পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এসএম নাসির উদ্দিন। বর্তমানে তিনি কর্মরত রয়েছেন স্টার্লিং সিকিউরিটিজের সিইও হিসেবে। ১৯৯৬ সাল থেকে পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত আছেন। সম্প্রতি এই পুঁজিবাজার বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা হয় বিবার্তার সিনিয়ার রিপোর্টার মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের সঙ্গে। যার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য ।
বিবার্তা : বিবার্তা পরিবার থেকে আপনাকে স্বাগত, কেমন আছেন ?
নাসির উদ্দীন : জি ভালো। আমার পক্ষ থেকেও বিবার্তা পরিবারের সবার জন্য শুভকামনা।
বিবার্তা : প্রথমেই পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাই ?
নাসির উদ্দীন : সত্যি কথা বলতে কি আমার মতে পুঁজিবাজার খুব একটা ভালো জায়গায় নেই। ২০১০ সালের ধসের পর থেকে বাজার আর সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। একথা ঠিক যে, বাজারের লাগাম টেনে ধরার জন্য এই সময়ের মধ্যে ছোট ছোট নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এতে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলাফলটা হয়েছে শূন্য।
বিবার্তা : আপনার মতে বাজারের এই নাজুক পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার উপায় কী ?
নাসির উদ্দীন : অন্যরা হয়তো এর ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেবেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় বাজার ঠিক না হওয়ার একটা উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে চাহিদা এবং যোগান। একটু পরিষ্কার করে যদি বলি ২০১০ সালে বাজারে টাকা ছিলো কিন্তু শেয়ারের সাপ্লাই ছিলো না। এখন হয়েছে তার উল্টোটা। বাজারে এখন অর্থ সংকট রয়েছে। অর্থাৎ চাহিদার সঙ্গে যোগানের একটা ফারাক রয়ে গেছে। যা বাজারকে তার সঠিক জায়গায় পৌছাতে দিচ্ছে না। এর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে।
বিবার্তা : অনেকে বলছেন বাজারের এই পরিস্থিতিতে আপাতত আইপিও বন্ধ রাখা হোক। যারা এমনটি বলছেন আপনি কী তাদের সঙ্গে একমত ?
নাসির উদ্দীন : আইপিও বন্ধ থাকা কোনো সমাধান হতে পারে না। তবে এটা ঠিক বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আইপিওর সংখ্যা কমিয়ে দেয়া যেতে পারে।
বিবার্তা : কোম্পানি ভুল তথ্য উপস্থাপন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হচ্ছে, এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী ?
নাসির উদ্দীন : কোম্পানি ভুল তথ্য দিয়ে বাজারে তালিকাভূক্ত হচ্ছে এমন অভিযোগ মাঝে মধ্যে শোনা যায়। তবে কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমি মনে করি যদি কোনো কোম্পানি ভুল তথ্য উপস্থাপন করে এবং এর প্রমাণ পাওয়া যায় তবে এসব কোম্পানির শাস্তি হওয়া দরকার। আর কোনো কোম্পানি তালিকাভূক্ত হওয়ার আগে বিএসইসির উচিত ভালো করে ওই কোম্পানির সকল তথ্য যাচাই বাছাই করে নেওয়া। ভুল হলে অডিট ফার্মগুলোকেও শাস্তির আওতায় আনা দরকার।
বিবার্তা : অনেকে মনে করছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে অচিরেই ১৯৯৬ বা ২০১০ সাল ফিরে আসবে । এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলে আপনি কী বলবেন ?
নাসির উদ্দীন : একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা কিন্তু আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। তারা এখন হুজুগে-গুজবে কানও কম দেন। অতিমূল্যায়িত শেয়ার থেকে দূরে থাকেন। সর্বোপরি কোম্পানির খোঁজ খবরও রাখেন। ফলে বাজারে আবার ৯৬ বা ২০১০ ফিরে আসবে এমন ভাবাটা ভুল। তাছাড়া সেই বাজারের সঙ্গে এখনকার বাজারের অনেক পার্থক্য রয়েছে। তখন বাজারে ভালো শেয়ারের অভাব ছিলো, ছিলো অতিমুল্যায়িত শেয়ারের ছড়াছড়ি। এখন তা নেই। তাই বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।
বিবার্তা : সম্প্রতি রিজার্ভের অর্থ চুরি হওয়ার পর অনেকের শংকা রয়েছে একই কায়দায় শেয়ার হ্যাকড হতে পারে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখবেন ?
নাসির উদ্দীন : এ কথা সত্যিই যে রিজার্ভ চুরি হয়ে যাওয়ার পর শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে তাদের অবগতির জন্য বলবো এখন শেয়ার কেনাবেচা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন হাউজ কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া সিডিবিএল, বিএসইসিরও এ বিষয়ে কঠোর নজরদারী রয়েছে। ফলে শেয়ার হ্যাকড হবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কা মুক্ত থাকতে পারেন।
বিবার্তা : পুঁজিবাজারে আমরা মাঝেমধ্যে আলোর ছটা দেখতে পাই, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা দেখতে পাচ্ছি না। এর প্রধান কারণ কী ?
নাসির উদ্দীন : পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের দায়িত্ব অনেক বেশি। বাইরের দেশে দেখা যায় পুঁজিবাজারে ক্রান্তিকালে ব্যাংক বিশাল ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমাদের দেশে তেমনটি দেখছি কই ? ২০১০ সালের পর থেকে পুঁজিবাজারের জন্য যে সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হযেছে তার বেশির ভাগ ইতিবাচক ছিলো না। পুঁজিবাজার ভালো থাকার জন্য আর একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসা। তারা বাজার বিমুখ থাকলে বাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিবার্তা: আপনি যে প্রতিষ্ঠানের সিইও এই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কিছু বলবেন কী?
নাসির উদ্দীন : আমি যে প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছি এটার নাম ‘স্টার্লিং সিকিউরিটিজ’। আমরা সব সময় চেষ্টা করি অন্যান্য ব্রোকারেজ হাউজ থেকে বিনিয়োগকারীদের বেশি সুযোগসুবিধা দিতে। এখানে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী আমরা ঋণ দিয়ে থাকি। বিও খুলতেও আমরা বেশি সময় নেই না। একদিনের মধ্যে এখানে বিও একাউন্ট খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর আলাদাভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে থাকি। যেকোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান দেই। কোম্পানির তথ্য জানতে চাইলে সাধ্যমতো দেয়ার চেষ্টা করি।
বিবার্তা/নাহিদ/মহসিন