আর কত ফাঁকাবুলি দেখবো আমরা

আর কত ফাঁকাবুলি দেখবো আমরা
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০১৫, ১৭:১৯:৫৯
আর কত ফাঁকাবুলি দেখবো আমরা
প্রিন্ট অ-অ+

রয়টার্সের খবর, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওরিগনে রোজবার্গ শহরের আম্পকুয়া কমিউনিটি কলেজে গুলি চালিয়ে অন্তত ১০জনকে হত্যা করেছে এক বন্দুকধারী। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগেও এমন ঘটনা বহু ঘটেছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আল-কায়েদার সন্ত্রাসীরা হামলায় প্রাণ হারাণ প্রায় তিন হাজার মানুষ।


 


গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের চার্লসটনে কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জায় ঢুকে গুলি করে নয়জনকে হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে এক টুইটার বার্তায় আমেরিকায় বন্দুক হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মার্কিন মুলুকের খোদ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলতে বাধ্য হন ইসরাইল, ফ্রান্স ও জাপানের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা বেশি হয়। 


 


ওই সময় টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়,যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী হামলা বেড়ে যাওয়ায় সংক্ষুব্ধ হয়েছেন বারাক ওবামা।


 


টুইটার অ্যাকাউন্ট (পটাস) এ প্রকাশিত ওবামার পোস্টে বলা হয়, মাথাপিছু জনসংখ্যার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ২৯৭ জনকে হত্যা করা হয়। যা জাপান, ফ্রান্স ও ইসরাইলের চেয়ে বেশি। জাপানে এ সংখ্যা ৪৯ ও ফ্রান্সে ৩৩। 


 


বছরের শুরুতে গার্ডিয়ান প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বন্দুকধারী মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের। তাদের শতকরা ৮৮ জনের কাছে বন্দুক রয়েছে। 


 


আজ  শুক্রবার দুপুরের খবর, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পুলিশ সদর দফতরের সামনেই বন্দুকধারীদের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার পর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ওই বন্দুকধারীও। এবার অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ কী বলবেন। তাদের খেলোয়াড়দের কী অস্ট্রেলিয়া থেকে নিরাপত্তার জন্য অন্য দেশে পাঠিয়ে দেবেন? 


 


এভাবে বিশ্বের বহু সভ্য দেশে সন্ত্রাসী হামলায় অহরহ মানুষ মারা যাচ্ছে। আল কায়েদা, আইএসস, বোকো হারাম,আল-শাবাব, রিয়েল আইআরএসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের ব্যানারে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। সে হিসেবে বাংলাদেশকে অনেকটা শান্তিকামী দেশই বলা যায়। এখানে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক হানাহানি হলেও বড় ধরণের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা খুবই কম। তাছাড়া গত মার্চের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হামলায় এখানে মানুষ হত্যার ঘটনা কখনো ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। 


 


আমরা কোনো ধরণের হত্যার সমর্থন করি না। তারপরও বলতে হয় ১৬কোটি মানুষের দেশে দুচারটি হত্যা র ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হত্যাকাণ্ডের তুলনায় খুবই কম। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর বন্দুকধারীদের গুলিতে শত শত  মানুষ মারা যায়। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ সেদেশে সফর বাতিল করেছেন কিংবা  কোনো দল সেখানে খেলতে যায়নি এমন খবর কখনো পাওয়া যায়নি। 


 


অথচ আমাদের দেশে সন্ত্রাসী হামলার অজুহাত তুলে অষ্ট্রেলিয়া তাদের সফর বাতিল করেছে। তাদের সফর বাতিলের ঘোষণার আগে একটি নিরাপত্তা দল ঢাকায় এসেছিল। তারা ঢাকায় অবস্থান কালেই ইতালীয় এক নাগরিক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। ঘটনাটি ব্যক্তিগত পর্যায়ের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও এটিকে বড় করে দেখেছেন অষ্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা দলটি। ফলে দেশে গিয়ে তারা ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশে তাদের দল পাঠানো নিরাপদ নয়। 


 


যেসব দেশে সন্ত্রাসী হামলায় ডজন ডজন মানুষ নিহত হচ্ছেন। সেসব দেশে সফরের ক্ষেত্রে কোনো রকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না সারা বিশ্বের মানুষ। সেখানে বাংলাদেশে নিরাপত্তার অজুহাতে ক্রিকেট সফর বাতিল করছে একটি দেশ। এতে অবাক না হয়ে পারছি না।  


 


আমরা মনে করি বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার কারণেই তারা এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। গরীব দেশের পরিচয়টাই মূখ্য কারণ। সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কাটা এখানে গৌণই মনে হয়। 


 


সৌদি বাদশার ছেলের গাড়ি বহরের কারণে শত শত হাজি মারা গেলেও যারা টু-শব্দটি করে না। তারাই একজন বিদেশি নিহত হলে নিরাপত্তার অজুহাত তুলে ধরে। এটা আমাদের  দুর্বলতা। 


 


অর্থনীতিই বিশ্ব পরিচালনার চাবি-কাঠি। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া এ ধরণের অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। 


 


কথায় কথায় মোড়লিপনার সুযোগ আর দেয়া যাবে না। অর্থনৈতিকভাবে দেশকে উন্নতি করতে হবে। আমাদের ১৬ কোটি মানুষকে কাজে লাগিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। তাহলেই ওইসব দেশ আর দাদাগিড়ি করতে আসবে না। যেমনি পারেনি মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর ভিয়েতনামের সঙ্গে। পারছে না চীনের সঙ্গে। 


 


আমরা আশা করবো। সরকার বিষয়টি আরো গভীরভাবে ভেবে দেখবে। আসলেই কি আমাদের দেশে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে, নাকি সবই ফাঁকা বুলি? 


 


বিবার্তা/এমএম/এমএইচ   


 

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com