‘আমি তোমারি দিকটা নিলাম’

‘আমি তোমারি দিকটা নিলাম’
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৯:৫৯:০১
‘আমি তোমারি দিকটা নিলাম’
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+
রাজধানী ঢাকা শহরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম জাকির হোসেন হাবীবের। শৈশব, কৈশোরের বেড়ে উঠার দিনগুলিও  কাটে ঢাকা শহরেই। বাবা পরমানু শক্তি কমিশনে  প্রশাসনিক কর্মকর্তা আর মা স্থানীয় শহীদ আবু তালেব উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। শিক্ষিত পরিবারের মধ্যে বেড়ে উঠা জাকির হোসেন  শৈশবেই স্বপ্ন দেখতেন ডাক্তার হবেন।
 
জাকির হোসেন হাবীব মায়ের স্কুল শহীদ আবুতালেব উচ্চ বিদ্যালয় , ক্যাডেট কলেজ আর  মেডিকেল কলেজের  শিক্ষাজীবন পেরিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন মাইক্রোবায়োলজিতে।বেশ কয়েক বছর মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা করে এখন তিনি আই ই ডিসি আর’ (Institute of Epidemiology Disease Control and Research) এ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। 
এবারের অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় খড়িমাটি প্রকাশনী থেকে ‘আমি তোমারি দিকটা নিলাম’নামে তার লেখা প্রথম বই  প্রকাশিত  হয়েছে।
 
শুক্রবার বিকেলে  তার সাথে আড্ডা জমে রাজধানীর শাহবাগে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় খড়িমাটি প্রকাশনীতে। তার জীবনের নানান দিক ও মেলায় প্রকাশিত ‘আমি তোমারি দিকটা নিলাম’ বই নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন বিবার্তা২৪.নেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজের সাথে।  তাহলে আসুন শুনি তার মুখেই।
 
আপনার পড়াশুনার জীবন বিষয়ে বলুন।
আমি মির্জাপুর ক্যডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও তেজগাঁও কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। এরপরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করি আর  এমফিল ডিগ্রি করেছি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ  থেকে। পেশাগত জীবন শুরু করি মির্জাপুরে কুমুদিনী  হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে। তারপর  আইসিডিডিআর বি তে (কলেরা হাসপাতাল) কিছু দিন,  এরপরে  সরকারি চাকরি নিয়ে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে  যোগ দেই।
 
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার কি বই বের হয়েছে? বইটির বিষয়বস্তু কি?
বইটির নাম ‘আমি তোমারি দিকটা নিলাম: একজন মেডিকেল শিক্ষকের ডিজিটাল ডাইরি’। এই বইতে আমার লেখা ছাড়াও  রয়েছে আমার পাঁচজন  ছাত্রছাত্রীর লেখা- যাদের লেখার আমি একজন মুগ্ধ পাঠক। আর  লেখার শেষে ফেসবুকে ওই লেখা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য মন্তব্যগুলোও রাখা হয়েছে। 
 
২০১০ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ। সেখানে মাঝে মধ্যেই  নানা ধরনের অনুপ্রেরণামূলক স্ট্যাটাস দিতাম। তাদের সঙ্গে আমার বিভিন্ন অনুভূতি শেয়ার করতাম। প্রচণ্ড পড়াশুনা আর নিয়মিত অসংখ্য পরীক্ষা, পাস-ফেল-পেন্ডিং এর চাপে থেকে মেডিকেল ছাত্রছাত্রীরা মাঝে মাঝে দিশেহারা বোধ করে, হতাশায় ভোগে। এই হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে দরকার অনুপ্রেরণা আর উৎসাহ ।বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে সেটাই তাদের দিতে চেষ্টা করেছি। আর পড়ালেখার বাইরে একটি সুস্থ্ সুন্দর জীবনবোধ নিয়ে বিকশিত হতে পথ দেখানোর চেষ্টা করেছি।
 
আরেকটি বিষয় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি-  মেডিকেল পেশাটা হলো সেবামূলক একটি এটাকে যেন তারা সেভাবেই নেয়। অন্য সব পেশার থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা এক মহান পেশা, এটা যেন তারা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করে। সবসময় এর মর্যাদা তুলে ধরতে সচেষ্ট থাকে। কেবল অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার যে এই পেশা নয় সেটাই আমি ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি ক্লাশে আর ফেসবুকে লেখার মাধ্যমে।
 
‘আমি তোমারি দিকটা নিলাম’বইটি লেখার পেছনের কথা জানতে চাই।
কোনো দিন চিন্তাও করিনি যে লেখাগুলো দিয়ে কখনো বই প্রকাশ করব। আমার বন্ধুর তালিকায় বেশ কিছু বড় ভাই আছে যারা নিয়মিত অমার স্ট্যাটাসগুলো পড়তো। তারা মাঝে মধ্যেই এই লেখাগুলোর প্রশংসা করতো এবং লেখাগুলো এক করে বই প্রকাশ করতে বলতো।  আমি বলতাম,  আরে ভাই, আমার বই ছাপালে কে কিনবে, কে পড়বে , কেই বা আমার  বই ছাপাবে? এভাবেই চলছিল। তারপরে একদিন  অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমার ক্যাডেট কলেজের বন্ধু এহসান খুব সিরিয়াসভাবে এ বিষয়ে বললে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে আমার উল্লেখযোগ্য লেখা নিয়ে বই প্রকাশ করার।
 
বইটিতে প্রতিটি লেখার শেষে ফেসবুকে যে মন্তব্য  করেছে  বিভিন্নজন সেগুলোসহ প্রকাশ করা হয়ছে। তাছাড়া ফিলার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন মনীষীর বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক কথা। আর প্রচ্ছদও করা হয়েছে ফেসবুকের পেজের আদলে।
 
লেখালেখির শুরু কিভাবে?
স্কুল জীবন থেকেই টুকটাক লেখালেখি করতাম। স্কুল, কলেজের ম্যাগাজিন, সাময়িকীতে প্রবন্ধ কবিতা  এসব লিখতাম।  এভাবে লিখতে লিখতেই  লেখালেখির হাতেখড়ি। আর ২০১০ সাল থেকে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আমার লেখালেখির অবারিত সুযোগ করে দিল। কোনো একটা বিষয় মনে দাগ কাটলে সে বিষয় নিয়ে লিখতাম। আর ছাত্র ছাত্রী বন্ধুদের লাইক, কমেন্টে আরো আরো লেখার অনুপ্রেরণা পেতাম 
 
আপনিতো অনেকদিন শিক্ষকতা করেছেন  শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কটা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
আমি মনে করি একজন শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ সহজ  সম্পর্ক থাকা দরকার, ভয়-ভীতির সম্পর্ক নয়। তবে এটাও মনে রাখা দরকার- A good teacher is friendly to his students but not friend. সুতরাং সে ধরনের পরিমিতিবোধযুক্ত সম্পর্ক থাকা দরকার। শিক্ষককে আনন্দদায়কভাবে শিক্ষা দিতে হবে, বিষয়ের প্রতি ছাত্র ছাত্রীকে আগ্রহী করে তোলাটাই একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় কাজ এবং এটা করতে পারাটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে আমি মনে করি।
 
বিবার্তা/উজ্জ্বল/জাহিদ
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com