অগ্রাধিকার নয়, সম অধিকার চাই : নাজমা আক্তার

অগ্রাধিকার নয়, সম অধিকার চাই : নাজমা আক্তার
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০১৬, ২১:৫৯:১৮
অগ্রাধিকার নয়, সম অধিকার চাই : নাজমা আক্তার
হাসিবুল হাসান
প্রিন্ট অ-অ+
যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার। স্কুল জীবনেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তীতে পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ৭৫ পরবর্তী সময়ে প্রথম ছাত্রলীগের কমিটির গঠনে ভূমিকা রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পূর্ণ করা নাজমা আক্তার ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুব মহিলা লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সম্প্রতি রাজধানীর শ্যামলীর একটি বাসায় বিবার্তা২৪.নেট এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাতকারটি নিচে তুলে ধরা হলো: 
 
বিবার্তা : রাজনীতিতে হাতেখড়ি কিভাবে?
 
নাজমা আক্তার : ছোট বেলাতেই রাজনীতিতে এসেছি। স্কুল জীবনে। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন। তিনি একদিন টুঙ্গিপাড়ায় গেলেন। তখন সেখানে কলেজ ছিল না। স্কুলের ছেলেমেয়েরা ছাত্রলীগ করতো। আমি তখন টুঙ্গিপাড়া হাইস্কুলে পড়তাম। টুঙ্গিপাড়া থানা ছাত্রলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। তখন থেকেই আমি আপার (শেখ হাসিনা) হাত ধরে বিভিন্ন স্থানে যেতাম। আমার বাবা চাকরি করতেন। সেই সুবাদে পাবনায় থাকা হয়। তখন আমি পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করি। সেখানে তখন ছাত্রলীগ ছিল না। আমিই প্রথম সেখানে ছাত্রলীগ গঠন করি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করি। থাকতাম রোকেয়া হলে। সেখানে ৭৫ পরে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি ছিল না। ১৯৮৫ সালে আমি আমাদের ইয়ারের মেয়েদের নিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করি।
 
বিবার্তা : ৭৫ পরবর্তী সেই সময়গুলোতে ছাত্রলীগ করাটাতো অনেক চ্যালেঞ্জের ছিল। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
 
নাজমা আক্তার : আসলে ৭৫ এর পরে অনেক জায়গাতেই ছাত্রলীগের কোনো ‍কমিটি ছিল না। রোকেয়া হলেও ৭৫ এর পরে প্রথম কমিটি আমিই করেছি। প্রথমে আমি সাংগঠনিক সম্পাদক, পরে তিনবার সাধারণ সম্পাদক এবং পরে ৮৯ সালে ডাকসুর নির্বাচনে রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের জিএস নির্বাচিত হই। তখন ছাত্রলীগের ৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। আমাদের অনেক অত্যাচার নির্যাাতন সহ্য করতে হতো। বিশেষ করে বিএনপি ও বাম সংগঠনগুলোর। আমাদের একটা পোস্টারও লাগাতে দিত না। যখন তখন আমাদের রুম ভাঙচুর করতো। সেই রকম একটা বৈরী পরিবেশের মধ্যে মেয়েদের হলের প্রথম কমিটি আমি গঠন করেছিলাম।
 
বিবার্তা : যুব মহিলা লীগ গঠনের প্রেক্ষাপট কী ছিল? গঠন পরবর্তী সময়ে আন্দোলনে সবার নজরকারা সেই যুব মহিলা লীগের বর্তমানে তেমন কোনো অ্যাক্টিভিটি চোখে পড়ে না কেনো? 
 
নাজমা আক্তার : ২০০২ সালে ৬ জুলাই যুব মহিলা লীগ গঠিত হয়। কিন্তু গঠনের আগের একটা প্রেক্ষাপট আছে। শেখ হাসিনার ইচ্ছে ছিল। মহিলা আওয়ামী লীগে অনেক সিনিয়ররা আছেন। তারা সহজে পদ ছাড়তে চান না। তখন আমরা যারা ছাত্রলীগ করা মেয়ে, আমাদের অবদানও তারা বুঝতে চান না। আমাদের ওখানে ঠাঁই দিতে চান না। সে কারণে মাননীয় নেত্রী ইচ্ছে করলেন ছাত্রলীগ করা নেত্রীদের দিয়ে একটি ইয়ং ফোর্স গঠন করবেন। যারা রাজনৈতিকভাবে মেয়েদেরকে সচেতন করবে। মেয়েদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে এরা কাজ করবে। 
 
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমাদের প্রথম আহ্বায়ক কমিটিতে আমি (নাজমা আক্তার) আহ্বায়ক, ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক জাকিয়া সুলতানা মলি (ইডেন মহিলা কলেজ), ২নং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় অপু উকিলকে (বদরুন্নেসো মহিলা কলেজ)। সদস্য সচিব করা হয় আদিবা আনজুমকে (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সব মিলিয়ে ১০১ সদস্যের কমিটি করা হয়। এর মধ্যে ৯০ ভাগ ছিল ছাত্রলীগ করা মেয়ে। এরা বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
 
বিবার্তা : এটা তো বললেন গঠনের প্রেক্ষাপট। তাহলে কি যুব মহিলা লীগ গঠনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল না?
 
নাজমা আক্তার : সেটাও ছিল। ওই সময় বিএনপি জামায়াত যে ধরনের রাজত্ব, হত্যা, খুন দেশের সম্পদ লুট করেছিল্ তখন সেই প্রেক্ষিতে মনে করলাম এখনই উপযুক্ত সময় আমরা এর প্রতিবাদ করবো। আমাদের রাজপথে সরব থাকার কারণও ওটাই। 
 
বিবার্তা : আপনারাও তো একসময় রাজপথে আন্দোলন করেছেন। বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
 
নাজমা আক্তার : আমাদের মেয়েরা ছিল বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেওয়া। তারা আগেও ভূমিকা পালন করেছে। তাই তাদের কাউকে আন্দোলন শেখাতে হয়নি। তারা নাকি (বিএনপি) পুলিশের ভয়ে আন্দোলন করতে পারে না। আমাদেরও তো হামলা মামলা দিয়ে হয়রানী নির্যানন করা হয়ছে। কিন্তু আমরা নেত্রীর নির্দেশে মাঠে থেকেছি। রাজপথে আন্দোলন করেছি। আমরা রাজপথ দখল করেছি, ভাঙচুর করিনি। আমরা রাস্তা থেকে বাস সরিয়ে দিয়েছি, পুড়িয়ে দেইনি। আর বর্তমানে নেই কেন? বর্তমানে তো আমরা ক্ষমতায়।
 
বিবার্তা : বর্তমান সরকার নারীদের উন্নয়নে কি যথাযথ ভূমিকা নিতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন।  
 
নাজমা আক্তার : জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন। তিনি অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন নারী ও শিশুদের জন্য। সামাজিক যে কর্মসূচি রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে তিনি নারীদের নিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন ধরনের ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। উনি নারীদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশে নারীদের উন্নয়নের জন্য কোনো নীতিমালা ছিল না। যা তিনি ২০১১ সালে করেছেন। সেই নীতিমালার আলোকে এগিয়ে চলছেন। ওই যে বললেন আমরা রাজপথে নেই কেন? এখন তো আমাদের দেশ গড়ার সময়। দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করছি।
 
বিবার্তা : আপনি বলছেন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ বা নারীর নায্য অধিকার আদায়ে আপনাদের কর্মসূচি থাকতে পারতো?
 
নাজমা আক্তার : নারীদের বৈষম্যে আমরা নেই। এটা কিন্তু ঠিক নয়। আমরা সব সময়ই নারী প্রগতির জন্য, নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছি। আমরা নির্যাতিত নারীদের পাশে আছি সবসময়ই। সেখানে হয়তো আমাদের রাজপথে দেখছেন না কিন্তু আমরা কাজ করছি। আমরা সরকারের কাছে সব সময় দাবি করি প্রতিটি নির্যাতিত নারী যেন সুবিচার পান।
 
বিবার্তা : আপনি বলছেন নির্যাতিত নারীদের পাশে থাকবেন সব সময়। সম্প্রতি সোহাগী জাহান তনু হত্যার কোনো কূল কিনারা পায়নি পুলিশ। এ প্রসঙ্গে আপনার বক্তব্য কী?
 
নাজমা আক্তার : ঠিকই বলেছেন এটা সম্প্রতি সময়ের সবচেয়ে আলোচিত। কিন্তু এই একটা হত্যা শুধু নয়, আরো তো নারীরা হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তনু হত্যাকাণ্ড জঘন্য ঘটনা। কাপুরুষের মতো কাজ হয়েছে। আমরা অবশ্যই দোষিদের বিচার চাই। যত দ্রুত সম্ভব এদের গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হোক। একই সঙ্গে তনুর মতো সকল তনুদের হত্যা ও নির্যাতনের বিচার চাই। 
অগ্রাধিকার নয়, সম অধিকার চাই : নাজমা আক্তার
বিবার্তা : নারীদের অধিকার আদায়ে আপনাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে যদি বলেন...
 
নাজমা আক্তার : আমি নারী উন্নয়নে বিশ্বাস করি। নারী পুরুষ সমতায় এগিয়ে যাক বিশ্বাস করি। আমি নারীবাদী নই। শুধুমাত্র নারীরাই সবকিছু করুন তা না। আমি নারীদের অগ্রাধিকার চাই না। আমি চাই তারা সমঅধিকার পাক। আমাদের সংবিধানে নারীদের জন্য স্বীকৃত যে অধিকার তারা সেটা পাক। সেই অধিকার বাস্তবায়নের জন্য শুধুমাত্র দলের কর্মী হিসেবে নয়, একজন নারী হিসেবে তাদের পাশে সব সময়ই আছি। যেমন আমরা চাই আমাদের সংসদে নারীদের আসন বাড়ুক। নারীরা সরাসরি নির্বাচন করার জন্য আরো বেশি করে আসুক।
 
বিবার্তা : দলীয় প্রতীকের নির্বাচনগুলোকে কি নারীদের সংখ্যা আরো বাড়নো উচিত?
 
নাজমা আক্তার : ১৯৯৭ সালের আগে কোনো নারীই স্বপ্ন দেখতো না তারা লোকাল নির্বাচনে অংশ নেবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নারীদের ভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিলেন, সেই সময় থেকেই কিন্তু নারীদের জাগরণ বলেন, অধিকার বলেন বা রাজনৈতিক সচেতনতা বলেন সবকিছু শুরু হয়েছে। কিন্তু মূল পদে এখনো নারীরা পিছিয়ে এটা ঠিক। সেখানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের বেশ কিছু বাধা রয়েছে। আমরা তো ওই আন্দোলনই করছি।
 
বিবার্তা : ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত যুব মহিলা লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। কাউন্সিল নিয়ে আপনাদের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে?
 
নাজমা আক্তার :  আমরা তো ১৪ বছর ধরে আছি। সম্ভবত জননেত্রী শেখ হাসিনা এ জন্যই কাউন্সিল দিচ্ছেন না যে- আমরা কিন্তু সংগঠন তৈরী করেছি একেকটা কর্মী নিয়ে। সারা দেশের ওয়ার্ড ইউনিয়ন পর্যন্ত শাখা তৈরী হয়েছে। ২০০২ সাল থেকে আমরা এক একটি মেয়েকে তৈরী করেছি। এজন্যই হয়তো নেত্রী কিছু দিন সময় নিচ্ছেন। আমরাও চাই না বেশি দিন এক জায়গায় থাকতে। আমরা চাই আরো বড় জায়গায় যেতে। 
 
বিবার্তা : সামনে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীর সংখ্যা কি আরো বাড়ানো দরকার বলে আপনি মনে করেন?
 
নাজমা আক্তার : আমি তো অবশ্যই মনে করি নারীদের আরো বেশি অন্তর্ভূক্তি প্রয়োজন। মাননীয় নেত্রীর কাছে এটা আমাদের দাবি থাকবে, যেনো কেন্দ্রীয় কমিটিতে মেয়েদেরকে বেশি পরিমাণে সুযোগ দেয়া হয়। সম্ভবত জাতিসংঘে আমাদের নেত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি স্তরে ৩৩ ভাগ নারী নেতৃত্ব রাখবেন। আমরা আশাবাদি নেত্রী এটা করবেন এবং সবার আগেই করবেন।
 
বিবার্তা : আপনাকে ধন্যবাদ।
 
নাজমা আক্তার : বিবার্তাকেও ধন্যবাদ।
 
বিবার্তা/হাসিব/মহসিন
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com