যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কানাডার অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে। কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই-কমিশনার মিজানুর রহমান দিবসের প্রথম ভাগে বাংলাদেশ হাউসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মাধ্যমে শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় শোকদিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। কানাডার রাজধানী অটোয়ার ম্যাকন্যাব কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই-কমিশনার মিজানুর রহমান।
প্রথমেই ১৯৭৫-র কালরাতের শাহাদাৎ বরণকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং তাঁদের পরিবারের সকল শহীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অতঃপর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত তথ্যভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘সোনালী দিনগুলি"’ প্রদর্শন করা হয় যা হলভর্তি উপস্থিত সকলকে আবেগাপ্লুত করে।
এরপর বঙ্গবন্ধুর জীবন, রাজনৈতিক আদর্শ, কর্ম, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদান, স্বাধীন দেশ গঠন ও রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বিনির্মাণে তাঁর সুমহান প্রশাসনিক নেতৃত্ব ও সাফল্য এবং বাঙালীর মহান মুক্তিসংগ্রামে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
বক্তব্য রাখেন কানাডা আওয়ামী লীগের নেতা মতিন মিয়া, সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী, এম এ কাশেম, মুন্সী বশীর, সৈয়দ আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক ওমর সেলিম শের, সেলিনা সিদ্দীকি, হাসিনা আক্তার জানু, ইতরাত জুবেরী সেলিম, গোলাম মুহিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্স। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রাশেদা নেওয়াজ, দেওয়ান মাহমুদ, শহীদুল ইসলাম মিন্টু, মাকসুদ খান এবং নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি আরীব সাইফুদ্দিন।
হাই কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের ও শোকাবহ দিন ১৫ই আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই ভয়াল কালরাতে জাতির জনক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাষীনতাবিরোধী চক্র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থমকে দিতে চেয়েছিলো। খুনীদের দায়মুক্তি দিয়ে তারা বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির মুখে কলঙ্কের কালিমা লেপন করেছিলো।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ক্রান্তিকাল পেরিয়ে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকার '৭৫-এর ঘাতকদের বিচার নিশ্চিত করেছেন। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। তাই ১৫ আগস্টের শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সকলকে।
তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে আগামী ২০১২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত করায় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সুদূরপ্রসারী কূটনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে যে নীতিমালার আলোকে দেশের পররাষ্ট্র নীতিকে ঢেলে সাজিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ হাই কমিশন সচেষ্ট রয়েছে। বাংলাদেশের হাই-কমিশনার বর্তমান সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে নিষ্ঠার সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। হাই-কমিশনারের সহধর্মিনী মিসেস নিশাত রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন বাংলাদেশ হাই-কমিশনের প্রথম সচিব অপর্ণা রাণী পাল। অটোয়া, টরন্টো এবং মন্ট্রিয়েল থেকে আগত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধাগণ, সাংবাদিকবৃন্দ ও পেশাজীবীসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারবর্গ এবং ১৯৭৫ -এর ১৫ই আগস্ট কালরাতে শাহাদাৎ বরণকারী সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতিহা পাঠ ও দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন অটোয়ার সুপ্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ এবং আস-সালাম মসজিদের ইমাম শেখ ইউসেফ বেরাদা।
বিবার্তা/জিয়া