করবে। সেই সাথে কিছু হ্যাকার যারা পরিচিতি পাওয়ার জন্য গল্প ছড়াতে থাকবে যে এই ঘটনার পেছনে তাদের হাত রয়েছে। বাংলাদেশি হ্যাকার গ্রুপও এই কৃতিত্বের দাবি করতে পারে। অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এছাড়াও যা হতে পারে: মিডিয়াগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করবে গুগলের এমন পতনে পুরো বিশ্বের কী নাজেহাল অবস্থা হয়েছিলো এই নিয়ে। কেন এটা হয়েছে, আবারও হবে কিনা, এই ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাক হয়েছে কিনা। ওভার সেন্সেটিভ দেশগুলো এবং ব্যক্তিদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে তথ্য ফাঁসের দুঃচিন্তায়।
অনেক মানুষই গুগলের বিকল্প নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করবে। সবগুলো গুগল সার্ভিসের বিকল্প ব্যবস্থা তারা করে রাখবে। কথায় আছে ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়।
অনেক বিখ্যাত টেকনোলজি ব্লগগুলো থেকে আর্টিকেল বের হবে, ‘Google went down for 30 minutes. You won’t believe what happened next.’ কিংবা ‘10 things to do when Google goes down the next time’.
তবে গুগল বন্ধ হোক আর না হোক, যেকোনো কিছুর উপর পুরোপুরি নির্ভর করাটা বোকামি।
বিবার্তা/জিয়া