নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি জনপদ বাইশারী ইউনিয়নের ২৮০নং আলীক্ষ্যং মৌজার একটি ম্রো বসতি চরই পাড়া। বাইশারী ইউনিয়ন সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পাড়াটি। মাত্র ২৫টি পরিবার এবং ১৫০ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ম্রো সম্প্রদায়ের বসবাস।
এই চরই পাড়ারই একজন রেংরুই ম্রোর ছেলে মেনরোয়া ম্রো, বয়স ৭১। তবে এখনো অবিবাহিত। তার এক ভাই ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তিনি ১০ বছর বয়স থেকে চোখের সমস্যায় ভুগছেন। চোখের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আর সেই টাকা উত্তোলনের লক্ষ্যে তার ভাই রেংনং ম্রোকে সাথে নিয়ে দুর্গম চরইপাড়া থেকে দীর্ঘ ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে চাক সম্প্রদায়সহ বাইশারী বাজারে যাচ্ছেন তিনি। তার সাথে সাংবাদিকদের দেখা হয় বাইশারী বাজার থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গাঝিরি রাবার বাগানের পথে।
এ সময় জানতে চাই, তিনি কোথায় যাচ্ছেন এবং কেন যাচ্ছেন। মেনরোয়া ম্রো তার মনের কষ্টের দুই একটা কথা বলতে শুরু করলেন। তিনি জানান, তার দুই চোখেই সমস্যা। তিনি খুব কমই দেখতে পান। তার আপনজন বলতে এক ভাই ছাড়া আর কেউ দুনিয়াতে নেই। তার ভাইয়ের সহযোগিতায় মানুষের ধারে ধারে যাচ্ছেন ভিক্ষার উদ্দেশ্যে।
জানা যায়, চরইপাড়ায় ২৫ টি পবিরারে মোট ১৫০ জন লোক বসবাস করেন। তারা আধুনিক সমাজ থেকে অনেক দূরে। মানুষের বেঁচে থাকার বড় স্তম্ভ শিক্ষা ও চিকিৎসা থেকে তারা বঞ্চিত। ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবুল হাসেন আবু বলেন, ইতিমধ্যে তাকে প্রতিবন্ধীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম চরইপাড়ার ম্রো মনরোয়া প্রতিবন্ধী ভাতা পান কিনা তা অবগত নন বলে সাংবাদিকদের মুঠোফোনে জানান।
ম্রো জনগোষ্ঠীর ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুরং বাংলাদেশের একটি জাতিগোষ্ঠী। মুরুং শব্দটি বহুবচন যার একবচন হল ম্রো। ম্রো অর্থ মানুষ। ম্রো ভাষায় ম্রো’রা নিজেদের মারুচা বলে। মুরুংদের ভাষা মৌখিক।
বান্দরবানের ২য় বৃহত্তর উপজাতী জনগোষ্ঠী মুরুং (ম্রো) সম্প্রদায়। মুরুংরা অত্যন্ত স্বল্পবসন পরিধান করে। মেয়েরা ‘ওয়াংকাই’ নামে এক ধরনের ছোট পরিধেয় ব্যবহার করে। যা নাভীর নিচে থেকে হাঁটুর উপরিভাগ পর্যন্ত পড়ে থাকে। এটি ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত চাওড়া মাত্র। পুরুষরা ‘ডং’ (লেংটি-বিদ্রি) নামে এক ধরনের কিঞ্চিতকর বস্ত্র পরিধান করে।
বিবার্তা/আরমান/জিয়া