এই নীরব ‘গণহত্যা’ বন্ধ হোক

এই নীরব ‘গণহত্যা’ বন্ধ হোক
প্রকাশ : ৩০ মে ২০১৬, ১৪:৪৩:১৩
এই নীরব ‘গণহত্যা’ বন্ধ হোক
প্রিন্ট অ-অ+
বাংলাদেশে সবজি, শাক ও মাছ পচে না, তাজা ফল বাসি হয় না, মাছ ও মাংসে মাছি পর্যন্ত বসে না - এ সবই পুরনো গল্প। ফরমালিন নামের এক জাদুর চেরাগ বাংলাদেশকে যেন ‘বদলে’ দিয়েছে। অবশ্য ফরমালিন একা নয়, তার দোসর হিসেবে আছে আরও অনেক রাসায়নিক, পত্রপত্রিকায় যেগুলোর নাম প্রায়ই শোনা যায়। এসব বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করে কাঁচা ফল পাকানো হয়, সবুজ ফলকে পাকা রং করা হয়, মাছ-মাংসকে ‘তাজা’ রাখা হয়। 
 
গণমাধ্যমে অবিরাম লেখালেখির ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই লাগামহীন অপকর্মে কিছুটা ভাটার টান পড়লেও একেবারে বন্ধ হয়নি। প্রবল উদ্ভাবনীক্ষমতা ব্যবহার করে আমাদের ব্যবসায়ীসমাজ (সবাই নয়, কেউ কেউ) সেই দূষণের নানা পদ্ধতি আবিষ্কার ও প্রয়োগ করে চলেছে। 
 
গত ২৯ মে সহযোগী একটি পত্রিকায় এরকম একটি খবর সচেতন মানুষমাত্রকেই চমকে দিয়েছে। খবরে বলা হয়, বাজার থেকে চার কেজি ওজনের একটি রুই কিনেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। সেই রুই খেতে পারেননি তিনি, উৎকট গন্ধ তাতে। ফলে ফেলেই দিতে হয়েছে সবটা। 
 
এতোদিন ফার্মের মুরগিকে বিষাক্ত ট্যানারিবর্জ্য খাওয়ানোর কথা জানা ছিল মানুষের, এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাছ! ক্রেতারা এতোদিন জ্যান্ত মাছকে নিরাপদ ভাবতেন। নিরাপদ হতেও পারতো। কিন্তু খামারি নামধারী দুর্বৃত্তদের (হয়তো সবাই নয়) শয়তানি স্বভাব যে তাতে তৃপ্ত হয় না! মাছকে রাতারাতি বড় বানিয়ে বিক্রি করে পকেট ভারী করার উদগ্র লালসায় তারা ওগুলোকে কী খাইয়েছে সেটা তারাই জানে। তাতে তাদের পকেট ভরছে, কিন্তু প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
 
একই অবস্থা জ্যান্ত মুরগির বেলায়ও। অখাদ্য-কুখাদ্য খাইয়ে একশ্রেণীর খামারি যেসব মুরগি বাজারে পাঠাচ্ছে, সেগুলোর মাংস কেমন যেন একটা গন্ধ। অনেকেই এই মাংস মুখে তুলতে পারেন না। 
 
এ তো গেল উৎকট গন্ধের বিষয়। কিন্তু বিষয়টি শুধু গন্ধেই শেষ নয়, বরং শুরু। দূষিত খাবার খাওয়ানোর ফলে মাছ ও মুরগির মাংসে শুধু দুর্গন্ধই তৈরি হয় না, এই দূষিত মাছ ও মুরগির মাংস খেয়ে মানবদেহে বিপজ্জনক নানা রোগব্যাধিও সৃষ্টি হয়। নষ্ট হয় মানুষের কিডনি ও লিভার। অনেক সময় মুরগি ও মাছের খাদ্যে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক মানবদেহে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়। কী ভয়ঙ্কর!
 
ভয়ঙ্কর যে, তার প্রমাণ মিলে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যে। সংস্থাটি জানায়, খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪৫ লাখ মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব রোগাক্রান্ত মানুষের সবাই কি চিকিৎসা পায়, সবাই কি সুস্থ হয় কিংবা বাঁচতে পারে? নিশ্চয়ই নয়। অর্থাৎ শুধু একশ্রেণীর দুর্বৃত্তস্বভাব ব্যবসায়ীর লাগামহীন লোভের কারণে অসংখ্য প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। একে আমরা কী বলতে পারি, নীরব গণহত্যা?
 
সন্দেহ নেই, এটা নীরব গণহত্যাই। অথচ দেশে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এর আওতায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করেবা, এই কর্তৃপক্ষ আর বিলম্ব না করে সক্রিয় হবে। 
 
আমাদের দাবি, এই নীরব গণহত্যা বন্ধ হোক এবং এর হোতাদের বিচারের আওতায় এনে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক, যাতে আর কেউই এরকম অপকর্ম করার স্পর্ধা দেখাতে না পারে।  
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com