‘জাতীয় পার্টিকে এখন আর কেউ দালাল পার্টি বলবে না’

‘জাতীয় পার্টিকে এখন আর কেউ দালাল পার্টি বলবে না’
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০১৬, ১৯:৫৮:২৮
‘জাতীয় পার্টিকে এখন আর কেউ দালাল পার্টি বলবে না’
জাহিদ হোসেন বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলাইমান আলম শেঠ বলেছেন, জিয়াউদ্দীন বাবলু রাজনীতিবিদ নয়, সে হচ্ছে দালাল। জাতীয় পার্টির কোনো উন্নয়ন করেনি, করেছে নিজের উন্নয়ন। জাতীয় পার্টিকে ব্যবহার করে সে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছে। রবিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বিবার্তার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাতকার নিয়েছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক জাহিদ হোসেন বিপ্লব। 
 
বিবার্তা: জাতীয় পার্টির বর্তমান নয়া মেরুকরণে পার্টি কী ধরণের লাভবান হবে বলে আপনি মনে করেন?
 
সোলাইমান আলম শেঠ: নয়া মেরুকরণে জাতীয় পার্টি ক্ষমতা থাকা অবস্থায় যেমন রমরমা এবং শক্তিশালী ছিলো পার্টিতে এখন সেরকম আমেজ বিরাজ করছে। এই মেরুকরণের ফলে আমাদের ক্ষমতাসীন দলে যে জোয়ার ছিলো সেই জোয়ার আবার ফিরে আসবে। উইপোকা ডিপুর ভিতরে লুকিয়ে থেকে সন্ধ্যার সময় যখন লাখ লাখ উইপোকা খাদ্যের সন্ধানে একসাথে বের হয় তেমনি স্যারের (এরশাদের) এ সিদ্ধান্তে সারাদেশের ঘুমিয়ে থাকা লাখ লাখ নেতা-কর্মী আনন্দে ঘর থেকে বের হচ্ছে। আমি চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এই যুগপযোগি সিদ্ধান্তের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
 
‘জাতীয় পার্টিকে এখন আর কেউ দালাল পার্টি বলবে না’
 
বিবার্তা: এরশাদ অভিযোগ করেছে বাবলু সংগঠন বুঝে না এবং অনেক নেতা অভিযোগ করেছে সে কর্মীবান্ধব নয়, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
 
সোলাইমান আলম শেঠ: বাবলু রাজনীতিবিদ নয়, বাবলু হচ্ছে দালাল। সে জাতীয় পার্টির কোনো উন্নয়ন করেনি, করেছে নিজের উন্নয়ন। জাতীয় পার্টিকে ব্যবহার করে সে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছে। সে ইচ্ছে করলে জাতীয় পার্টিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারতো। বরং এরশাদকে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে পার্টিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছে। আজ চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ, পার্বত্য তিনটি জেলা এবং কক্সবাজার জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রতিটি জেলার নেতারা আজ স্যারকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এরশাদের এ সঠিক সিদ্ধান্ত দলকে আবার পুনরায় জাগরত করবে। ২২ তারিখ শুক্রবারও বাবলু চট্টগ্রামে আসার পর কোনো নেতা-কর্মী তার সাথে দেখা করতে যায়নি। কেন তাকে বহিস্কার করা হলো, আপনি কি সংগঠন করেছেন, আপনাকে অব্যাহতি দেওয়ার পর কর্মীরা কেন এত উদ্ভাসিত? এর কোনো উত্তরই সে সাংবাদিকদের দিতে পারেনি।
 
বিবার্তা: দলে রওশন পন্থিরা অভিযোগ করেছেন এরশাদের এ সিদ্ধান্ত গঠনতন্ত্র বিরোধী, আপনিও কি তাই মনে করেন?
 
সোলাইমান আলম শেঠ: এটা সঠিক নয়। আমাদের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশ, জনগণ এবং পার্টির স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা মোতাবেক তাকে এ ক্ষমতা দেওয়া আছে। এরশাদের এ সিদ্ধান্তে এখন জাতীয় পার্টিকে আর কেউ দালাল পার্টি বলতে পারবে না।
 
বিবার্তা: আপনাদের দলে তো দু’টি ধারা, এক রওশন পন্থি দুই এরশাদ পন্থি। আপনি কোন পন্থি?
 
সোলাইমান আলম শেঠ: জাতীয় পার্টিতে রওশন পন্থি বা এরশাদ পন্থি বলতে কোনো শব্দ নেই। আমরা সবাই এরশাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। যারা এসব করছেন তারা দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা দুষ্টু লোক। তারা জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো। এখন আর পারবে না। কেন না ষড়যন্ত্রকারিরা এরশাদ এবং কর্মীদের কাছে চিহ্নিত হয়ে গেছেন।
 
বিবার্তা: জাতীয় পার্টি কি সরকার থেকে বের হতে পারবে?
 
সোলাইমান আলম শেঠ: সময় হলেই জাতীয় পার্টি সরকার থেকে বের হয়ে যাবে। এরশাদের প্রতি আমাদের সবার আস্থা আছে। আমি বিশ্বাস করি উনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
 
বিবার্তা : মন্ত্রীরা কবে পদত্যাগ করবে? না করলে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন?
 
সোলাইমান আলম শেঠ: আমরাতো বিরোধীদলে আছি। মন্ত্রীত্ব থাকলেও আমরা বিরোধীদল না থাকলেও আমরা বিরোধীদল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সম্মান দেখিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে তিনজনকে মন্ত্রী করেছেন। এখন এ সকল মন্ত্রী দেশ, জনগণ বিশেষ করে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেছে? আমার জানামতে জাতীয় পার্টির কোনো নেতাকর্মীই তাদের কাছ থেকে কোনো প্রকার উপকার বা সহযোগিতা পায় নাই। যে মন্ত্রী দ্বারা দেশ ও দলের কোনো উপকার হয় না তাদের মন্ত্রী থাকার অধিকার নাই।
 
বিবার্তা: বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা কি?
 
সোলাইমান আলম শেঠ: আমি মহানগরের নির্বাচিত সভাপতি। এই কমিটির মেয়াদ আরো দেড় বছর আছে। জিয়াউদ্দিন বাবলু চট্টগ্রামের নির্বাচিত কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সম্প্রতি একটি পকেট কমিটি করেছিলেন। ওই কমিটি শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারেনি, জাতীয় কোনো বিষয়ে কোনো প্রোগ্রাম করতে পারেনি। কোনো কর্মীসভা বা কোনো ওয়ার্ড ও থানা কমিটি করতে পারেনি। এ কমিটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দলের চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব আমাকে বলেছেন যেহেতু তোমার কমিটির মেয়াদ আরো দেড় বছর আছে সেহেতু তুমিই চট্টগ্রাম মহানগর দেখবে। চট্টগ্রামে আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী আছে এখন দরকার তাদের আবার জাগ্রত করা।
 
বিবার্তা: আপনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন। এত কম ভোট পেলেন কেন?
 
সোলাইমান আলম শেঠ : আমার দলের মহাসচিব তখন আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন এবং নগর নেতা কর্মীদের শাসিয়ে বলেছেন শেঠের পক্ষে কাজ করলে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। তিনি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাসিরের পক্ষে প্রকাশ্যে ক্যাম্পিং করেছেন যা সকল জাতীয় সংবাদপত্রে এসেছে। তাছাড়া আপনারা সকলেই জানেন ওই নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি হয়েছে। তারপরও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা যে ভোট পেয়েছিলো তার চেয়ে আমি একাই বেশি ভোট পেয়েছিলাম।
 
বিবার্তা: বিএনপির সাথে জাতীয় পার্টির কোনো জোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?
 
সোলাইমান আলম শেঠ : বিএনপির সাথে জোট করার কোনো প্রশ্নই আসে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এ বড় দুটি দল দীর্ঘ পঁচিশটি বছর দেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে। জাতি আজ তাদের অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়।
 
বিবার্তা: আপনি কী মনে করেন দেশে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন হওয়া দরকার?
 
সোলাইমান আলম শেঠ: অবশ্যই। যদিও বর্তমান সরকার দেশ ভালভাবেই চালাচ্ছে এবং দেশে অনেক উন্নয়ন কাজ চোখে পড়ছে। তবে যেহেতু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি, তাছাড়া এ নির্বাচন নিয়ে জনমনেও প্রশ্ন আছে সেহেতু সরকার একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দিলে দেশ-বিদেশে এ সরকারের গ্রহণযোগ্যতা আরো অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
 
১৯৬১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের কোতয়ালির আল করণ এলাকায় ঐতিহ্যবাহি জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সোলায়মান আলম শেঠ। তার পিতা মরহুম মাহবুবে আলম শেঠ, মাতা মরহুমা সাকিনা বেগম। শেঠ গ্রুপ অব কোম্পানির সত্ত্বাধিকারি সোলাইমান আলম শেঠ প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পরিচালক। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সমিতি, চট্টগ্রাম ডায়বেটিস হাসপাতাল, চট্টগ্রাম রোগি কল্যাণ সমিতি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য। এছাড়া চট্টগ্রাম পোর্ট, চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড, চট্টগ্রাম গলফ ক্লাব, চট্টগ্রাম ক্লাব, চট্টগ্রাম বোর্ড ক্লাব, চট্টগ্রাম ভাটিয়ারি গলফ ক্লাবসহ অসংখ্য সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সোলায়মান আলম শেঠ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। 
 
বিবার্তা/বিপ্লব/মহসিন
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com