নজরুল চরিত মানস

নজরুল চরিত মানস
প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৬, ১০:১৯:৫২
নজরুল চরিত মানস
হাবিবুর রহমান স্বপন
প্রিন্ট অ-অ+
‘আমি বেদুইন
আমি চেঙ্গিশ
আমি আপনারে ছাড়া
করি না কাহারে কুর্নিশ।’
 
কাজী নজরুল ইসলাম এই ‘আমি’কে খুঁজে পেয়েছিলেন অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে। তাঁর এই ‘আমি’ ঘোষণা কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত দম্ভের পরিচয় নয়। Huminity is invincible। তিনি বলেছেন, ‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না/ অত্যাচারীর কড়্গ কৃপাণ ভীমরণভূমে রণিবে না/ বিদ্রোহী রণক্লান্ত/ আমি সেইদিন হব শান্ত।’ সেই আঘাত হেনেই মানুষের ঘুম ভাঙিয়েছেন বিরল শিল্পী নজরুল। 
 
ব্যক্তিজীবনে কবির হৃদয় ছিল মাটির রসে সিক্ত আর মানুষের ঘামের গন্ধ ছিল তাঁর নিশ্বাস-প্রশ্বাসে। তাই তাঁর অভিজ্ঞতার পরতে পরতে জমেছিল মানুষের চোখের জল, রক্ত আর দীর্ঘশ্বাসের অজস্র কাহিনী। এই শোষণ, বঞ্চনার নির্মম ইতিহাসের কাহিনী তাঁকে কোনও বইতে পড়তে হয়নি। লেটোর দলে গান গেয়ে, রুটির দোকানে কাজ করে, চায়ের দোকানে কাপ-ডিশ ধুয়ে, পরের বাড়িতে পরিচারকের বৃত্তি গ্রহণ করে দারিদ্রপীড়িত জীবনের ব্যক্তিগত যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই তিনি সঞ্চয় করেছিলেন এই অভিজ্ঞতা। যার ফলশ্রতিতে এই লড়াকু মানুষটি চলে গেলেন রণক্ষেত্রে। 
 
বিরল প্রতিভার নজরুলই পরাধীন ভারতের প্রথম সাম্যবাদী কবি। এই ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বকে ভুলে গেলে আমাদের মহাপাপ হবে।
 
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে বর্ধমান জেলার অজয় নদের তীরে হিন্দুরাজা নরোত্তম সিংহের রাজধানী চুরুলিয়া গ্রামে এই মহামানব জন্ম গ্রহণ করেন। নজরুলের পিতা ফকির আহমদ ছিলেন যেমন সুশ্রী তেমনি তাঁর আচার-ব্যবহারও ছিল চমৎকার। তাঁর মুখে মনভোলানো হাসি ছিল সর্বদা। আরবি ভাষা জানতেন আর গানের গলা ছিল সুমধুর। সুর করে তিনি ‘মিলাদ শরীফ’ পড়তেন, লোকে মুগ্ধ হয়ে শুনতো।
 
বিশ্বমাতার দামাল ছেলে নজরুল যেদিন জন্ম গ্রহণ করেন সেটি ছিল প্রচ- ঝড়-বাদলের দিন। হরিণশিশুর মতো ডাগর চোখ দুটি নিয়ে আর দেবশিশুর মতো সুন্দর সরল মুখটি নিয়ে ভূমিষ্ঠ হলেন তিনি। জন্মাবার সময় মাতা জাহেদা বেগম অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছিলেন। নবজাতকের কণ্ঠে একটানা কান্না যেন ঝড়ের গর্জনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জিততে চায়। কান্না আর থামে না। অবশেষে মসজিদের আজানের ‘আল্লাহ আকবর’ ধ্বনি শোনা গেল। মুহূর্তের মধ্যে শিশুর কান্না থেমে গেল। নজরুল পিতামাতার ষষ্ঠ সন্তান। এর আগে তাঁর চার ভাই মারা যায়।
 
পিতা ফকির আহমদ অত্যন্ত গরীব ছিলেন। নজরুলের বাড়ির নিকটেই ছিল পীরপুকুর নামে এক বিরাট দিঘী। তার পারেই হাজি পালোয়ান নমে এক পীরের মাজার এবং একটি মসজিদ। এই পীরের মাজারে ‘খাদেমগিরি’ করে আর ভক্ত মুসলমানদের বাড়িতে মিলাদ শরিফ পাঠ করে যৎকিঞ্চিৎ আয় হতো। এই নিয়ে অতি কষ্টে তাঁদের সংসার চলতো। যদিও সংসারে তাঁর বিশেষ কোন আসক্তি ছিল না, তাঁর একমাত্র আকর্ষণ ছিল পাশা খেলায়। পাশা খেলায় ফকির আহমদের সঙ্গী ছিলেন গ্রামেরই প্রতিবেশি মহানন্দ বাবু। পাশা খেলায় যতই হারতেন ততই তাঁর খেলার নেশা বেশি হতো। পাশা খেলে পঞ্চাশ বছরের ফকির আহমদ সত্যিই ফকির হয়ে পড়লেন। ঘরে তিন ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে বড় সাহেবজান, মেজ নজরুল এবং ছোট আলী হোসেন। মেয়ের নাম কুলসুম।
 
নজরুলের প্রাথমিক শিক্ষা হয় পিতার কাছে। অক্ষর-পরিচয় ও হাতের লেখাও শিখেছিলেন তাঁর কাছে। নজরুল বাংলা ও আরবিতে পাঠ নিতে লাগলেন। তিনি কোর’আন শরীফ-এর ‘আমপারা’ অধ্যায়টি ভালভাবে রপ্ত করেছিলেন। সেই সময় এক গোঁড়া মৌলভী গ্রাম এসেছিলেন। সকলেই তাঁর ভয়ে অস্থির। নজরুল কিন্তু এতটুকু ভয় না পেয়ে তাঁর সুললিত কণ্ঠে নির্ভুলভাবে কোর’আন শরিফ পাঠ করে মাওলানাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। বাঘা বাঘা লোকও মাওলানার সামনে কোর’আন শরিফ পাঠ করতে ভয় পান। আর এই ছোট্ট ছেলেটির পড়া শুনে প্রশংসায় তিনি পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন।
 
নজরুলের যেমন সুনাম ছিল তেমনই ছিল দুর্নাম। পরীক্ষায় প্রথম স্থান ছিল তাঁর বাঁধা। আবার অন্যদিকে মানুষজনকে জ্বালাতেও তাঁর জুড়ি ছিল না। পাখির ছানা পাড়া থেকে আরম্ভ করে মানুষের পাকা ধানে মই দেওয়া পর্যন্ত কোনও দুষ্টমিতে নজরুল পিছু-পা ছিলেন না। গ্রামের দুষ্টু ছেলেদের সর্দার ছিলেন তিনি। 
 
নজরুলের বয়স যখন ৮ বছর তখন পিতা ফকির সাহেবের মৃত্যু হয়। মা জাহেদার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তিন ছেলে এক মেয়ে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়লেন। আয় নেই। বড় ছেলে সাহেবজান মায়ের কাছে অনুমতি নিয়ে আসানসোলে কয়লা খনিতে কাজ করতে চলে গেলেন। নজরুল সবেমাত্র মক্তব থেকে প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। খাওয়াই জোটে না, স্কুলের পড়ার বেতন বা বোর্ডিং খরচ কে জোগাবে? অবশেষে গ্রামবাসী এগিয়ে এলেন। গ্রামবাসী নজরুলকে মক্তবের কাজে লাগিয়ে দিলেন। নজরুল ৮ বছরের বয়সে ক্ষুদে শিক্ষকের কাজ নিলেন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের অক্ষর চেনানোর ভার নিয়ে। অতি সামান্য বেতন। মাঝে মাঝে গ্রামবাসী ক্ষুদে এই শিক্ষকের বাড়িতে ভেট হিসেবে আলু, পটল, বেগুন, ঝিঙে, ডিম ইত্যাদি পাঠাতেন। এর পাশাপাশি নজরুল গ্রামের মসজিদে মোয়াজ্জিনের পদও পেলেন। মাত্র ৮/৯ বছরের বালক মসজিদের মোয়াজ্জিন! বোধ করি তিনিই ছিলেন বিশ্বের কনিষ্ঠতম মোয়াজ্জিন। বয়োজ্যেষ্ঠদের আমপারা পড়াতেন। চাচা বজলে করিমের কাছে নজরুল পড়তেন ফার্সি এবং উর্দু। বজলে করিম বাঙলা গান এবং উর্দু গজল লিখতেন এবং সুরারোপ করতেন। বালক নজরুলও গান রচনার কায়দা কানুন শিখে নিতেন। নিজের চেষ্টায় বাংলা, উর্দু ও ফার্সি মিশিয়ে গান রচনা করতেন এবং সুরও দিতেন। ইমামের অনুপস্থিতিতে মাঝে মধ্যে নজরুল নামাজের ইমামতিও করতেন। নজরুলের সুমধুর কণ্ঠে গ্রামবাসী কোর’আন তেলোয়াত শুনতেন। মিলাদ শরীফও পড়াতেন। নিজের রচনাতেই মিলাদ শরীফ পড়তেন। যেমন: 
 
‘নামাজ পড় মিঞা, ওগো নামাজ পড় মিঞা
সবার সাথে জামাতেতে মসজিদে গিয়া।
তাতে নেকি পাবে বেশী
পর হবে খেশী (আত্মীয়)
থাকবে নাকো কীনা (বিদ্বেষ)
প্রেমে পূর্ণ হবে হিয়া।
 
লিখতে লিখতে তাঁর দু’একটি কবিতা ভাল হতো। পাশের গ্রামে পালা গানের বা ‘লেটো’ দল ছিল। তাদের জন্য গান লিখে দিতেন নজরুল। এতে কিছু আয় হতে লাগলো। তিনি নিজেও লেটো দলে গান করতেন। হঠাৎ একদিন নজরুল উধাও হয়ে গেলেন। তিনি গ্রাম থেকে চলে গেলেন আসানসোল। সেখানে ৫ টাকা মাইনের ময়দা মাখার কাজ নিলেন বখশ মিয়ার রুটির দোকানে।
 
নজরুল রুটির দোকানে কাজ করার সময় গলা ছেড়ে গান গাইতেন। লেটোর দলের ওস্তাদের গান। বাবরি  চুলের টানা টানা চোখের কিশোর নজরুল যখন দরাজ গলায় গান ধরতেন তখন দোকানের সামনে ভিড় জমে যেতো। এই ভিড়ের মধ্যেই রোজ এসে গান শুনতেন এক নির্বাক ফকির। টিনের মগ ও দড়ি তার কোমরে বাধা থাকতো। ফকির কারও কাছে কিছু চাইত না। তার এক হাত থাকত বুকে আর অন্যহাতে ঘুঙুর বাঁধা লাঠি। খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে রোজ নজরুলের গান শুনতে আসতেন তিনি। দোকান মালিক বিরক্ত হতেন, ধমক দিতেন। কিন্তু নজরুল তাকে খাবার দিতেন। একদিন হঠাৎ বোবা ফকির মারা গেলেন। নজরুল ব্যথিত হলেন। চাঁদা তুলে তার দাফনের ব্যবস্থা করলেন। ব্যথিত হৃদয়ে নজরুল লিখলেন: 
 
বুকের বেদনা বুকেতে রাখিলে ঢাকি
মরণের দিনে সেই বুকে হাত রাখি।
দেখাইয়া গেলে ওই স্থানে আছে লেখা
ব্যথার কাহিনী যাহা যায় নাকো দেখা।
পাওনি দরদী বন্ধু জগৎ খুঁজি
দুঃখেতে তাই মুখটি রাখিতে বুজি।
চাহনি ভিক্ষা কোন দিন কথা কয়ে
খোঁড়ায়ে খোঁড়ায়ে হেঁটে যেতে রয়ে রয়ে
ঘুঙুর লাগানো লাঠি এক হাতে ধরে
টিনের মগটি ঝুলিত কোমর পরে।
.......................................
তুমি জেনেছিলে মোরে আপনার জন
তাই তব লাগি কাঁদিতেছে মোর মন।
 
আসানসোলের রুটির দোকানে নজরুলের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হয় দারোগা রফিজউদ্দিনের সঙ্গে। প্রতিভাবান ছেলেটির ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে দেখে তিনি তাঁর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার কাজীর সিমলা গ্রামে নিয়ে এলেন। নজরুলকে ভর্তি করে দিলেন পাঁচ মাইল দূরের দরিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। আম, জাম, লিচু, বট, পাকুর, পলাশসহ নানা প্রকার বৃক্ষের পথ ধরে বিল অতিক্রম করে স্কুলে যেতে যেতে নজরুলের সঙ্গে প্রকৃতির অন্তরঙ্গতা স্থাপিত হয়। তিনি হয়ে উঠলেন প্রকৃতি প্রেমিক। স্কুল থেকে ফেরার পথে এবং ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রাখালদের কাছ থেকে বাঁশি চেয়ে নিয়ে বাজাতেন। চঞ্চল নজরুলের মন বেশি দিন সেখানে টিকলো না। কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে ফিরে গেলেন চুরুলিয়ায় বাড়িতে।
 
ডানপিটে নজরুল গ্রামের সহপাঠিদের সঙ্গে দুষ্টমি করতেন আর মতলব আঁটতেন। একবার গ্রামের এক বাড়িতে নতুন জামাই এসেছে। নজরুল তাঁর দলবল নিয়ে নতুন জামাইয়ের কাছে মিষ্টি খাওয়ার টাকা আদায় করতে গেলেন। জামাইকে বলা হলো যেহেতু নতুন জামাই তাই তাকে গ্রামের পীরের দরগায় যেতে হবে, সিন্নি দিতে হবে, নইলে অকল্যাণ হবে। জামাইকে রাজি হতেই হলো। দলবল সহকারে জামাইকে নিয়ে যাওয়া হলো পীর হাজি পালোয়ানের দরগায়। এর পর তাকে নিয়ে যাওয়া হলো ‘দরমা পীর’-এর দরগায়। এটি নজরুল ও তাঁর দলের বানানো তথাকথিত দরগা। একটি পোড়ো বাড়ির হাঁসমুরগি রাখার ছোট্ট ঘর। আগে থেকেই নজরুল বন্ধুদের দিয়ে সেই ঘরটিকে লাল সালু দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। নজরুলের কথা মতো জামাই হাঁসমুরগি রাখার ঘরটিকে ভক্তি সহকারে সালাম করলেন এবং সকলকে মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দিলেন। এর পর বোকা জামাইকে নিয়ে নজরুল সদলবলে চল্লেন শ্বশুরবাড়িতে। সেখানে প্রকৃত ঘটনা বলতেই হাসির রোল পড়ে গেল। নজরুল গান ধরলেন,-‘মাসী গো মাসী/ তোমার জামাইয়ের দেখ হাসি/ দরমা-পীরে সালাম দেওয়ালাম/ খাওয়াও মোদের খাসি।’
 
এদিকে নজরুলের আবার পড়ালেখার ইচ্ছা জাগলো। এক আত্মীয়ের সঙ্গে তিনি গেলেন শিয়ারশোল রাজস্কুলে ভর্তি হতে। বিনা পয়সায় ভর্তি এবং বোর্ডিংয়ে থাকা-খাওয়ার জন্য আবেদন করলেন। প্রধান শিক্ষক নজরুলকে বিনা বেতনে স্কুলে পড়ার সুযোগ দিলেন কিন্তু বিনা পয়সায় বোর্ডিংয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থায় রাজি হলেন না। নজরুল ব্যথিত হলেন। তিনি আত্মীয় মনজুরের ঘরে নির্ঘুম রাত কাটালেন। মনোকষ্ট নিয়ে ভোর রাতে নজরুল একটি দীর্ঘ কবিতা লিখে রেখে চলে গেলেন। মনজুর সকালে কবিতাটি নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখালেন। প্রধান শিক্ষক কবিতায় নজরুলের মনের কথা, তাঁর হতাশার কথা পড়ে নজরুলকে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি করে দিলেন এবং বিনা পয়সায় বোর্ডিংয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। নজরুল শিয়ারশোল রাজস্কুল থেকে পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে পঞ্চম শ্রেণীতে উঠলেন। প্রধান শিক্ষক নজরুলকে জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদ করলেন। 
 
১৯১৫ থেকে ১৯১৭ এই তিন বছর নজরুলের স্থিতিশীল জীবন। কিন্তু বেশি দিন ভাল লাগল না স্বাধীনচেতা নজরুলের। বোর্ডিংয়ের খাবার মান খারাপ, প্রতিবাদ করলেন। প্রধান শিক্ষক নগেন্দ্রনাথ বাবু অন্যত্র চলে গেছেন। নতুন প্রধান শিক্ষক। নজরুলকে সতর্ক করলেন। বলা হলো, ‘ফ্রি খাওয়া আবার বড় বড় কথা’। নজরুলের ভাল লাগলো না। তিনি চলে গেলেন কাটোয়ার মাথরুনে নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউটে। কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক ছিলেন প্রধান শিক্ষক।  তিনি নজরুলকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিলেন। এখানে পড়ার সময়ই নজরুল লেটোর দলে নাচ, গান, অভিনয় শেখাতেন আর পালা গানের ছড়া লিখতেন। 
 
আসানসোলে এমনই একটি পালা গানের আসরে নাচগান দেখে মুগ্ধ হন এক বাঙালি খ্রিস্টান রেল কর্মচারি। তিনি নজরুলকে তার অফিস ও বাসায় বেয়ারার কাজ দেন। শিয়ারশোল রাজস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় আবার ফিরে এসেছেন, এই খবর পাওয়ার পর নজরুল বোয়ারার চাকুরি ছেড়ে চলে গেলেন শিয়ারশোল। তিনি আবার বিনা বেতনে পড়া  এবং বোর্ডিংয়ে থাকার সুযোগ পেলেন। পরীক্ষায় খুবই ভাল ফলাফল করায় ডাবল প্রমোশন পেলেন। শিয়ারশোলের মালিহা রাজার রাজবাড়ি থেকে মাসে ৭ টাকা করে বৃত্তি পেলেন। এখানে পড়ার সময়ই তিনি শিক্ষক  নিবারণ ঘটকের কাছে বিপ্লববাদের দীক্ষা পান। 
 
রাণীগঞ্জ স্টেশনের ওপর দিয়ে তখন বাঙালি পল্টনরা (বাঙালি সৈন্যদের প্লাটুন) ট্রেনে চড়ে যাতায়াত করতেন, তখনই নজরুল তাদের দেখে আকৃষ্ট হন। তাঁর ইচ্ছা সৈনিক দলে যোগ দিয়ে ইংরেজদের এদেশ থেকে তাড়াবেন। তিনি  সৈন্য দলে যোগ দিতে চলে যান কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। প্রথমে করাচি এবং পরে মেসোপটিয়ামে যান সৈন্যদলের সঙ্গে। এসময়ই  তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বাঙালি পল্টন বিলুপ্ত হলে নজরুল কলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানে বন্ধু শৈলজানন্দের বাসায় ওঠেন। এরপরই শুরু হলো নজরুলের সাহিত্যিক জীবন। মোসলেম ভারত, সওগাত, নূর, বঙ্গনূর, উপাসনা, প্রবাসী পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর লেখা ছাপা হতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকে সঙ্গীত চর্চা। গায়ক হিসাবেও পরিচিতি পান। তিনি তখন গাইতেন রবীন্দ্রসঙ্গীত।
 
কলকাতায় কমরেড মোজাফ্ফর আহমেদের সঙ্গে নজরুলের পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা  হয়। দুজনে মিলে সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা ‘নবযুগ’ প্রকাশ করেন। সহযোগিতার হাত বাড়ান শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক। নজরুলের দেশাত্মবোধক গরম গরম লেখায় পত্রিকাটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ভীত হয়ে ইংরেজ সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। এর পর নজরুল চলে যান দেওঘরে, সেখান থেকে কুমিল্লায়। কলকাতায় মোজাফফর আহমেদের মাধ্যমে পরিচিত আলী আকবরের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দৌলতপুর গ্রামে যান এবং সেখানে ক’দিন অবস্থান করেন। 
 
এই সময়েই সৈয়দা খাতুন নামের এক যুবতীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। নজরুল তার প্রেমে পড়েন। নাম দেন নার্গিস। বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়। ঘর জামাই থাকার শর্ত না মেনে নজরুল বিয়ের আসর থেকে উঠে চলে যান। এখানেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গেল। কুমিল্লা থেকে কলকাতায় চলে যান কবি। মানসিক কষ্টে অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন ভুগলেন। 
 
কমরেড মোজাফ্ফ্র আহমেদ এবং নজরুল থাকতেন কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের একটি ম্যাচে। ২৩ বছর বয়সের নজরুল সারারাত জেগে লিখলেন বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘বিদ্রোহী’। ’আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি/ আমি পথ সম্মুখে যাহা পাই যাই চুর্ণি।’ আরও লিখলেন- বল বীর, বল উন্নত মম শির/ শির নেহারি/ আমারি নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির।
 
১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট নজরুলের সম্পদনায় প্রকাশিত হয় অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধুমকেতু’। প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘ব্যথার দান’। নজরুলের ‘ধূমকেতুকে’ আশীর্বাদ জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, আয় চলে আয় রে ধুমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু/ দুর্দিনের এই দুর্গা শিরে, উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন/ অলক্ষণের তিলক রেখা/ রাতের ভালে হোক না লেখা/ জাগিয়ে দে রে চমক মেরে, আছে যারা অর্ধচেতন। ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আশীর্বাণীটি প্রকাশিত হতো। নজরুল ইসলাম সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘লাঙলে’র প্রচ্ছদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আশীর্বচন লেখেন : “ধর, হাল বলরাম, আন তব মরু-ভাঙা হল,/ বল দাও, ফল দাও, স্তব্ধ হোক ব্যর্থ কোলাহল।”
 
নজরুল লিখলেন কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমন’। ‘দেবশিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি/ ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবী কখন সর্বনাশী।’ এই কবিতা রচনার দায়ে রাজদ্রোহ মামলা হলো নজরুলের বিরুদ্ধে। ইংরেজ সরকারের পুলিশ নজরুলকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে যায়। বিচার হলো। কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হল ১৯২৩-এর ১৬ জানুয়ারি। সেখান থেকে হুগলি কারাগারে স্থানান্তর করা হলো। তিনি কারাগারে বসেই রচনা করলেন, ‘কারার ওই লৌহ কপাট/ ভেঙে ফেল কর রে লোপাট/ রক্ত জমাট শিকল পাষাণ বেদী/ লাথি মার ভাঙরে তালা/ যত সব বন্দিশালায়/ আগুন জ্বালা আগুন জ্বালা ফেল উপাড়ি।
 
রাজনৈতিক বন্দীদের ওপর জেল কর্তৃপক্ষের নির্যাতনের প্রতিবাদে নজরুল অনশন ধর্মঘট করলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে অনশন ভঙ্গ করার জন্য টেলিগ্রাম করলেন। লিখলেন, ÔGive up hunger strike – our literature claims you’ । ৩৯ দিন পর বিরজা সুন্দরী দেবীর হাতে সরবত পান করে নজরুল অনশন ভাঙলেন। ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’- তে নজরুল লিখেছেন, ‘আমি কবি। আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন। আমার বাণী- সত্যের প্রকাশিকা। ভগবানের বাণী।’
 
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ২৫ বছর বয়সে নজরুল আশালতা সেনগুপ্তকে (প্রমীলা) বিয়ে করেন। কুমিল্লায় প্রমীলার সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয়। কলকাতার হাজি লেনের বাসায় নজরুলের শাশুড়ি গিরিবালা দেবীর ইচ্ছায় বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর প্রথম পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। নাম রাখা হয় কৃষ্ণ মোহাম্মদ। দুই বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। এই সময়েই ব্রিটিশ সরকার, নজরুল রচিত ‘বিষের বাঁশি এবং ‘ভাঙার গান’ নিষিদ্ধ করে।
 
আর্থিক অনটনের কারণে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে নজরুল কলকাতা থেকে সপরিবারে কৃষ্ণনগরে চলে যান। এখানেই একই বছরে ৯ সেপ্টেম্বর তাঁর দ্বিতীয় পুত্র অরিন্দম খালিদ ওরফে বুলবুলের জন্ম হয়। এই বছরই তিনি রচনা করেন: ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই, ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল।’ বুলবুলের জন্মের সময় নজরুল ছিলেন খুলনা-যশোর এলাকায়। যখন কৃষ্ণনগরে ফিরলেন তখন আর্থিক অনটনে ক্লিষ্ট, বিপর্যস্ত। বাধ্য হয়ে ১৫ টাকা ধার করলেন বন্ধু ব্রজবিহারীর কাছ থেকে। ওই রাতেই আর এক কালজয়ী কবিতা ‘দারিদ্র’ রচনা করলেন। ‘হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান।’ 
 
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজের অধিবেশনে ভাষণ দিলেন নজরুল। গান রচনা করলেন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা উপলক্ষে। কৃষ্ণনগরে থাকতেই নজরুল গজল নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাঁর গজল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। শ্রোতারা গ্রামোফোন রেকর্ডে নজরুলের গজল শুনতে চাইত। কিন্তু গ্রামোফোন কোম্পানির বৃটিশ কর্তৃপক্ষ নজরুলের গান ও গজল রেকর্ড না করে তাঁকে এড়িয়ে চলতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রোতাদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে গ্রামোফোন কোম্পানি নজরুলের গান রেকর্ড করতে বাধ্য হলো। নজরুল এই সময় ঠুংরি সম্রাট ওস্তাদ জমির উদ্দিনের কাছে গান শেখেন। এটাই ছিল নজরুলের আনুষ্ঠানিক গান শেখা। গ্রামোফোন কোম্পানির কাছ থেকে ভালই টাকা আয় হল। সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা দেখা দিল। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে নজরুলের মা জাহেদা বেগমের মৃত্যু হয়। 
 
কলকাতার এলবার্ট হলে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে নজরুলকে জাতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন সংবর্ধনা সভার প্রধান অতিথি। সভাপতিত্ব করেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। জাঁকজমকপূর্ণ বাদ্য যন্ত্র সহকারে ফুল সজ্জিত গাড়িতে নজরুলকে সভাস্থলে আনা হয়। 
 
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে চার বছর বয়সে পুত্র বুলবুল-এর মৃত্যু হয়। কবি এবং কবিপত্নী প্রমীলা পাগল প্রায়। নজরুল এই সময় জপতপ-যোগসাধনা শুরু করেন। লালগোলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরদাচরণ যোগীর কাছে তিনি যোগসাধনার তালিম নেন। তিনি বাড়িতে বসেই যোগসাধনা করেন।
 
কবি যখন গ্রামোফোন কোম্পানীর জন্য অনেক গান রচনা করছিলেন। তখনই তাঁর দুটি গানের খাতা হারিয়ে হয়ে যায়। এতে তিনি বেশ উতলা হয়ে পড়েন। তিনি একেবারে চুপচাপ হয়ে যান। কবির এই বিষ্ময়কর পরিবর্তনে বন্ধুরা হতবাক হন। বন্ধুদের তিনি বলেন, ‘সাগর থেকে দু’কলস জল নিলে সাগরের জল কি কখনো কমে যায়। 
 
নজরুলের মাতৃসমা বিরজাসুন্দরী দেবী ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মারা গেলে তিনি প্রচ- আঘাত পান। এর পরই ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে স্ত্রী প্রমীলা আক্রান্ত হন পক্ষাঘাতে। চলফেরা দূরে থাক তিনি উঠে বসতেও পারেন না। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য নজরুলের অতিকষ্টে সঞ্চিত অর্থে কেনা প্রাইভেট কার এবং জমি বিক্রি করে দেন। তাঁর বইয়ের কপিরাইটও বিক্রি করে দেন। এনকি তাঁর রেকর্ড করা গানের রয়্যালিটি অন্যের কাছে বন্ধক দিলেন টাকার বিনিময়ে। নানা প্রকার চিকিৎসা, ঝাড়-ফুঁক, দৈব চিকিৎসাসহ পীরের মাজারে সিন্নি বিতরণ সবই করলেন কিন্তু প্রমীলা সুস্থ হলেন না। 
 
রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ হলো ১৯৪০-এর ২২ শ্রাবণ। নজরুল সেদিন আকাশ বাণী রেডিওতে আবেগঘণ কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেন। এর কিছুদিন পরেই নজরুল পাগলের মতো হয়ে গেলেন। তাঁর কথা-বার্তায় অসংলগ্নতা পরিলক্ষিত হতে থাকে। চিকিৎসা চলতে থাকে। তাতে উন্নতি না হওয়ায় রাঁচিতে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। সেখানেও কোন উন্নতি হলো না। চঞ্চল নজরুল হয়ে গেলেন স্তব্ধ। চিকিৎসার জন্য ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে জাহাজ যোগে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো বিলেতে। না কোন উন্নতি নেই। সেখান থেকে ভিয়েনায়। কিছুতেই কিছু হলো না। নজরুল স্তব্ধবাক, অকর্মণ্য। তখন ছেলে অনিরুদ্ধ এবং সব্যসাচি কিশোর। সামান্যতম আর্থিক সংস্থান নেই। নির্বাক, স্তব্ধ নজরুলের সামনেই মৃত্যু হলো স্ত্রী প্রমীলার। তাঁর চোখের সামনেই প্রমীলাকে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো চুরুলিয়ায়। কিন্তু কবি কিছুই বুঝলেন না।
 
অসুস্থ কবি থাকতেন কলকাতায় ছোট্ট্র একটি কুটিরে। ভারত সরকারের সামান্য বৃত্তিতে চলতো সংসার। এর পর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে তাঁকে রাখা হয়। ধানমণ্ডিতে কবিকে একটি বাড়ি উপহার দেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৬-এর ২৯ আগস্ট ৭৭ বছর বয়সে কবির মহাপ্রয়াণ ঘটে। 
কবি লিখেছিলেন: ‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।’ তাঁর সেই ইচ্ছানুসারেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সামাধিস্ত করা হয়। পরে সেখান থেকেই মাটি নিয়ে চুরুলিয়ায় স্ত্রী প্রমীলার কবরের পাশে কবর দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেয়।
 
নজরুল বহু গান ও সুরের সৃষ্টি করেছেন। একাধারে পদাবলী-কীর্তন, গজল, হামদ-নাত রচনা করেছেন। মাত্র ২২ বছর তাঁর সাহিত্যিক জীবনে তিনি কবিতার পাশাপাশি গল্প, ঔপন্যাস, নাটক রচনা করেছেন। লিখেছেন শিশুদের জন্যও। নজরুল ছিলেন অসম্প্রদায়িক। তিনি ধর্ম ব্যবসায়ীদের মতলববাজ বলেছেন। নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পক্ষে লিখেছেন। কৃষক-মজুর প্রভৃতি উপেক্ষিত জনসমাজের প্রতি নজরুলের যে অসাধারণ মমত্ববোধ ও তাদের শক্তির উপর তার যে গভীর ও অবিচল আস্থা ছিল, তার পরিচয় ‘নবযুগে’ প্রকাশিত ‘ধর্মঘট’, ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রভৃতি প্রবন্ধে পাওয়া যায়। 
 
নারী-পুরুষের ভেদাভেদ তিনি মানেননি। প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে তিনি বলেছেন, ‘সুন্দরের ধ্যান, তার স্তবগানই আমার উপাসনা, আমার ধর্ম। যে কূলে, যে সমাজে, যে ধর্মে, যে দেশেই জন্মগ্রহণ করি, সে আমার দৈব। আমি তাকে ছাড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই কবি।’ তিনি সাম্যবাদি কবিতায় আরও লিখেছেন: 
 
‘গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহিয়ান।
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে,সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
...  ...   ...  ...
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম খ্রীস্টান।’
 
যতদিন বাঙালি থাকবে, বাঙলা ভাষা থাকবে, ততদিন বাঙালির প্রাণে উজ্জ্বল হয়ে বিরাজ করবেন কবি নজরুল।
 
লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com