হসপিটালিটিতে প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়তে চাই : শাহিদ হামিদ

হসপিটালিটিতে প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়তে চাই : শাহিদ হামিদ
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০১৫, ১৫:৩১:২৯
হসপিটালিটিতে প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়তে চাই : শাহিদ হামিদ
নূর মোহাম্মদ ও রাজিবুল হাসান
প্রিন্ট অ-অ+
দীর্ঘ ৩৭ বছর সফলতার সঙ্গে হোটেল এবং রিসোর্ট সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন দেশের প্রধান পাঁচ তারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিকসহ অন্যান্য হোটেল ও রিসোর্টে। দীর্ঘ এ কর্মজীবনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ৮টি প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল ও রিসোর্ট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স করার পর হোটেল ম্যানেজমেন্টে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছেন  যুক্তরাষ্ট্রের নিউিইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। 
হসপিটালিটিতে প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়তে চাই : শাহিদ হামিদ
১৯৮১ সালে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সেলস ম্যানেজারের দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে ওই হোটেলের ডিরেক্টর সেলস এন্ড মার্কেটিং এবং ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্র্যাক সেন্টার ইন এর শুরু থেকে ৫ বছর পরিচালনা পরিষদ এবং হোটেল সারিনার নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। বর্তমানে পিএটিএ’র বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান এবং একজন বোর্ড মেম্বার।  তিনি প্যান প্যাসিফিক অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতেও কাজ করেছেন।   
 
সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হন বিবার্তা২৪.নেটের। শোনান বাল্যকাল থেকে এ পর্যন্ত উঠে আসার পেছনের গল্প। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তা২৪.নেটের স্টাফ রিপোর্টার নূর মোহাম্মদ। 
 
হসপিটালিটিতে প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়তে চাই : শাহিদ হামিদ
বিবার্তা: আপনার শৈশব-কৈশোর সম্পর্কে বলুন।
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ:  আমার শৈশব কেটেছে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে। অন্য আর ১০টা ছেলের মতোই। একসঙ্গে দুষ্টুমি করেছি। গাছে উঠেছি। ছুটাছুটি করেছি। এক সুপারি গাছ থেকে আরেক সুপারি গাছে গিয়েছি। গ্রামের ছেলেদের যা হয়; তবে, ডেসট্রাকটিভ কোনো কাজ করিনি। 
 
বিবার্তা: লেখাপড়া ও শিক্ষাজীবনের বিশেষ কোনো ঘটনা বলুন।
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ: এসএসসি বাকিলা হাইস্কুল থেকে। এরপর চলে আসি ঢাকায়। ভর্তি হই ঢাকা কলেজে। ঢাকায় ভর্তি হলে বোধ হয় ইংরেজিতে পরীক্ষা দিতে হবে। এ ভেবে আমি লজিক, পলিটিক্যাল সাইন্স, ইকোনোমিকস এসব বই ইংরেজি ভার্সনেরটা কিনেছি। কিন্তু ১৯৬৯ সালে নটরডেম কলেজে যখন ইন্টারমিডিয়েটের ফাস্টপার্টের পরীক্ষা দিতে গেলাম, তখন দেখি আমার পাশের একজন বাংলায় পরীক্ষা দিচ্ছে। তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। 
 
স্যারকে বললাম, স্যার সে তো বাংলায় লিখছে। তখন স্যার বললেন, তোমার প্রবলেমটা কী? আমি বললাম, বাংলায়তো লেখা যায় না। স্যার বললেন, কে বলেছে লেখা যায় না, বাংলাতেও লেখা যায়। তবে, ওই সময়ের ইংরেজি শেখাটা আমার জন্য ভালো হয়েছে। না হলে হয়তো, এখনও ইংরেজি ভুল লিখতাম। তখনকার ইংরেজি শেখাটা আমার এখন কাজে দিচ্ছে।
 
আরেকটা ইন্টারেস্টিংক বিষয় হলো- ইন্টারমিডিয়েটের রেজাল্টের সময় দেখি আমার রেজাল্টের পাশে এলএল লেখা। এটা দেখেই মনে হলো- আমি বোধহয় ফেল করেছি! কিন্তু স্যারকে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেন, তুই লজিকে লেটার পেয়েছিস। এজন্যই এলএল (LL) লেখা।
 
 
এরপর অনার্সে ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। পরে মাস্টার্স সম্পন্ন করি লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে। সেখানেও রেজাল্ট ভাল করি। আমরাই ছিলাম লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথম ব্যাচ।
 
বিবার্তা: কর্মজীবন শুরুটা কেমন ছিল?
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ: আমার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭৮ সালে প্যান প্যাসিফিক এর অধীন হোটেলস ইন্টারন্যাশনালে। ১৯৮১ সালে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সেলস ম্যানেজারের দায়িত্ব নেই। পরবর্তীতে ওই হোটেলের ডিরেক্টর সেলস এন্ড মার্কেটিং এবং ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ব্র্যাক সেন্টার ইন এর শুরু থেকে ৫ বছর পরিচালনা পরিষদ এবং হোটেল সারিনার নির্বাহী পরিচালক ছিলাম। বর্তমানে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল ও রিসোর্ট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক। পিএটিএ’র (প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল এসোসিয়েশন) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান এবং একজন বোর্ড মেম্বার।   
 
বিবার্তা: অবসরে কী করেন?
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ: গান শুনি, ক্রিকেট-ফুটবল খেলা দেখি। আর সময় পেলেই দেশের বাইরে-ভেতরে ঘুরে বেড়াই।
 
বিবার্তা: প্রিয় খেলোয়ারের মধ্যে কে কে আছেন?
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ: এ আমলের কথা তেমন বলতে পারবো না, তবে আমাদের আমলে সালাহউদ্দিন, মেরাডোনা, রোনালদো, মেসি রয়েছে। আর ক্রিকেটের মধ্যে বর্তমানে সাকিব আল হাসান, রুবেল, তাসকিনসহ বেশ কয়েকজনই রয়েছে। এছাড়া আরও অনেকেই ভালো করছে। 
 
বিবার্তা: শিল্পীদের মধ্যে কার গান পছন্দ?
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ: বর্তমানের গানের তো শব্দ চয়ন, অনুভূতি তেমন একটা নেই বললেই চলে। আমাদের সময়ের যেমন মান্না দে, হেমন্ত ছিলেন তাদের গানের মধ্যে আলাদা অনুভূতি কাজ করতো। 
 
বিবার্তা: পারিবারিক জীবন সম্পর্কে যদি বলেন।
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ:  আমার এক ছেলে এক মেয়ে। আমি দাদা হয়ে গেছি; দুই নাতনি আছে। ছেলে টরেন্টোতে থাকে। সে ওখানে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করছে। আর মেয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে রায়াটসন ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে, টরেন্টোতে।
 
বিবার্তা: বাংলাদেশে হোটেল ও হসপিটালিটির সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ: বাংলাদেশে হোটেল ম্যানেজম্যান্ট ও হসপিটালিটির বিষয়টা এগুচ্ছে, এগুবে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আশা করা যায়, সব ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড বাংলাদেশে হোটেল খুলবে। এ সেক্টর ক্রমশই বৃদ্ধি পাবে। আর নতুন করে চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হবে এসব রিসোর্ট। বর্তমানে যা আছে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তা চারগুণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
 
বিবার্তা: এক্ষেত্রে কী কী সঙ্কট আছে বলে মনে করেন? 
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ: বিভিন্ন দিকই রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের পারদর্শি জনবল নেই। দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো চাহিদার আলোকে স্কিলড ম্যানপাওয়ার ক্রিয়েট করতে পারছে না। একেবারেই হচ্ছে না তা নয়। তবে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এটা একটা বড় সমস্যা।
 
এটার প্রতি সরকারের স্পেসিফিক গাইডলাইন নেই। সিরিয়াসনেসও নেই। গাইডলাইন যা আছে তা যথেষ্ট নয়। এই বিষয়টা সমাধান হওয়া দরকার।
 
আরেকটা সমস্যা হলো- আমরা আমদানি করা ছাড়া কোনো কিছুই এসব হোটেল ও রিসোর্টে আনতে পারি না। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র সিরামিকটাই মানসম্পন্ন। আমরা এটা এক্সপোর্টও করি। এছাড়া সবই আমাদের আনতে হচ্ছে চায়না, জাপানসহ অন্যান্য দেশ থেকে। এগুলো আমদানি করতে গিয়েও আমাদের নানা সমস্যা ফেস করতে হয়। এসব সমস্যা অন্যান্য দেশের আছে তবে আমাদের দেশে হসপিটালিটির ক্ষেত্রে এসব সমস্যা বেশি।
 
বিবার্তা: এ সেক্টরে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কোন বিষয়টি সহজ করা জরুরি বলে মনে করেন? 
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ: এখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে গিয়ে লাইসেন্স আবেদন করতে হয়। একেকটা বিষয়ের জন্য একেক জায়গায় যেতে হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যাদি এসব অনুমোদনের বিষয়গুলো এক জায়গা থেকে দেয়া হতো তাহলে অনেক ঝামেলা কমে যেতো। যদি ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করা যায় তাহলে এ ঝামেলাগুলো কমবে। তবে অদূর ভবিষ্যতে হয়েও যেতে পারে। 
 
বিবার্তা:  এ সেক্টরে মেজর সমস্যাগুলো কী? 
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ:  এখন পর্যন্ত রেগুলেটরি বডি নেই। কারণ, একেক জায়গায় একেক রকম ভ্যাট। সার্ভিস চার্জেও রয়েছে কম বেশি। এতে বিদেশিরা এসে যখন দেখে এক হোটেলে ১২.৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ আবার আরেকটায় ৭.৫ শতাংশ তখন তাদের মনে একটা প্রশ্ন জাগে, এখানে কী কোনো ইউনি কমিটি নেই? এজন্য এ সেক্টরে একটি রেগুলেটরি বডি দরকার। এছাড়া, অসমতা রয়েছে। যেমন- ফাইভ স্টার হোটেল রুম সাইজ কতো হবে,  খাবারের মানসহ অন্যান্য সুবিধা কেমন থাকবে এটা রেগুলেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত একেক হোটেলে একেক রকম রয়েছে।  যেগুলোর ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড মান নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এটা করতে পারলে দেশের ইমেজও ভালো হবে।
 
বিবার্তা: আপনার জীবনের শেষ ইচ্ছা কী?
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ: হসপিটালিটি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়তে কাজ করে যেতে চাই। এজন্য ইতোমধ্যে রিজেন্সি হসপিটালিটি ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি।
 
বিবার্তা: আমাদেরকে আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
 
শাহিদ হামিদ এফ আই এইচ: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
 
বিবার্তা/নূর/এমহোসেন
 
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com