প্রতিদান

প্রতিদান
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০১৬, ২২:১৬:৩৫
প্রতিদান
রাজু আহমেদ
প্রিন্ট অ-অ+
সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় একটা আধা ময়লা পাতলা কাঁথা আর নতুন কভার লাগানো তেল চিটচিটে বালিশে শুয়ে ধীরে ধীরে হাতপাখা নেড়ে চলেছেন কামাল উদ্দিন। পেটের ব্যথায় ভুগছেন বেশ ক’দিন, এতদিন টুকটাক ওষুধ খেয়েছেন কিন্তু ব্যথাটা ক্রমশ বেড়েই চলছিল। ছেলেদের বলেননি, এমনিতেই ছেলেদের অবস্থা ভাল না, তারপর আবার রোগের কথা বললে হয়তো অনর্থক কিছু টাকা খরচ হবে। কিন্তু সেদিনের ব্যথাটা খুব তীব্র ছিল, আর সহ্য করতে পারছিলেন না, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। বড় ছেলেটা তাই হাসাপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করিয়েছে। রুমে কোনো সিট খালি ছিলনা তাই বারান্দাতেই রাখতে হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন আজই একটা সিট খালি হবে, সন্ধ্যায় সেখানে নিয়ে যেতে। 
 
ডাক্তার কিছু টেস্ট করাতে দিয়েছিল সেগুলোরই রিপোর্ট হাতে নিয়ে বসে আছে কামাল উদ্দিনের ছোট ছেলে রাজীব। কামাল উদ্দিনের এ্যাপেনডিক্স হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন অপারেশন করাতে হবে, হাজার তিনেক এর মতো টাকা  খরচ হবে। কামাল উদ্দিনের তিন ছেলেমেয়ে, দুই ছেলে এক মেয়ে, বড় ছেলেটাকে মেট্রিক পাশ করিয়েছেন, তারপর টাকা পয়সার কারণে আর পড়াশোনা করানো হয়নি। মেয়েটার বিয়ে দিয়েছেন মেট্রিক পাশ করিয়েই, আর ছোট ছেলে নিজেই টিউশনি করে অনার্স শেষ করেছে এবছর, চাকরিরও চেষ্টা করছে। বড় ছেলে কাশেমের বিয়ে দিয়েছেন বছর খানিক, ছোটখাটো একটা মুদি দোকান আছে ওর, এই দিয়ে ওর সংসার চলে। আবার তিনিও বসে বসে ওর সংসারে খাচ্ছেন, এইটা সবসময়ই তার কাছে পীড়া দেয়। 
 
কামাল উদ্দিনের স্ত্রী মারা গেছেন প্রায় তিন বছর, তারপর থেকে ছেলের সংসারে একাই আছেন তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একটা মানুষের কথা খুবই ভাবেন কামাল উদ্দিন। তার শৈশব থেকে প্রথম যৌবনের প্রতিটা পরতে পরতে মিশে আছে সেই মানুষটার স্মৃতি। মরার আগে একটাই ইচ্ছে সেই মানুষটার সাথে যেনো একবার দেখা হয় কামাল উদ্দিনের। সেই মানুষটা আর কেউ নয় তার প্রিয় বন্ধু রাশেদ। 
 
যেই রাশেদকে ছাড়া কখনো ত্রিশ মিনিটও থাকতে পারতেন না সেই রাশেদকে ছেড়ে আজ ত্রিশ বছর তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন। রাশেদ সেই যে লন্ডনে গেল, প্রথম অবস্থায় বছর খানিক মাঝে মাঝে চিঠিপত্র লেনদেন হতো। এরপর আস্তে আস্তে কমতে কমতে ত্রিশ বছর কোনো যোগাযোগ নেই। রাশেদ কি জানে কতটা ভালবাসা ওর জন্য এই বুকে জমা করে রেখেছেন তিনি। ও হয় তো কোনদিন জানতেও পারবে না। মনে মনে এসব কথা ভেবেই চলেন কামাল উদ্দিন। সময় কখন, কিভাবে, কাকে, কোথায় নিয়ে এসে দাঁড় করায় আমরা বুঝতেও পারি না। হয় তো সব ঘড়ি নামক কাটার হিসাব। আবার এমনও হতে পারে যে সব নিয়তির খেলা। 
 
দেখতে দেখতে সময় আজ  কামাল ওরফে কামাল উদ্দিনকে বার্ধক্যে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়েছে। সময়ের এই হিসাব গুলো কিছুতেই মেলাতে পারেন না কামাল উদ্দিন। রাশেদের জীবনের সবকিছু আজ  এলোমেলো হতে চলেছে। জীবনের সব স্বপ্ন গুলো যেনো এক নিমিষেই ভেঙে যেতে বসেছে ওর। মেট্রিক পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করার শেষ দিন আগামীকাল, অথচ টাকাটা জোগাড় হয়নি। রাশেদের বাবা বেঁচে থাকলে হয় তো এমন দিন আসতো না, কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর সবকিছু যেনো এলোমেলো হয়ে গেল ওর। রাশেদের মা দর্জির কাজ করে কোনো রকমে সংসারটা চালান। কিন্তু রাশেদের পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকাটা জোগাড় করতে পারেননি তিনি। ছেলেকে সান্ত্বনা দিলেন পরের বার পরীক্ষা দেবার জন্য। এরপর তিনি ঠিকই টাকা জোগাড় করে দিবেন। কিন্তু রাশেদ কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারছে না। ঘরে শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। 
বিকেল বেলা রাশেদের বন্ধু কামাল এলো ওদের বাড়িতে। ওর ঘরে গিয়ে দেখল রাশেদ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ‘কিরে রাশেদ কি হয়েছে কাঁনছিস ক্যান তুই? কি হয়েছে?’ কোনো কথাই বলল না রাশেদ। এরপর কামাল রাশেদের মায়ের কাছে গিয়ে জানতে চাইলো, ‘খালা কি হয়েছে রাশেদের---কাঁনছে ক্যান ও?’ রাশেদের মাকে খালা বলে ডাকে কামাল, তিনি একবার তাকালেন কামালের দিকে। এরপর বললেন, ওরে একটু বুঝাও তো বাপ, ও যেনো আর কান্নাকাটি না করে, এবার পরীক্ষা দিতি পাচ্ছেনা তো কি হয়েছে আগামী বার দেবে--এবারের বছর আবার ভাল করে পড়াশুনা কইল্লো। কত ছেলেমেয়েই তো এবার পরীক্ষা দিতি পাচ্ছেনা।’ কথাটা শুনে কষ্টে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল কামালের সে আর দাঁড়াল না, সাইকেলটা নিয়ে চলে গেল। 
 
পরদিন সকালে রাশেদদের বাড়িতে আবার আসলো কামাল, ‘খালা, রাশেদ কই?’ ‘ঘরেই আছে’ জবাব দিলেন রাশেদের মা। ‘খালা এই নেন, এখানে আড়াই হাজার টাকা আছে, এখান থেকে রাশেদের ফরম ফিলাপের টাকা আর ওর জন্যি নতুন জামা প্যান্ট আর জুতা কিনে দিয়েন।’ রাশেদের মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন কামালের দিকে, ‘বাবা তুমি এতো টাকা কনতে পাইলে?’ ‘খালা সেটা আপনার না জানলিও চলবে, আপনি শুধু আমাদের জন্যি দুআ করবেন, যেনো আমরা ভাল রেজাল্ট করতি পারি।’ ‘না না তবু আমার জানতি হবে, তুমি বলো তুমারে টাকা দিয়েছে কিডা?’ ‘ওহ খালা! ঠিক আছে বলছি, তবে কামালকে যেনো বলবেন না, আমি আমার সাইকেলটা বিক্রি করে দিছি, আর বাড়িতে বলিছি সাইকেল চুরি হয়ে গিয়েছে, বুঝেচেন এবার, আর শোনেন খালা অন্য কারও কাছেও কওয়ার দরকার নেই। আমি আসছি তালি, আর যা বললাম তা কইরেন।’ রাশেদের মা আর কিছু বলতে পারলেন না, তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে ততক্ষণে, ঝাপসা দৃষ্টিতে তিনি কামালের চলে যাবার পথের দিকে চেয়ে রইলেন। 
 
সময় এগিয়ে চলে তার নিজস্ব গতিতে, সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়। আগের মত কিছুই থাকে না আর। পাল্টে যায় দৃশ্যপট। জীবনের একটা প্রান্তে এসে মানুষ তীব্রভাবে অনুভব করে পেছনের সময়গুলিকে। সময় ফিরে আসে না আর, ফিরে আসে বাস্তবতা, বার বার সেই বাস্তবতার দেয়ালে ধাক্কা খায় মানুষ। প্রায় ত্রিশ বছরের বেশি সময় পরে দেশে ফিরেছেন রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ, একেবারে স্বপরিবারে দেশে এসেছেন তিনি। ওখানেই বিয়ে করেছিলেন। বর্তমানে তার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় ছেলে আর বড় মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন লন্ডনে। ছোট মেয়েটাকে বিয়ে দেননি। সে এখনো পড়াশোনা করছে। বাড়িতে আসার আগে বিশাল এক বাড়িও বানিয়েছেন রাশেদ সাহেব, সেই বাড়িতেই উঠেছেন পরিবার নিয়ে। বাড়িতে আসার পরদিন, রাশেদের চাচা ওর মায়ের রেখে যাওয়া ছোট্ট জংধরা একটা ট্রাঙ্ক রাশেদ সাহেবকে বুঝিয়ে দিলেন। রাশেদ যাওয়ার বছর খানেক পরেই ওর মা মারা যায় সেজন্যই এতদিন দেশে আসেননি তিনি। রাশেদ ট্রাঙ্ক খুলে মায়ের রেখে যাওয়া জিনিসগুলো দেখছিল। জমির কিছু দলিল, বাবার সেই আমলের একটা ঘড়ি, পাঞ্জাবী আর মায়ের দুইটা শাড়ি একটা গায়ের চাদর। হঠাৎ এগুলোর মধ্যেই একটা খামের দিকে নজর গেল রাশেদ সাহেবের। খাম খুলে চিঠিটা বের করলেন রাশেদ সাহেব। চিঠিটা প্রায় খামের সাথে লেগে গেছে, খুব সাবধানে বের করলেন চিঠিটা। শক্ত হয়ে গেছে কাগজ খানা, লেখা গুলো প্রায় মুছেই গেছে। ক্লাশ এইট পর্যন্ত পড়েছিলেন রাশেদের মা। গোটা গোটা হরফে দু পৃষ্ঠা জুড়ে লিখেছেন চিঠি। 
 
বাবা রাশেদ, ভালবাসা নিও ‘জানিনা বেঁচে থাকাকালীন আর তুমার সাথে দেখা হবে কিনা। দুআ করি তুমি অনেক বড় হও বাবা। তুমারে কিছু কথা বলা দরকার তাই এই চিঠিটা লিখা। আর এই কথা গুলো তুমারে জানাতি না পারলি হয়তো পরকালে আল্লাহর কাছে জবাব দিতি পারবো না। বাবা রাশেদ তুমার জন্যি আমি তেমন কিছুই করতি পারিনি। আজকে তুমি যেখানে আছো তার সব তুমার বন্ধু কামালের জন্যিই হয়েছে। কামাল ওর প্রিয় সাইকেল বিক্রি করেছিল তোমার মেট্রিক পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্যি। তারপর তোমার পড়াশোনার জন্যি বই, খাতা, কলম সব ওই কিনে দিত। এমনকি তুমি যখন সুযুগ পেয়েও আমেরিকা যেতে পাচ্ছিলে না তখনও ওর ভাগের জমি বিক্রি করে ও তুমারে টাকা দিয়েছিল। তুমার কুনো আপনজন তুমারে সাহায্য করেনি। বাবা রাশেদ, অনেক ভাগ্যের জোর থাকলি এমন বন্ধু পাওয়া যায়। বন্ধুর ঋণ কুনোদিন শোধ হয় না বাবা। তবু তুমার যদি কুনোদিন সুযুগ হয় তবে নিজের ঋণের বুঝাটা কিছুটা হলিও হাল্কা করে নিও বাবা।’ ভাল থেকো বাবা ইতি তোমার মা। 
 
রাশেদের চোখের পানিতে অনেকদিনের পড়ে থাকা চিঠিটাও যেন কথা বলে উঠলো, ‘রাশেদ আর বসে থেকো না, যাও তোমার বন্ধুর খোঁজ নাও। যাও রাশেদ যাও।’ রাশেদ আর দেরি না করে উঠেই গাড়ি নিয়ে বের হলো, সব চেনা পথগুলো কেমন যেন অচেনা লাগছে। সকালবেলা দোকানে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল কামাল উদ্দিনের বড় ছেলে কাশেম উদ্দিন, এমন সময় বাড়ির সামনে গাড়ির হর্ন শুনতে পেল। সে এগিয়ে গেল, দেখল শান্ত সৌম্য বয়স্ক এক ভদ্রলোক ওদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। কাশেম প্রশ্ন করল, ‘কারে চাচ্ছেন?’ রাশেদ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল কাশেমের দিকে, নিশ্চয় এইটা কামালের ছেলে একেবারে বাবার চেহারা পেয়েছে। ‘তুমি কামালের ছেলে?’ ‘হ্যা, কিন্তু আপনারে তো চিনলাম না।’ কিছু না বলেই কাশেমকে জড়িয়ে ধরলেন রাশেদ সাহেব। এমন ঘটনায় কিছুটা হকচকিয়ে গেল কাশেম। কিছুক্ষণ পর কাশেমকে ছেড়ে কাঁধ ধরে ওকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বললেল আরে আমি তোমার রাশেদ চাচা। চিনতে পারছো না? তোমার আব্বার বন্ধু।’ কাশেম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল ওনার দিকে এরপর বলল, চাচা আপনার কথা তো অনেক শুনেছি আব্বার কাছে, আব্বা সবসময় আপনার কথা বলতেন।’ ‘আসেন চাচা ভেতরে আসেন’ ‘তোমার আব্বা কোথায়? আমি আগে ওর সাথে দেখা করব, ছেলেদের সামনেই আজকে মারবো ওকে আমি, তখন বুঝবে বন্ধুর সাথে এমন করার মজাটা কেমন।’ ‘আব্বাকে দেখবেন চাচা? ঠিক আছে আসেন আমার সাথে।’ 
 
কাশেমের পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকলেন রাশেদ সাহেব। এরপর কাশেম ওনাকে ওদের বাড়ির পাশেই গ্রামের কবরস্থানে নিয়ে এসে হাত উঁচিয়ে নতুন কবরটা দেখিয়ে বলল, ‘চাচা ওই যে নতুন কবরটা দেখতে পাচ্ছেন ওখানেই আপনার বন্ধু ঘুমাচ্ছে।’ বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো রাশেদের, কাশেমের দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন, এরপর ধীরে ধীরে কবরের কাছে এগিয়ে গেলেন রাশেদ সাহেব, তারপর কবর জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর কান্না জড়িত কণ্ঠে বলতে থাকলেন, ‘কামাল দেখ আমি তোর কাছে ফিরে এসেছি, আমাকে জড়িয়ে ধরবি না? তোকে জড়িয়ে ধরার শেষ সুযোগ টুকুও দিলি না বন্ধু। তোর পাশে দাঁড়াবার একটু সুযোগও দিলি না আমাকে। তোর এই প্রতিদান আমি কিভাবে দেব বল কামাল। ভালবাসা কি এমনিরে বন্ধু, তুই আমাকে এত ভালবাসলি অথচ আমি তা বুঝতেও পারলাম না। তোর এই ভালবাসার ঋণ আমি কিভাবে শোধ করব বন্ধু? তুই আমাকে এভাবে একা রেখে চলে গেলি। তোর ভালবাসা মিথ্যা ছিল, না হলে তুই আমাকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারতি না বন্ধু। বন্ধুরে কতদিন তোর সেই কথাটা শুনি না, ‘‘আরে চিন্তা করিস না কোন ব্যাপার না সব ঠিক হয়ে যাবে’’।’ 
 
কাশেম ও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না, দুরে দাঁড়িয়ে সেও কাঁদতে থাকলো। বাড়ি এসে কাশেমের কাছে সবকিছু শুনলেন রাশেদ সাহেব। কামাল উদ্দিন কিভাবে মারা গেলেন, তারপর ওরা ক’ভাইবোন, কে কি করছে এসব। ‘আব্বার এ্যাপেনডিক্স হয়েছিল, অপারেশন করিয়েছিলাম। প্রায় সুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কিভাবে যেন নাড়িতে ঘা হয়ে গিয়েছিল, আমাদেরকে বলেননি আবার টাকা খরচ হবে তাই। এরপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেও আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’ সবকিছু শুনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন রাশেদ সাহেব। কাশেম আবার বলতে শুরু করল, ‘আব্বা আপনার কথা প্রায় বলতেন আমাদের। মৃত্যুর আগে শেষ কয়টাদিন আব্বা শুধু আপনাকেই দেখতে চাচ্ছিলেন। আমাকে প্রায় প্রতিদিনই পাঠাতেন আপনার খোঁজ নিতে।’ 
 
পরদিন আবার কামাল উদ্দিনের কবরের কাছে গেলেন রাশেদ সাহেব। কবরস্থানে দাঁড়িয়ে বন্ধুর জন্য মোনাজাত করছেন। বন্ধুর জন্য অনেক্ষণ দোয়া করলেন তিনি। এরপর কান্নাজড়িত কন্ঠে বিড়বিড় করতে লাগলেন ‘বন্ধু আমি জানি না ত্রিশটা বছর আমাকে ছেড়ে থাকতে তোর কতটা কষ্ট হয়েছে। তুই আমার জন্য যা করেছিস তার প্রতিদান আমি কোনদিন দিতে পারব না। আমি তোর মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি বন্ধু, তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস। তুই দেখিস বন্ধু তোর ছেলেমেয়েদের আমি কষ্টে রাখব না। আজ  থেকে ওরা আমার ছেলেমেয়ে। দেখিস তুই তোর ছেলেমেয়ে সবাইকে আমি সুখে রাখব। ওদের জীবনে আর কোনোরকম দুঃখ কষ্ট আসতে দেব না। আর তোর ছোট ছেলের সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেব। তুই দেখিস ওদের বাবার অভাবটাও আমি মুছে দেব বন্ধু।’ 
 
এরপর কবরস্থান থেকে উঠে রাস্তায় উঠলেন রাশেদ সাহেব। বন্ধুর ভালবাসার প্রতিদান কিছুটা হলেও দেবার জন্য বাড়ির পথে যেতে থাকলেন তিনি।
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com