প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী শমী কায়সার অভিনয় দক্ষতায় দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার ক্ষমতা রাখেন। এ জন্য তিনি সব শ্রেণীর বিনোদনপ্রেমী মানুষের কাছে নন্দিত হয়ে আছেন। দর্শক ও নাট্যবোদ্ধারা একসময় তাকে ছোটপর্দার রানী উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। শমী কায়সারও সবার সীমাহীন ভালোবাসায় ঋদ্ধ হয়ে এ অঙ্গনে বিচরণ করেছেন। তবে ক্যারিয়ারের মধ্যপথে এসে তিনি কিছুটা বিরতি নিয়েছিলেন। কিন্তু দর্শক তাকে ক্ষণিকের জন্যও ভোলেনি। নন্দিত এই অভিনেত্রী অভিনয়ে এখন নিয়মিত না হলেও চেষ্টা করেন ঈদে অন্তত একটি নাটকে অভিনয় করতে। এবারের ঈদেও তাই দেখা গেছে। তার অভিনয়সহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় বিবার্তার সঙ্গে। বিশেষ এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অভি মঈনুদ্দীন।
বিবার্তা : গত ঈদে আপনার একটি নাটকই প্রচার হলো। ‘শেষের পরে’র জন্য কেমন সাড়া পেলেন?
শমী কায়সার : সত্যি বলতে কী আগের মতো এখন আর একটি নাটক প্রচারের পর অভূতপূর্ব সাড়া মিলে না। কারণ এখন অনেক চ্যানেল, দর্শকও অনেক। তবে আগের চেয়ে মানুষ এখন অনেক ব্যস্ত। তাই কখন কোন চ্যানেলে কোন নাটক প্রচার হয় বা হবে তা মনে রাখাও যেন একটি কঠিন কাজ। দর্শক আসলে এতো চাপ নিয়ে কিন্তু নাটক দেখতে চায় না। হ্যাঁ এটা ঠিক কিছু দর্শক আছেন যারা তাদের প্রিয় শিল্পীর কাজগুলো মনে রাখতে চান। হয়তো তেমন দর্শকের কাছ থেকেই এখনো সাড়াটা পাই সেটা মুঠোফোনেই হোক বা ফেসবুকেই হোক। ‘শেষের পরে’র জন্য বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। চয়নিকা চৌধুরী চেষ্টা করেছেন ভালোভাবে নাটকটি শেষ করতে। মাহফুজ আহমেদ সবসময়ই আমার সহশিল্পী হিসেবে ভীষণ পছন্দের এবং খুব কো-অপারেটিভ শিল্পী।
বিবার্তা : গত বছরের ঈদেও আপনি ‘অনুমতি প্রার্থনা’তে মাহফুজ আহমেদের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন একই পরিচালকের নির্দেশনায়। একজন মাহফুজ আহমেদ প্রসঙ্গে আপনার মূল্যায়ন কেমন ?
শমী কায়সার : খুব কাছাকাছি সময়েই আমাদের একসঙ্গে মিডিয়ায় পথচলা। আমি হয়তো মাহফুজের কয়েকটি বছর আগেই মিডিয়াতে এসেছি। সবাই জানেন যে, তিনি একজন সাংবাদিক ছিলেন। সেই পেশা থেকেই অনেকটা হঠাৎ করে অভিনয়ে আসা। তো আমি দেখেছি মাহফুজ আহমেদের মধ্যে অভিনয় শেখার কিংবা একজন অভিনেতা হবার অধ্যবসায় ছিলো। যে কারণে তিনি সত্যিকারের একজন অভিনেতা হতে পেরেছেন। আর তারসঙ্গে আমার কাজগুলো সবসময়ই দর্শকপ্রিয় হয়েছে যে কারণে তারসঙ্গে কাজটা হয়ে যায় কেন যেন বেশি। যে কারণে গত বছর ঈদে এবং এবারের ঈদে তারসঙ্গেই কাজ হয়েছে আমার।
বিবার্তা : অভিনয়ে আপনি নিয়মিত নেই কেন?
শমী কায়সার : আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ধানসিঁড়ি’ নিয়েই আসলে আমি অনেক ব্যস্ত। যে কারণে অভিনয়ে এখন সময় দেয়া আমার জন্য কঠিন ব্যাপার।
বিবার্তা : কিন্তু ভক্ত দর্শকতো আপনাকে, আপনার অভিনয়কে মিস করে খুউব?
শমী কায়সার : সেটা আমি অবগত। তাই দর্শকের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা রেখেই বলছি যে আমি আসলে নিজেকে এতো কাজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছি যে অভিনয়ে আলাদাভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখা কঠিন। মাঝে মধ্যে টুকটাক অভিনয় করবো সেটা একান্তই ভালোলাগা থেকে। কারণ আমি যা কিছুই করিনা কেন অভিনয় আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা। হৃদয়ের গভীরে আমি অভিনয় অনুভব করি। আর হয়তো এ কারণে দর্শক আমাকে একজন অভিনেত্রী হিসেবেই দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আমিও খুব মিসকরি অভিনয়ের জায়গাটুকু। কিন্তু কিছু করার নেই।
বিবার্তা : নিদের্শনাতেও আপনাকে পাওয়া যায় না। এটাতো আপনি চাইলেই করতে পারেন ?
শমী কায়সার : নির্দেশনা অনেক কঠিন ব্যাপার, খুব ভাবনার কাজ এটা। অনেক জানারও কাজ এটা। এটা আপাতত করা কিংবা করার পরিকল্পনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে লেখালেখিটা আমার দারুণ পছন্দ। তাই হয়তো অবসর পেলে নাটক লিখতে পারি। অনেক বিষয়ই আমার মনের ভেতর প্রায়ই কাজ করে। সেসব বিষয় নিয়ে নাটক লেখা যেতে পারে। হয়তো এমনও হতে পারে শিগগিরই নাটক লিখেও ফেলতে পারি। কিন্তু আপাতত নির্দেশনায় কোন সম্ভাবনা নেই।
বিবার্তা : আপনার অভিনয় জীবনের শুরুটা জানতে চাচ্ছিলাম?
শমী কায়সার : সেটাতো আসলে আশির দশকের শেষপ্রান্তের কথা। আতিকুল হক চৌধুরীর নির্দেশনায় ‘কে বা আপন কে বা পর’ নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে টিভি নাটকে আমার অভিষেক ঘটে। এর পরপরই তিন পর্বের ধারাবাহিক নাটক ‘যতো দূরে যাই’তে অভিনয় করি। এটি নির্মাণ করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন।
বিবার্তা : আপনার অভিনীত কয়েকটি আলোচিত নাটকের নাম বলুন?
শমী কায়সার : আলোচিত কী না জানি না তবে আমার নিজের ভালোলাগার মধ্যে বলা যেতে পারে ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘ছোট ছোট ঢেউ’, ‘স্পর্শ’, ‘একজন আরিয়ানা’, ‘আকাশে অনেক রাত’, ‘মুক্তি’, ‘অন্তরে নিরন্তর’, ‘স্বপ্ন’, ‘ঠিকানা’, ‘পরিচয়’, ‘সম্পর্ক’ ইত্যাদি। দুটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলাম আমি। এর মধ্যে একটি চাষী নজরুল ইসলামের ‘হাসন রাজা’ ও অন্যটি তানভীর মোকাম্মেলের ‘লালন’। দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও বেশ অভিভূত ছিলাম।
বিবার্তা : আপনার প্রথম নাটকের সহশিল্পী আবুল হায়াতের নির্দেশনায় আপনি সর্বশেষ একটি ধারাবাহিকে কাজ করেছেন। এটির জন্য কেমন সাড়া পেলেন?
শমী কায়সার : হায়াত আঙ্কেল অনেক গুণী একজন শিল্পী, খুউব ভালো মনের একজন মানুষ। আমার শত ব্যস্ততা জানার পরও তিনি আমাকে আমার পছন্দমতো একটি চরিত্রে ‘আকাশের ওপারে আকাশ’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করিয়েছেন। আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ তার প্রতি। সেইসাথে এটাও বলতে চাই আমি মনেরমতো সময় দিতে পারিনি। নিজেকে আরো সম্পৃক্ত করতে পারলে হয়তো আরো বেশি ভালোলাগতো। তবে এই ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্যও বেশ সাড়া মিলছে। শুটিংয়ের সময় সহশিল্পীদের ভালোবাসা এবং আমার প্রতি তাদের কেয়ারিং দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। সবার প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা।
বিবার্তা/অভি/মৌসুমী
ৃ