অজানা আতঙ্কে হাবুডু খাচ্ছে মেয়েটি। রীতিমতো কাঁপছে। ব্যাপারটি তলিয়ে দেখতে সে একটা দোকানের সামনে দাঁড়ালো। গাড়িটি এখনো তাকে অনুসরণ করছে নাকি অন্য কোনো কারণে গতি কমিয়ে এনেছে।
না, গাড়টি ধীর গতিতে এগিয়ে এসে দোকানের সামনেই থেমেছে। ভাবছে, যদি লিফ্ট দেওয়ার প্রস্তাব দেয় হাতলে সে কি করবে? সিদ্ধান্ত নিল বিনয়ের সাথে অফার ফিরিয়ে দেবে।
এলাকাটি তার চেনা। গাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে রূপালি ফ্লাগ দেখে বুঝতে পারলো এটা কোনো সামরিক অফিসারের গাড়ি। কয়েক দিন আগেই সে এ জাতীয় একটি গাড়ির দাম জিজ্ঞেস করেছিল। এ মডেলের গাড়ি তার ভীষণ পছন্দের। অর্থপূর্ণ হাসি বিনিময়ের পর মেয়েটি আবার হাঁটতে শুরু করলো।
নগরে যাবার পথে রাস্তাটি কিছুটা ঢালু। গাড়িটি এখনো তাকে ধীরে ধীরে অনুসরণ করছে।
নগরকেন্দ্রে একটি মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। কনকনে শীতের মাঝে গাড়িটি সেই মূর্তিও পাদদেশে এসে থামলো। হঠাৎ বুঝতে পারলো ইঙ্গিত দেওয়া মোটেও টিক হয়নি। কারণ আর্মি অফিসারটি এখন বুঝতে পারবেন, সে কোন দিকে যাচ্ছে। এ জায়গাটি থেকে গতিবিধির ওপর নজর রাখা খুব সহজ।
সে একটি পরিচিত দোকানে ঢুকলো। ম্যানেজারের কথা বলে আবার মূর্তির পাশ ঘেঁষে নগরকেন্দ্রের রেলিংয়ের দিকে এগুচ্ছে।
মনে মনে ভাবছে অফিসারটি নিশ্চয় পথেই তাকে কিছু বলে ফেলবেন। পর মুহূর্তে মনে হল এ কাজটি মোটেও ঠিক হচ্ছে না। এতোটা সাহস দেখানো ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু তার ফেরার কোন লক্ষণ নেই।
কিন্তু পাশ দিয়ে গেলেও অফিসারটি গাড়ি থেকে নামেনি। সে শান্ত পায়ে হেঁটে নগরীর রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইল। এখান থেকে পুরো শহর দেখা যায়।
কিছুক্ষণ পর তার পাশেই অফিসারটির অস্তিত্ব টের পেল। আড় চোখে মেপে দেখে বুঝলো, বয়স তার চেয়ে বেশি হবে না। বরং কমই হবে। অফিসারটি নগরীর দৃশ্য দেখছে আনমনে। অথচ এভাবে দৃশ্য দেখার কোনো মানে হয় না একজন সামরিক অফিসারের পক্ষে।
মেয়েটি আবার অফিসারের দিকে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে রইল। সে ভাবলো চোখাচোখি হলেই লোকটি এগিয়ে এসে পরিচিত হতে চাইবেন। কিন্তু অফিসারটি যে মাথা এদিকে ঘোরাতেই ভুলে গেছে। নিজে যেচে প্রথমে কথা বলতে গেলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। এ অভিজ্ঞতা তার আছে। কিন্তু প্রতীক্ষার প্রহর যে শেষ হচ্ছে না। শেষে নিজের বোকামির দ- হিসেবে বলেই ফেললো, ‘দিনটি খুবই চমৎকার তাই না’?
বরফ অবশেষে গলেছে। অফিসারটি তার দিকে তাকিয়ে আস্থার সাথে বললেন, ‘হ্যাঁ চমৎকার।’
লোকটির কণ্ঠস্বর বেশ মোলায়েম। আবার নীরবতা।
‘আমি নিজ থেকে আর কথা বলবো না’ মেয়েটি সিদ্ধান্ত নিল। আমি মাত্র এক মিনিট অপেক্ষা করবো, তারপর চলে যাবো।
আসলে লজ্জা ঝেড়ে ফেলতে অফিসারটিরই সময় লাগছে। ইতস্তততা করে অফিসারটি প্রস্তাব দিল, ‘আমরা কি গাড়িতে গিয়ে বসতে পারি’? প্রস্তাব শুনে মেয়েটিরও ইচ্ছে হচ্ছে, এখনই দৌড়ে গিয়ে প্রিয় মডেলের গাড়ির ভেতরের øিগ্ধ উষ্ণতা প্রাণভরে উপভোগ করতে।
কিন্তু মুখে বলল, ‘কেন’?
‘এক সাথে সময় কটানোর জন্য’ অফিসারটি বন্ধুত্বসুলভ কণ্ঠে জবাব দিলেন।
‘কিন্তু আমরা কেন এক সাথে বসে আলাপ করতে যাবো’?
মেয়েটি এখন সেই ধরনের আচরণ করছে, যেমন করে একজন ভদ্রঘরের নারী রাস্তায় কোনো অপরিচিত লোকের উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রস্তাবকে অবান্তর প্রমাণ করে ভুলটি চোখে দেখিয়ে দেয়।
অফিসারের চোখে মুখে এখন অস্বস্তির কালো মেঘ।
‘স্রেফ কথা বলার জন্য’ অফিসারটি জবাব দিলেন। তারপর কৌশলে সাথে ধারে কাছের কোনো কফি হাউজে যাবার প্রস্তাব ছুঁড়লেন।
‘আমি কফি হাউজে কখনোই ঢুকি না।’
‘কেন ঢোকেন না’?
‘কারণটি পানির মত সহজ। কফি হাউজে যাবার অভ্যাস গড়ে তুলিনি।’
‘ওহ! ঠিক আছে তাহলে চলুন ড্রাইভে যাই।’
‘যাকে চিনি না তার সাথে ড্রাইভে যাবার অভ্যাসও আমার নেই।’
অস্বস্তিতে অফিসারটি নার্ভাস হয়ে গেছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে বললেন, ‘আমার নাম ব্রুস, গিলবার্ট ব্রুস। আপনার নাম’?
‘আমিতো আপনাকে আমার নাম বলবো না।’
আবার দুজনের মাঝে নীরবতা।
‘আমাকে আপনি বাজে ভাবে নিয়েছেন।’
অফিসারটি নিজের গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললেন, ‘আমি আসলে কেন আপনার সহযোগিতা চাইছি, তা আপনি জানেন না।’
‘আমি যথার্থই জানি। আমার সাথে কয়েক ঘণ্টা কৌতুক করার বিনিময়ে কিছু টাকা দিতে চান ওই তো’?
আবার অস্বস্তিতে কাচুমাচু করছে অফিসারটি।
‘আমি এটাও জানি’ মেয়েটি বলল, ‘কত টাকা আপনি আমাকে দেবেন? দু অথবা তিন হাজার টাকা? সম্ভবত চার চেয়েও বেশি। বলুন আমি ঠিক বলছি কিনা’?
অফিসারটি কৌতুকের সুরে বললেন, ‘আপনি দেখছি দরদাম ভালোই করতে পারেন।’
একটু পরেই বললেন, ‘আপনি আসলে যা ধারণা করছেন আমি সে পরিমাণ ব্যয়ের কথা ভাবছি না।’
‘তাহলে এক প্যাকেট সিগারেট আর কিছু খাদ্য অফার করবেন এইতো’?
হাসতে হাসতে মাথা নেড়ে অফিসারটি বললেন, ‘আমি ভুল করে ফেলেছি। আমাকে মাফ করবেন।
’
মেয়েটি বুঝতে পারলো, অফিসারটি এবার চলে যাবেন। তাই মরিয়া হয়ে বলল, ‘না আপনি ভুল করেননি।
‘বলেন কি! আমি ভুল করিনি’?
‘এটাই তো আমি বলেছি।’
‘তাহলে আমরা যাচ্ছি।’
‘অবশ্যই।’
তারা গাড়িতে উঠলো। অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায়’?
‘সোজা আমার বাড়িতে, আমি পথ দেখিয়ে নিয়ে যাব।’
গাড়ি চলতে শুরু করেছে।
মেয়েটি মনে মনে বলছে এতোটা বাড়াবাড়ি করা আদৌ ঠিক হয়নি।
অফিসারটি দক্ষতার সাথে নির্দেশনা মত মেয়েটির বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো। জায়গাটি বেশ অনুন্নত। স্বল্প আয়ের লোকজনের বসবাস। বেশ জনাকীর্ণ।
মেয়েটির বাড়ি ছোট। কিন্তু কৌলিন্যের ছোঁয়া তাতে স্পষ্ট।
‘আপনি চাইলেই আমাদের বাগানে গাড়িটি পার্ক করতে পারেন’ মেয়েটি বলল।
মেয়েটি হয়তো কোনো সাবেক বনেদী পরিবারের সদস্য। এখন অর্থাভাবে দিন কাটাচ্ছে। বাসায় মুরগিও লালন-পালন করে। রাখঢাক ছাড়াই বলল, ‘প্রথমে মুরগিগুলোকে খাবার দিতে হবে। আমার বাসায় চাকর-বাকর নেই।’
‘আপনি মুরগি পছন্দ করেন’?
‘সত্যি বলতে কি? মোটেও না।’
‘আমি করি। কারণ মুরগি ডিম দেয়। এ দুর্মূল্যের বাজারে ডিম আমার কাছে মহামূল্যবান।’
মেয়েটি বললো, আমি নিচ তলায় থাকি। দোতলায় অন্য লোকজন থাকেন।’
রুমের ভেতর তেমন কোনো দামি আসবাবপত্র নেই।
অফিসারটি ডিভানে বসলেন। মেয়েটিও পাশে এসে বসলো।
অফিসারটি তার হাত ধরলো, এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠলো। অবশ্য টেলিফোন সেটটি রুমের ভেতর নয়, বারান্দায়।
মেয়েটি উঠে গিয়ে টেলিফোন রিসিভ করলো। তার মায়ের টেলিফোন। গোসল সেরেছে কিনা তা জানতে চাইল।
মেয়েটি জানালো, তার রুমে একজন মেহমান রয়েছেন। গোসল করতে দেরি হবে। আর তার মেয়েটি যেন এখন রুমে এসে মেহমানকে ডিসটার্ব না করে। তার মা আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মেয়েটি লাইন কেটে দিল।
কথা বলতে বলতে বিকাল গড়ালো। এখনো কাজের কাজ কিছু হয়নি। মেয়েটিও সিদ্ধান্তহীনতায়। প্রথম বারে সে টাকা নেবে কিনা ভাবছে।
ঘরের ভেতরেও ঠাণ্ডা অথচ মেয়েটি পাতলা পুলওভার ও স্কার্ট পরে আছে। ওভারকোটটি খুলে রেখেছে।
মেয়েটি ভাবছে, অফিসারটি তার চেয়ে পাঁচ ছয় বছরের ছোট হবে। তা ছাড়া বিদেশী। এর আগে সে বিদেশী খদ্দের পায়নি।
ভাবছে, সুযোগ পেলে সে অফিসারকে বলবে, ‘একদিন তার সব ছিল। স্বামী ছিল। অনেক প্রেমিক ছিল। এখন ছোট্ট একটি মেয়ে আর মা ছাড়া কেউ নেই।’
কাছাকাছি বসে থাকার পরও অফিসারটি তাকে এখনো চুমো খায়নি।
বিয়ের আংটির দিকে তাকাতে তাকাতে অফিসারটি হঠাৎ বললেন, ‘তুমি কি বিবাহিত’?
‘হ্যাঁ বিবাহিত।’
‘তোমার স্বামী কোথায়’?
মেয়েটি ইতস্তত করছে। সত্য বলে দেওয়া ঠিক হবে কিনা ভাবছে। অনেক ভেবে সে বলল, ‘আমার স্বামী এখন বন্দি। সৈনিক ছিলেন। এখন আমি একাকী। টিকে থাকার মতো সম্পদ আমাদের ছিল না। একমাত্র স্বামীই টাকা কামাতেন।’ কথাটি এমনভাবে বলল যেন সত্যি বলছে। অথচ তার স্বামী আছে। প্রতি মাসেই টাকা পাঠায়। একটি গাড়ি কেনার টাকা জোগাড় করতেই সে এ পথ বেছে নিয়েছে।
‘তুমি কি বিয়ে করেছ’? মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো। আলাপের উত্তাপে তারা আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে।
অফিসারটি বলল, ‘এনগেজমেন্ট হয়েছে।’ এটা বলে পকেট থেকে মানিব্যাগ খুলে বাগদত্তা স্ত্রীর ছবি দেখালো। সাধারণ মাপের মেয়ে। সুন্দরীও নয় বাজেও নয়। গাছে হেলান দিয়ে একটি সাইকেল ধরে রেখেছে।
তারপরও মেয়েটি বলল, ‘বাহ! চমৎকার মেয়ে।’
‘হ্যাঁ, সত্যি সে চমৎকার।’ অফিসার মানিব্যাগে ছবিটি তুলে রাখতে রাখতে বলল।
‘মাত্র এক ঘণ্টা কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। তারপরও মনে হয় আমরা একে অন্যকে যুগ যুগ ধরে চিনি।’
মেয়েটি বলল, ‘তাই নাকি’?
সন্ধা ঘনিয়ে আসার পরই ইংলিশ অফিসারটি সক্রিয় হলেন। মেয়েটিকে চুমোয় চুমোয় অস্থির করে তুললেন। এখন দুজনের উত্তেজনা চরমে। হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো।
‘সরি’ বলেই মেয়েটি দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজা কিছু ফাঁক করার পর দেখলো তার শিশু মেয়েটি আগ্রহের সাথে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘আমিতো তোমার নানীমাকে বলে দিয়েছি তোমাকে এখানে না পাঠাতে। কারণ আমার একজন মেহমান রয়েছেন।’
‘নানীমা জানতে চেয়েছেন, রাতের খাবার তুমি বাসায় খাবে কিনা’?
‘হ্যাঁ, বাসায় খাবো। এখন চলে যাও লক্ষীটি। আর আসতে হবে না। আমি কাজ সেরেই উপরে আসছি।’
‘ঠিক আছে আম্মি।’
শিশুটি চলে গেল। সিঁড়ি দিয়ে তার উপরে ওঠার আওয়াজ এখনো কানে আসছে। এতোটুকুন শিশুর জন্য সিঁড়ির ধাপগুলি উঁচুই বলতে হবে। এক সময় আওয়াজ মিলিয়ে গেল।
বিরক্ত মেয়েটি এবার তার মেহমানকে বেডরুমে টেনে নিয়ে গেল। বিছানাটি স্যাঁতস্যাতে। ধুলোও জমেছে। গন্ধ শুঁকে বোঝা যায়, রুমটি সব সময় ব্যবহৃত হয় না।
দরজা বন্ধ করে দেয়ার পর ইংলিশ অফিসারটি তাকে বেপরোয়াভাবে জড়িয়ে ধরে এতোটা আগ্রাসী হয়ে উঠলো যে তারা দুজনই টাল সামলাতে না পেরে বিছনার উপর পড়ে গেল।
মেয়েটি কোনো মতে ডান হাত মুক্ত করে টেবিল ল্যাম্প জ্বালালো। হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠায় অফিসারটি হকচকিয়ে তাকে ছেড়ে দিল। পর মুহূর্তে নিজের ভুল ধরতে পেরে কষ্ট করে হাসলো।
মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আপনি আমার ব্যাপারে আসলে কি ভাবছেন’? প্রসঙ্গ ছাড়া এ জাতীয় উটকো প্রশ্ন করার জন্য সে মনে মনে অনুতপ্তও হলো।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর অফিসারটি মৃদু হেসে বললেন, ‘আমার মনে হয় তুমি খুবই সুন্দরী।’
‘ধন্যবাদ! আপনি খুবই মেহেরবান’ মেয়েটি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘যাই জানালাটি লাগিয়ে দিয়ে আসি।’
জানালা বন্ধ করতে করতে মেয়েটি মনে মনে ভাবলো, ‘আমি এখনই তাকে কাপড়চোপড় খুলতে বলবো। সে কি পেয়েছে? আসল কাজ না সেরে খুচরো আলাপে মগ্ন হয়ে গেছে। আমি কি তার ঘরের বউ নাকি’? অফিসারটির অনভিজ্ঞতায় সে যারপরনাই ক্ষুব্ধ। কিন্তু টাকার লোভে সব সহ্য করে যাচ্ছে।
অফিসারটি ধীরে ধীরে তার সব কাপড় লোপাট করলো।
তার প্রথম আলিঙ্গনে ভীরুতাই ফুটে উঠলো। অন্তত মেয়েটির এটাই মনে হলো।
মেয়েটিকে কাপড়চোপড় খুলতে দেখে অফিসারটি বিছানায় বসেই এবাউট টার্ন হয়ে রইলেন। তার লজ্জার বহর দেখে মেয়েটি হাসলেও বিরক্ত না হয়ে পারছে না।
কাছে এসে মেয়েটি বললো, ‘দয়া করে এদিকে তাকান। চেয়ে দেখুন আমি আপনার জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছি।’
অফিসারের লজ্জা আর হাস্যকর আনাড়িপনায় বিরক্ত হলেও মেয়েটি টেবিল ল্যাম্প নিবিয়ে চাদরের নিচে ঢুকলো।
রাত নামলো। এক সময় মেয়েটি খেয়াল করলো অফিসারটি তার সামরিক পোশাক পরে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
মেয়েটির দিকে চোখ পড়তে হাসিমুখেই বললেন, ‘আমি রুমের বাইরে অপেক্ষা করছি। তুমি কাপড় পরে তৈরি হয়ে নাও।’
অফিসার বেডরুম ছেড়ে চলে যাবার পরও মেয়েটি বিছানা ছেড়ে উঠেনি। নানা ধরনের হিসেব-নিকেশ তার মাথায় গিজগিজ করছে।
হঠাৎ তার আশঙ্কা হলো, অফিসারটি টাকা না দিয়েই ভেগে যেতে পারে।
পড়িমড়ি করে সে জামাকাপড় পড়ে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। আয়নায় নিজের চোখের দিকে তাকাতে মনে হলো ওই দুটি চোখে এক রাজ্যের লোভ, রাগ আর সন্দেহের ছায়া।
মাথার এলোমেলো চুলগুলো সে একটু পরিপাটি করে নিচ্ছে। হঠাৎ আয়নার ভেতরই সে দেখলো বেডলাইট টেবিলের ওপর এক তাড়া নোট। দ্রুত গুণে দেখলো। না অফিসারটি বেশ দয়ালু। প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, টাকাটা দেওয়ার মাঝেও তিনি শালীনতা বজায় রেখেছেন।
ডাইনিং রুমেই অফিসারকে পাওয়া গেল। লাইট জ্বালিয়ে তিনি নিচু ডিভানে বসে আছেন।
‘একটু ড্রিংকসের আয়োজন করছি। আরেকটু বসুন’ - মেয়েটি বেশ হাসিমুখেই অফার দিলো।
দুজনই পরিতৃপ্তির সাথে গ্লাসে চুমুক দিলো।
মেয়েটি মুখ ফুটে কিছু না বললেও সে এখন প্রাণপণে কামনা করছে, অফিসারটি যেন মাঝে মাঝে তার অতিথি হন। ইচ্ছে করলে এ সহৃদয় অফিসারের সাথে সে বাইরেও রাত কাটাতে পারবে।
‘আজকের রাতটি এখানেই কাটিয়ে যান। আমি নিজ হাতে আপনার জন্য রাতের খাবার তৈরি করবো। স্প্যাগেটি বানাবো। আপনি নিশ্চয়ই স্প্যাগেটি পছন্দ করেন’ মেয়েটির চোখে মুখে অনুনয় ঝরে পড়ে।
অফিসার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসিমুখেই বললেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই আমি স্প্যাগেটি পছন্দ করি। কিন্তু সামরিক আইন ভাঙার সাধ্য আর ইচ্ছা আমার নেই। আজ রাতের মধ্যে আমাকে ব্যারাকে ফিরতে হবে।’
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর বেশ দরদী কণ্ঠেই বললেন, ‘আমি আর আসবো না। আমার কথা চিরতরে ভুলে যাও। আগামীকাল অন্য একজন অফিসার তোমার কাছে আসবেন। তোমার দিকে খেয়াল রাখার জন্য তাকে আমি অনুরোধ জানাবো।’
কি জবাব দেবে মেয়েটি বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে, দয়ালু অফিসার তার গাড়ি কেনার স্বপ্নটি বোধ হয় বাস্তব বানানোর রাস্তা খুলে দিয়ে যাচ্ছেন।
মেয়েটি নিজ হাতে বাড়ির সদর দরজা খুলে দেওয়ার পর ইংলিশ অফিসার গাড়ি চালিয়ে রাতের আঁধারে মিলিয়ে গেলেন।
সদর দরজা বন্ধ করে সে অনেকটা অবসন্ন মনে ঘরে ঢুকছে।
এখন সব কিছু ভুলে যাওয়া স্বপ্নের মতো ঠেকছে। কিন্তু এটা তার কাছে বেশ পরিষ্কার হয়ে গেল, ‘মর্যাদা বিকিয়ে দিতে জানলে কোনো কোনো সময় মেয়েদের পক্ষে টাকা কামানো সহজ হয়ে যেতে পারে।’
বিবার্তা/জিয়া