ছায়ানট ও বঙ্গবন্ধু পরিবার

যতোটা জেনেছি, যতোটুকু দেখেছি-১
ছায়ানট ও বঙ্গবন্ধু পরিবার
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০১৬, ১৪:০২:৪৯
ছায়ানট ও বঙ্গবন্ধু পরিবার
মাহবুবুল হক শাকিল
প্রিন্ট অ-অ+
বাঙালি জাতিকে বিজাতীয়করণের যে ধারা আয়ুব-মোনেমের শাসনামলে তোড়ে-জোরে শুরু হয়েছিল তার বিরুদ্ধে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিরোধের দূর্গ হিসেবে ষাটের দশকে গড়ে উঠে ছায়ানট। কবি সুফিয়া কামালের হাতেই ছায়ানটের প্রতিষ্ঠা। তার সাথে ছিলেন ওয়াহিদুল হক আর সানজিদা খাতুনের মতো কয়েকজন রবীন্দ্রমনস্ক মানুষ।
 
কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট প্রতিবেশী। শুধু প্রতিবেশী বললে কম বলা হয়, এই দুই পরিবার ছিল আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ। শেখ মুজিব (তখনও তিনি বঙ্গবন্ধু হননি) সুফিয়া কামালকে ডাকতেন আপা বলে, কামাল সাহেব ছিলেন বেগম মুজিবের প্রিয় দুলাভাই। দুই পরিবারের সন্তানদের মধ্যেও ছিল বন্ধুত্ব আর মায়ার বন্ধন।
 
ছায়ানট প্রতিষ্ঠায় সুফিয়া কামাল পেয়েছিলেন শেখ মুজিবের আন্তরিক সহযোগিতা। কারণ, বঙ্গবন্ধু জানতেন, সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ ছাড়া রাজনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম সফল হতে পারে না।
 
ছায়ানট প্রতিষ্ঠার পরপরই সুফিয়া কামাল ধানমন্ডির ওই পাড়ার সব ছেলে-মেয়েকে ছায়ানটে ভর্তি হতে অনুপ্রাণিত করলেন। ধানমণ্ডি পুরনো ৩২ নম্বর, ৩১ নম্বর আর ৩৩ নম্বরের কিশোর-কিশোরী, বালক-বালিকা প্রায় সবাই যেতে শুরু করলো ছায়ানটে।
 
ছায়ানট শুরুতে ছিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে। তার পর উদয়ন, সেখান থেকে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলে।
 
বদরুন্নেসা আহমেদের মেয়ে নাসরিন আহমেদ শীলা, ছেলে গর্জন আর রক্তন, সুফিয়া কামালের মেয়ে লুলু, টুলু, ছেলে শাহেদ, পাড়ার প্রায় সব ছেলে-মেয়ে।
 
বঙ্গবন্ধুর চার ছেলে-মেয়ে শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ রেহানা আর শেখ জামালও একে একে ভর্তি হলেন ছায়ানটে।
 
শেখ হাসিনা শিখতেন ভায়োলিন। ছায়ানটে তার শিক্ষক ছিলেন ওস্তাদ মতিউর রহমান। ওস্তাদের কথামোত নিজে গিয়ে তাঁতীবাজার থেকে কিনে এনেছিলেন নির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশনের ভায়োলিন।
 
শেখ কামাল শিখতেন সেতার। শেখ রেহানা ভর্তি হলেন নাচ আর গানের ক্লাশে। শেখ জামাল শিখতেন গীটার।
 
তাদের বাড়ীতে সবসময় ছিল বই পড়ার পরিবেশ, আর ছায়ানটে সংস্কৃতির দীর্ঘ ছায়া। এই দুইয়ের মেলবন্ধনেই গড়ে ওঠে শেখ পরিবারের সন্তানদের মনোজগত।
 
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৩২ নম্বর আক্রমন করার পর শেখ হাসিনার ভায়োলিনটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ একুশ বছর পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছায়ানটের জন্য বরাদ্দ করেন ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডের জায়গা। ভবন নির্মানে সহযোগিতার হাত বাড়িযে দেন।
 
ছায়ানটের এই ভবন নির্মাণ যখন শেষ হয় তখন বিএনপি-জামাত ক্ষমতায়। শেখ হাসিনা বিরোধীদলের নেতা। তার জন্য অপেক্ষা করছিল এক অম্ল অভিজ্ঞতা যা নাইবা হলো বলা।
 
সেখানেই আজ ছায়ানট। সাথে বাচ্চাদের ভিন্নধর্মী বিদ্যালয় - নালন্দা।
 
ছায়ানটে ভায়োলিন শিখতে গিয়েছিল যে মেয়েটি, তিনি এখন তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মাঝে-মধ্যে শোনেন প্রিয় শিল্পী দেবব্রত বা অশোকতরুর গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত।
 
মাহবুবুল হক শাকিলের ফেসবুক থেকে
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com