‘শিল্পকর্ম দিয়েই কথা বলি, প্রতিবাদ করি’

‘শিল্পকর্ম দিয়েই কথা বলি, প্রতিবাদ করি’
প্রকাশ : ০৮ মে ২০১৬, ১১:১৫:৪৩
‘শিল্পকর্ম দিয়েই কথা বলি, প্রতিবাদ করি’
রুবাইয়াত আফরীন
প্রিন্ট অ-অ+
শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানের বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে শুরু হয়েছে শিল্পী আনিসুজ্জামান সোহেলের একক প্রদর্শনী। ‘ইন্টিমেট ফিয়ারস’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শিল্পীর ৫২ টি শিল্পকর্ম, যার মধ্যে বেশির ভাগই ইন্সটলেশন ভিত্তিক।তবে কিছু ড্রয়িং এবং অবজেক্টসও আছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন. করেন যৌথভাবে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনার মিস্টার এইচ ই গ্রেগ উইলকক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য। প্রদর্শনী চলবে ৪ জুন পর্যন্ত।
 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লুভা নাহিদ চৌধুরী, নওশীন খায়ের, আবুল খায়ের লিটু, শিল্পী তৈয়বা বেগম লিপি, অসীম হালদার সাগরসহ অনেকেই।বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জের এটাই শেষ আয়োজন। এই প্রদর্শনীর পর বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জ এ আর কোন ধরনের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে না। তবে, বাংলাদেশের শিল্পকলার পরিচর্যায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সহায়তায় অলাভজনক ভাবে নিজস্ব কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জ। 
‘শিল্পকর্ম দিয়েই কথা বলি, প্রতিবাদ করি’
‘ইন্টিমেট ফিয়ারস’ শিল্পীর দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী।শিল্পীর শিল্পকর্মে এক ধরনের বিপরীতধর্মিতা তীব্রভাবে উঠে এসেছে।শিল্পের গভীরতা সন্ধানী এই শিল্পী তার কাজে তুলে ধরেছেন ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা, প্রকৃতির প্রতি আকুলতা ও প্রতিনিয়ত নিয়মের বেড়াজালে সবকিছু ঢেকে যাওয়া। তার কিছু কিছু শিল্পকর্মে দেখা গেছে প্রজাপতির কাটা ডানার মধ্যে ব্লেড, ছুরি, খুরের মত ধারালো অস্ত্র। আবার কিছু শিল্পকর্মে কাটা জিহবা, মাথার খুলির মত আতঙ্কজনক এলিমেন্ট। গতানুগতিক ধারার শিল্পী তিনি নন তা বুঝা যায় তার সব শিল্পকর্মের দিকে খেয়াল করলে। তার আর্ট ওয়ার্ক গুলোতে তিনি গতানুগতিক উপাদান নাটকীয়ভাবে দর্শকের কাছে উপস্থাপন করেন নি। বরং তার গবেষণালব্ধ এসব কাজকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে অমিল ও তীব্র বৈপরীত্য। রাজনৈতিক বিষয় গুলো সরাসরি তার শিল্পকর্মে প্রকাশ না পেলেও পরোক্ষ ভাবে ঠিকই ধরা পড়েছে দেশ ও সমাজের ভাঙ্গন।    
 
‘শুধু কথায় নয়, শিল্পেরও প্রতিবাদ’- এরকম চিন্তাধারার এই গুণী শিল্পীর জন্ম ১৯৭৩ সালে। ১৯৯৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন থেকে বিএফএ সম্পন্ন করেন তিনি। অংশগ্রহণ করেছেন আমিনুল ইসলাম ইয়াং আর্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড ও এক্সিবিশন, ঢাকা আর্ট সামিট, এশিয়ান আর্ট বিয়েনালে, ১৯তম ন্যাশনাল এক্সিবিশন, বার্জার ইয়াং আর্টিস্ট  এওয়ার্ড সহ ২৬টিরও বেশি এক্সিবিশনে।
 
২০১৩ সালে আমিনুল ইসলাম ইয়াং আর্টিস্ট অ্যাওয়ার্ডও পান তিনি।  তার প্রথম একক প্রদর্শনী ‘এগনী উইথ এস্টেসি’ অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে।  বর্তমানে মিডিয়াকম নামে একটি এজেন্সির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পদে নিয়োজিত আছেন। শিল্পী তার ব্যস্ত সময়ের কিছুটা বিবার্তাকে দেন। তার সাথে বিবার্তার কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে দেয়া হল  
  ‘শিল্পকর্ম দিয়েই কথা বলি, প্রতিবাদ করি’
বিবার্তা: আপনার প্রদর্শনী ‘ইন্টিমেট ফিয়ারস’ নামকরণ এতোটা ব্যতিক্রমী কেন?
আনিসুজ্জামান সোহেল: আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে ভয়ে থাকি, আতঙ্কে থাকি। সবসময় আমরা মুখে প্রতিবাদ করতে পারি না। আমার আর্ট ওয়ার্ক আমার প্রতিবাদের ভাষা। আমার মনে হয় আমরা যা ই করি না কেন, এমন একটা সাবজেক্ট চুজ করতে হবে যার সাথে আমি আমাকে রিলেট করতে পারি। আমি প্রতিদিন মুভ করছি, খবর পড়ছি, ভয় পাচ্ছি, আতঙ্কে থাকছি। মূলত এই ভয় আর আতঙ্কের কারণেই আমি প্রদর্শনীর নাম দিয়েছি ‘ইন্টিমে ফিয়ারস’ ।
 
বিবার্তা: আপনার প্রদর্শনীতে গতানুগতিক ল্যান্ডস্কেপ, ফিগার কম্পজিশন, স্টিল লাইফ এগুলো নেই কেন? 
আনিসুজ্জামান সোহেল: আসলে এই ফুল, নদী, পাখি, ফিগার কম্পোজিশন এগুলো ওল্ড মাস্টাররা, সিনিয়রা অনেকেই করে গেছেন। ক্যামেরার এই যুগে এগুলো আঁকার কোনো মানে আছে বলে আমার মনে হয় না। ম্যাসেজ বা স্টেটমেন্ট যদি না থাকে আমার কাছে আর্ট ওয়ার্কের কোনো মূল্য নেই। তাই আমি সব সময় সেইসব সাবজেক্ট ব্যবহার করি যেগুলো আমার লাইফের সাথে রিলেটেড। 
 
বিবার্তা: কি ধরনের কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? 
আনিসুজ্জামান সোহেল: বাজারধর্মী কাজ, যাকে বলে মানুষ ড্রয়িং রুম সাজানোর জন্য যেগুলো নেবে আমি সেইরকম কাজ করি না। আমার নিজের সাথে যা ঘটে নিজে যা ফেইস করি তাই আমার কাজে দেখানোর চেষ্টা করি। আমার শিল্পকর্মই আমার কাছে স্টেটমেন্ট, আমার পলিটিকস। এটা দিয়েই আমি প্রতিবাদ করতে চাই, কথা বলতে চাই। বলতে চাই, হ্যা, আমি এক্সিস্ট করি, আমার মত চিন্তা ভাবনার মানুষ এক্সিস্ট করে সমাজে। কাজের এই জায়গাটায় আমি কম্প্রোমাইজ করি না। 
 
বিবার্তা: আপনার বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে ? 
আনিসুজ্জামান সোহেল: আমি একটা এজেন্সিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে আছি। সারাদিন অফিসেই থাকা হয়। বাড়ি ফিরে স্ত্রী আর ২ সন্তানের সাথেই সময় কাটে । পাশাপাশি প্যাশনের জায়গাটা আছে, আঁকাআঁকি তো চলেই । 
 
বিবার্তা/রুবা/জিয়া
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com