জাপার মন্ত্রীরা সরকার ছাড়লেই ভালো : ‍মিলন

জাপার মন্ত্রীরা সরকার ছাড়লেই ভালো : ‍মিলন
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০১৬, ১৮:১৭:১০
জাপার মন্ত্রীরা সরকার ছাড়লেই ভালো : ‍মিলন
জাহিদ হোসেন বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমদ মিলন বলেছেন, জাপার মন্ত্রীরা সরকার থেকে পদত্যাগ করলে দল ও দেশের জন্য ভালো। সরকার থেকে বের হয়ে এলে সাধারণ মানুষ আমাদের সত্যিকারের বিরোধীদল মনে করবে। 
 
হাজী সাইফুদ্দিন আহমদ মিলন বৃহস্পতিবার রাজধানীর বংশালে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপকালে এসব কথা বলেন।
 
হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন রাজনীতির পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত।  তিনি প্রথমে মহানগর জাপা সাধারণ সম্পাদক, দলের কোষাধ্যক্ষ, যুগ্ম মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান এবং পরে সর্ব্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য হন। লেখক হিসেবেও আছে তার ব্যাপক পরিচিতি। ব্যাংকক থেকে চেংমাই, কয়েকটি প্রেমের গল্প, মোহামেডান-আবাহনী, সুন্দরের সন্ধানে, দেখে এলাম, সূর্যোদয়ের দেশ জাপান প্রভৃতি ১১টি বই লিখেছেন তিনি। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আমরা লালবাগবাসীর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি তিনি। এছাড়া তিনি ঢাকা রেক্সিন-প্লাস্টিক চামড়া বহুমুখী সমবায়ের সভাপতি, বাংলাদেশ রেক্সিন-প্লাস্টিক আমদানিকারক সমিতির সভাপতিসহ অনেক ব্যবসায়িক সংগঠন এবং সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই ছেলে দুই মেয়ের জনক।
 
 
বিবার্তা : দেশের বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন ?
 
হাজী মিলন : বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমার দৃষ্টিতে খুবই নাজুক। দেশের বড় দুটি দল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। দেশে এখন সুস্থ ধারার রাজনীতি বিলীন হতে চলেছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এখন রাজনীতিতে চলছে কি করে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দমন করতে পারে। তাদের দলাদলিতে দেশবাসী আজ পিষ্ট। রাজনীতিবিদদের মাঝে দেশপ্রেমের যথেষ্ট অভাব। 
 
বিবার্তা : দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
 
হাজী মিলন : দেশে একের পর এক মানুষ খুন হচ্ছে। রবিবার সকালেও খুন হলেন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। তার স্বামী বীরত্বের সাথে জঙ্গী দমনে ভূমিকা রেখেছেন। মিতু তো একজন সাধারণ গৃহবধু, তার কী অপরাধ? কোন অপরাধে তার দুটি নিষ্পাপ দুটি শিশু মাতৃহারা হলো ? সাধারণ জনগণের পাশাপাশি রেহাই পাচ্ছে না ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরাও। তুচ্ছ কারণে একজন আরেক জনকে খুন করছে। এই অবস্থার প্রতিকার দরকার। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আজ হুমকির মুখে।
 
বিবার্তা : জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলেন ?
 
হাজী মিলন : ১৪ মে জাতীয় পার্টির অষ্টম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। সেদিন জাতীয় পার্টি প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি বিশাল ফ্যাক্টর। ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকেই এই দলটিকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। একাধিকবার ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের নেতা এরশাদকে দুইবার জেলে থেকে নির্বাচন করতে হয়েছে। তাকে একবার নির্বাচনেও অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপরও জাতীয় পার্টি শক্তিশালী দল হিসেবে টিকে আছে। অন্য কোনো দলের বিরুদ্ধে যদি ধারাবাহিকভাবে এরকম অত্যাচার ও ষড়যন্ত্র চলতো তাহলে সে দলের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যেত না। 
 
সুশীল সমাজ এবং যারা এরশাদের রাজনীতিকে পছন্দ করে না তারাও একবাক্যে স্বীকার করে এরশাদের শাসনামলে এ দেশে যত উন্নয়ন হয়েছে স্বাধীনতার পর তা আর কোনো সরকার করতে পারেনি।
 
বিবার্তা : সরকার থেকে জাপার মন্ত্রীরা কবে পদত্যাগ করবেন ?
 
হাজী মিলন : জাপার মন্ত্রীরা সরকার থেকে পদত্যাগ করলে দল ও দেশের জন্য ভালো। সরকার থেকে এই মন্ত্রীরা বের হয়ে এলে সাধারণ মানুষ আমাদের সত্যিকারের বিরোধীদল মনে করবে। যতদিন পর্যন্ত আমরা সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে বের হতে পারব না ততদিন জনগণ আমাদের বিরোধীদল হিসেবে গণ্য করবে না। 
 
বিবার্তা : জাতীয় পার্টিকে অনেকে গৃহপালিত বিরোধীদল বলে... 
 
হাজী মিলন : গুটিকয়েক লোকের জন্য এই সমস্যা। মন্ত্রীসভা থেকে বের হয়ে এলে সাধারণ মানুষ জাপা সম্পর্কে এ ধারণা থেকে বের হয়ে আসবে।
 
বিবার্তা : দীর্ঘ মান-অভিমানের পর এক মঞ্চে এলেন এরশাদ-রওশন। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আপনার মনে হয়?
 
হাজী মিলন : আমি বিশ্বাস করি, থাকবে। তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে মান-অভিমান থাকলেও দলের প্রয়োজনে তারা সবসময় এক থাকতেন। তবে চলার পথে তাদের ভেতর কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিরোধ সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে এই সুযোগ আর কেউ পাবে না।
 
বিবার্তা : সাম্প্রতিক সময়ে দলের এমপি সেলিম ওসমানের একটি কাজ সারাদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়। দল এ বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে?
 
হাজী মিলন : দলের চেয়ারম্যান সার্বিক বিষয়ে অবহিত হয়েছেন। সেদিনের ভিডিওচিত্র আমরা দেখেছি। পাশাপাশি এলাকাবাসীও সাক্ষ্য দিয়েছে, যাতে স্পষ্ট যে, সেলিম ওসমান পরিস্থিতির শিকার। তারপরও তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর জাতীয় পার্টি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
 
বিবার্তা : নির্দিষ্ট সময়ের আগে সরকার নির্বাচন দেবে বলে আপনি মনে করেন? আপনি মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করেন কিনা?
 
হাজী মিলন : প্রথমত, আমার ব্যক্তিগত ধারণা সরকার ছয় মাস আগে নির্বাচন দিতে পারে। যথাসময়ে নির্বাচন দিলে শেষ মুহূর্তে বিএনপি আন্দোলনে যেতে পারে। আমার বিশ্বাস, সরকার সে সুযোগ না দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নির্বাচন ঘোষণা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, আমি মধ্যবর্তী নির্বাচন সমর্থন করি না।
 
বিবার্তা : রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে বর্তমান সরকার ‘স্বল্প গণতন্ত্র ব্যাপক উন্নয়ন’ এই ফর্মূলায় দেশ পরিচালিত করছে। আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
 
হাজী মিলন : অতীতে দেখা গেছে গাদ্দাফি, সাদ্দাম হোসেন দেশের জনগণের জন্য ব্যাপক উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। শুধুমাত্র গণতন্ত্র না থাকার কারণে তাদের পতন হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের জনগণ গণতন্ত্রের প্রতি বেশি আস্থাশীল। 
 
বর্তমান সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করছে তা অস্বীকার করার কিছু নেই। উন্নয়নই যদি সব হতো তাহলে আমাদের নেতা এরশাদ আরো ৫০ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতেন। আমি আশা করি, বর্তমান সরকার চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপশি জনগণের বাক ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। 
 
বিবার্তা : বিএনপি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি ?
 
হাজী মিলন : বিএনপি বাস্তব অর্থে বড় একটি রাজনৈতিক দল। কিন্তু এখন রাজনীতির মাঠে রাজনৈতিক কৌশলে সরকারী দলের কাছে তারা পরাজিত হয়েছে। তবে যেহেতু তাদের জনসমর্থন আছে তাই যে কোনো মুহূর্তে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
 
 
বিবার্তা : আপনি তো ডিসিসিতে মেয়র প্রার্থী ছিলেন। বর্তমান মেয়র সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
 
হাজী মিলন : বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেয়ার এক বছর অতিবাহিত হলেও রাস্তা বা মহল্লায় উন্নয়ন চোখে পড়েনি। রাস্তায় যেন মানুষ আবর্জনা না ফেলে সে জন্য নগরীর বিভিন্ন স্থানে ডাষ্টবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না। রাস্তায় সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে নতুন করে লোহা দিয়ে ডিভাইডার বানানো হচ্ছে। সে তুলনায় ফুট ওভারব্রীজ তৈরী হয়নি। এসব কারণে সাধারণ মানুষকে অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে রাস্তা পার হতে হয়। অকার্যকর ড্রেনেজব্যবস্থা এবং যত্রতত্র আবর্জনার স্তুপে নগরবাসী আজ  অতিষ্ঠ। রাস্তার বেহাল অবস্থা। 
 
বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন সাহেবকে নগরের উন্নয়নের জন্য সরকার ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, এই অর্থ দিয়ে রাস্তাঘাটের যেমন ব্যাপক উন্নয়ন হবে পাশাপাশি নগরবাসীর চিকিৎসাসেবার জন্য কমিউনিটি হাসপাতাল,পথশিশুদের জন্য কমিউনিটি স্কুল তৈরী করে নগরের সমস্যা সমাধানে সিটি কর্পোরেশন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। তবে আমি মনে করি, সাঈদ খোকন যেভাবে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাতে উন্নয়ন কর্মকা- দ্রুত বাস্তবায়িত হবে । নগরের দীর্ঘদিনের সমস্যাও তিনি অচিরেই সমাধান করতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
 
বিবার্তা/বিপ্লব/মৌসুমী
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com