এরশাদ শৃঙ্খলিত : গোলাম মাওলা

এরশাদ শৃঙ্খলিত : গোলাম মাওলা
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫, ২১:৪৪:৩০
এরশাদ শৃঙ্খলিত : গোলাম মাওলা
রাজকুমার নন্দী
প্রিন্ট অ-অ+
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখনো শৃঙ্খলিত বলে দাবি করেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এ.টি.এম গোলাম মাওলা চৌধুরী।
 
তিনি বলেন, নব্বইয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে দেশের বৃহত্তম দু’টি রাজনৈতিক দল সুকৌশলে ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে পল্লীবন্ধু এরশাদকে শৃঙ্খলিত করেছে। তিনি এখনো শৃঙ্খলিত। সেজন্য তিনি মুক্তভাবে রাজনীতি করতে পারছেন না। মুক্ত রাজনীতি করতে পারলে তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেন।
 
সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিলে নিজ কার্যালয়ে বিবার্তা২৪.নেট এর ডেপুটি চিফ রিপোর্টার রাজকুমার নন্দীকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন গোলাম মাওলা। এ সময় তিনি জাতীয় পার্টির অবস্থান, এরশাদের ভূমিকা, জাতীয় নির্বাচনসহ সম-সাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
 
বিবার্তা২৪.নেট : জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে রয়েছে, আবার সরকারি দলেও রয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
 
গোলাম মাওলা : জাতীয় পার্টি সাংবিধানিকভাবে সংসদে বিরোধী দল। একইসঙ্গে সরকারি দলেও রয়েছে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। এতে করে দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছেন। অনেক সময় সরকারি দলের নেতারাও উপহাস করে বলেন, তোমরা কি সরকারি দল না বিরোধী দল? একজন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী যাকেই এ প্রশ্নটি করা হয় তিনিই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।
 
আশার কথা, পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তাঁর সহধর্মিণী বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, আমরা সত্যিকারের বিরোধী দলে পরিণত হতে চাই। এ লক্ষ্যে সরকার থেকে বের হয়ে আসার একটি প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আশা করব, আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী এই বিব্রত ও লজ্জাকর অবস্থা এবং উপহাসের হাত থেকে নেতা-কর্মীদের পরিত্রাণ দেবেন। একইসঙ্গে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে জনগণের দাবি নিয়ে জনগণের কাতারে গিয়ে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।
এরশাদ শৃঙ্খলিত : গোলাম মাওলা
বিবার্তা২৪.নেট : তাহলে জাতীয় পার্টি কি সরকার থেকে বের হয়ে সত্যিকারের বিরোধী দলে পরিণত হতে যাচ্ছে?
 
গোলাম মাওলা : এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা স্বাভাবিকভাবেই ট্রেজারি বেঞ্চে বসেন। সংসদে বিরোধী দলে যারা থাকেন, তারা সরকার ও মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা-অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওই প্রশ্নের জবাব দিয়ে থাকেন। কিন্তু ওই মন্ত্রী যদি বিরোধী দল থেকে হন, তাহলে তাকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তাই জাতীয় পার্টির তৃণমূলসহ সর্বস্তরের নেতা ও দেশবাসী আশা করেন, পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু এরশাদ ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী এ ব্যাপারে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেবেন।
 
বিবার্তা২৪.নেট : সাংবিধানিকভাবে জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, তারাই সত্যিকারের বিরোধী দল। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
 
গোলাম মাওলা : বিএনপি একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, তারা একাধিকবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে আসেনি এবং সংসদে তাদের কোনো অবস্থান নেই, সেহেতু বিরোধী দল হিসেবে আমরা আছি।  বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সংসদে তাদের বড় অবস্থান থাকতো, দেশবাসী চাইলে তারা সরকারও গঠন করতে পারতো। কিন্তু তারা নির্বাচনে আসলো না কেন? এই প্রশ্নের জবাব তাদেরকে দিতে হবে।
 
রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে তারা বিরোধী দল। বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন করছে। সুতরাং রাজপথে তারা বিরোধী দল। যে দল বা যারা সরকারে নেই তারাই তো বিরোধী দল। আইনগত ও সাংবিধানিকভাবে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল, অন্যদিকে নির্বাচন বর্জন করায় ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকায় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বিরোধী দল। দেশবাসী এ ব্যাপারে কী মনে করছেন, সেটি কেবল তারাই বলতে পারবেন। দেশবাসী যদি বিএনপিকে সত্যিকারের বিরোধী দল মনে করতো, তাহলে সেখানে গণভোটের প্রশ্ন আসতো। গণভোটের সিস্টেম থাকলে সেখানেই নির্ধারিত হতো, কারা বিরোধী দল?
 
বিবার্তা২৪.নেট : অভিযোগ রয়েছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার কোনো সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেন না, বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এমন প্রেক্ষাপটে জনগণ তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারে কি-না? 
 
গোলাম মাওলা :  আমি যদি পাল্টা প্রশ্ন করি, বাংলাদেশে আরও দুইটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) আছে, তারাও তো সব সময় এক কথায় থাকতে পারেননি এবং পারেও না। নিন্দুকেরা অনেক কথাই বলে, তাদের কথা জবাব আমরা দিতে চাই না। আমার প্রশ্ন, ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও কি তাদের কথা অথবা নির্বাচনী ও আন্দোলনের কমিটিমেন্ট ঠিকভাবে রাখতে পারছেন?    
 
বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলনে গেলেন । তাদের ঘোষণা ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। তারা কি তাদের সেই কথায় থাকতে পারছেন? তারাও তো তাদের কথা পরিবর্তন করেছেন।
 
পল্লীবন্ধু আলহাজ্ব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শৃঙ্খলিত। নব্বইয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে বৃহত্তম দুটি রাজনৈতিক দল সুকৌশলে ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে উনাকে শৃঙ্খলিত করেছেন। তিনি এখনো শৃঙ্খলিত। সেজন্য তিনি মুক্তভাবে রাজনীতিটা করতে পারেননি, এখনো পারছেন না। যদি মুক্ত রাজনীতি করতে পারতেন, তাহলে তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন।
 
সংবিধান পরিবর্তন করা না হলে দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থাকতো। সে ব্যবস্থায় গণরায়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হতো। নির্বাচন হলে প্রমাণিত হয়ে যেত, পল্লীবন্ধু এরশাদের জনপ্রিয়তা আছে কি-না? আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু এরশাদ-তিনজনকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন। জনগণ রায় দিক। আমি বিশ্বাস করতে চাই, জনগণ এখনো পল্লীবন্ধু এরশাদের পক্ষে আছে।  
 
বিবার্তা২৪.নেট : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ২০ দলীয় জোট গণতন্ত্রের স্বার্থে সকল দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন আসলে কতটা জরুরি?  
 
গোলাম মাওলা : নিজেদেরকে যারা বিরোধী দল হিসেবে দাবি করেন, জাতীয় নির্বাচনের দাবি তারা সেভাবে উত্থাপন করতে পারেন নাই। ঠিকভাবে উত্থাপন করতে পারলে রাজপথে প্রতিবাদী কণ্ঠ তাদের সঙ্গে যুক্ত হতো। কিন্তু সেটা হয়নি। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়েছে। আমাদের দেশেও হতে পারে, হওয়াটা দোষের কিছু নয়, সংবিধানেও এটি নিষিদ্ধ নয়। সেই দাবিটা বিরোধী দল থেকে জোরালোভাবে উত্থাপন হয়নি।
 
আজকের যে স্থবিরতা তার সমাধানে একটা সমঝোতা-সংলাপ হতেই পারে। যেখানে আল্লাহ’র রসূল প্রতিপক্ষের সাথে সমঝোতা করেছেন, সেখানে জাতীয় স্বার্থে আমাদের দেশেও সমঝোতা হতেই পারে। সংলাপের মধ্য দিয়ে যেকোনো সঙ্কটের সমাধান হতে পারে। সেজন্য সরকারের ওপর বিরোধী দলকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে এবং সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিরোধী দলের দাবির সঙ্গে জনগণ সম্পৃক্ত হলে সরকারও সে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন।
 
বিবার্তা২৪.নেট : বিবার্তাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 
 
গোলাম মাওলা : আপনাকে ও বিবার্তার পাঠকদেরও ধন্যবাদ। 
 
বিবার্তা/নন্দী/মহসিন
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com