লামাকে জেলা ঘোষণার দাবি ৩ উপজেলাবাসীর

লামাকে জেলা ঘোষণার দাবি ৩ উপজেলাবাসীর
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৪০:৫৬
লামাকে জেলা ঘোষণার দাবি ৩ উপজেলাবাসীর
লামাকে জেলা ঘোষণার দাবিতে লাগানো পোস্টার
নুরুল করিম আরমান, লামা
প্রিন্ট অ-অ+
‘স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করে সাবেক মহকুমা লামাকে জেলা ঘোষণা কর; করতে হবে’, ‘লামা-আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাকে নিয়ে পূর্ব ঘোষিত জেলা লামাকে জেলা পুনর্বহাল কর; করতে হবে’, ‘লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নকে পূর্ব ঘোষিত থানা পুনর্বহাল কর; করতে হবে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নকে পূর্ব ঘোষিত থানা পুনর্বহাল কর; করতে হবে’- ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত পোস্টারে ছেয়ে গেছে বান্দরবানের লামা পৌরসভাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের আনাচ-কানাচ। 
 
লামা নাগরিক ফোরাম ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে চা দোকান থেকে সর্বত্র এমন পোস্টারিং হয়েছে। শুধু লামা উপজেলায় সীমাবদ্ধ নয়, এ দাবি আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার আনাচে কানাচে ছেয়ে গেছে। স্থানীয় ৫ লক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙ্গালিদের এখন একটাই দাবি; সাবেক লামা জেলাকে পুনরায় জেলা ঘোষণা করা হোক। 
 
এলাকাবাসী জানান, উপযুক্ত আয়তন, সমতল ভূমি এবং প্রয়োজনীয় অধিদপ্তরসহ লোকবল থাকা সত্বেও লামাকে জেলা ঘোষণা না করায় ক্ষুব্ধ এই অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙ্গালি অধিবাসীরা। দিন দিন এ আন্দোলন জোরালো হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তারা লামাকে জেলায় উন্নীত করে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
 
জানা গেছে, আশির দশকে হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে দেশের ৪৭টি মহকুমাকে পূর্ণাঙ্গ জেলা ঘোষণা করা হয়। সে সাথে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে গণমুখী করতে বেশ কয়েকটি এলাকাকে থানায় রপান্তরিত করা হয়। ১৯৮২-৮৩ সালে পূর্ণাঙ্গ জেলা ঘোষণা করা হয় দেশের এক দশমাংশ ভূ-আয়তন পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, খাগড়াছড়ি, রামগড়, বান্দরবান ও লামা মহকুমাকে। একই বিবেচনায় তৎকালীন সরকার বান্দরবানের লামা মহকুমাধীন আলীকদম, গজালিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নকে থানা ঘোষণা করে। জনসংখ্যার সল্পতা হেতু সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত এসব জেলা ও থানা তার কিছুদিন কার্যক্রম চলার পর স্থগিত হয়ে যায়। পাশাপাশি পার্বত্য এলাকায় শুধুমাত্র আলীকদমকে থানা হিসেবে বহাল রেখে, জনবহুল বাইশারী ও গজালিয়া থানার কর্মকাণ্ড স্থগিত করে তৎকালীন সরকার। একই কারণে নতুন করে জেলা ঘোষিত ৪৭টি মহকুমার মধ্যে ৪২ টি মহকুমাকে পূর্ণাঙ্গ জেলা বহাল রেখে বাকি ৫টির জেলার কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, খাগড়াছড়ির রামগড় ও বান্দরবানের লামা মহকুমা সরকার ঘোষিত জেলা কার্যক্রম স্থগিত হয়। 
 
জনসংখ্যার কারণে জেলা ও থানা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হলেও বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার। সাবেক মহকুমা লামা উপজেলায় বর্তমানে তিন লক্ষাধিক লোকের বসতি। উপজেলায় একটি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়নের সাথে সদর ও উপজেলাগুলোর রয়েছে কার্পেটিং, এসবিবি ও কাঁচা সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা। ৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি ফাজিল মাদ্রাসা, একটি ডিগ্রি কলেজ, সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা তথ্য অফিস, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, সাব জেল খানা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, সড়ক ও জনপথ, উপ-পরিচালক বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী গণপূর্ত, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিস ও জনবলসহ কার্যক্রম চালু রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে ৫টি শিল্পকারখানা। 
 
এদিকে, লামা উপজেলাকে জেলা ঘোষণার পর লামা পৌর এলাকার টিটিএন্ডডিসিতে ১৯৭৯ সালে ‘লামা জেলা রেস্ট হাউস’ নামে একটি রেস্ট হাউজও নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি এখন শুধুই জেলার স্মৃতি বহন করছে। 
 
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিনিধি এম. রুহুল আমিন বলেন, উপযুক্ত আয়তন, যথেষ্ট সমতল ভূমি এবং লোকবল থাকা সত্বেও লামাকে জেলা ঘোষণা না করায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষ। এর কারণ হচ্ছে, লামা উপজেলা থেকে বান্দরবান জেলা সদরের দূরত্ব ৯৮ কিলোমিটার, আলীকদম উপজেলা থেকে ১২১ কিলোমিটার ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। এ তিন উপজেলা থেকে দুর্গম পাহাড়ি পথ বেয়ে মামলার আসামি আনা-নেয়ার কাজে পুলিশকে চরম ভোগান্তিসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতে হয়। এছাড়া ব্যক্তিগত কাজে এ ভোগান্তি ও আর্থিকভাবে ক্ষতি তো হচ্ছেই। আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা লামার অতি সন্নিকটে হওয়ায় সাবেক মহকুমা লামাকে জেলা ঘোষণা করা হলে এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে এই অঞ্চলের মানুষ।
 
লামা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ জানান, অতীতে লামাকে জেলা ঘোষণার পরেও কি কারণে স্থগিত করা হয়, তা জানা নেই। তবে সাবেক লামা জেলাকে পুনরায় জেলা ঘোষণা করা হোক; এটিই এখন লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবি। আয়তন ও লোকবলের বর্তমান দিক বিবেচনা করে লামা উপজেলাকে পুনরায় জেলা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 
 
লামাকে পুনরায় জেলা ঘোষণার জোর দাবি জানিয়ে নাগরিক ফোরাম ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ১৯৮২ সালে সরকার লামা মহকুমাকে জেলা করার জন্য স্থানীয়দের থেকে অনেক জমি অধিগ্রহণও করেছিল। জেলা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে ওই সব জমির বেশিরভাগ বেহাত হতে চলেছে। এছাড়া লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এ সম্পদকে কাজে লাগাতে লামাকে জেলা ঘোষণা করা ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, লামাকে জেলা ঘোষণা না করা পর্যন্ত  আন্দোলন চলবে। 
 
বিবার্তা/আরমান/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com