সার্থক জনযুদ্ধে প্রধান প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু

সার্থক জনযুদ্ধে প্রধান প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু
প্রকাশ : ০৪ মে ২০১৬, ১১:২৮:০১
সার্থক জনযুদ্ধে প্রধান প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু
এইচ টি ইমাম
প্রিন্ট অ-অ+
বাঙালি জাতির জীবনে ১৭ এপ্রিল এক অবিস্মরণীয় দিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে রক্তাক্ষরে লেখা একটি মাইলফলক। রক্তঝরা ১৯৭১ সালের এই দিনে ভবেরপাড়ার (বৈদ্যনাথতলার) আমবাগানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি ১২৭ জন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণা মোতাবেক বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্য। বিদেশি সাংবাদিকদের সাথে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ভারতীয় এবং অন্যান্য বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে এই নতুন রাষ্ট্র এবং তার সরকার, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এর আগে আরো দুটো ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা। সেই সাথে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর আক্রমণ ও নির্বিচার গণহত্যা।
 
এখানে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য- স্বাধীনতার ঘোষণা এবং নতুন সরকার গঠনের পূর্বে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের যোগাযোগ, যা বঙ্গবন্ধু পূর্বেই ব্যবস্থা করেছিলেন, অর্থাৎ পাকিস্তানিরা আক্রমণ করলে কী কী করণীয়, যেমন: কোথায় যেতে হবে, কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে ইত্যাদি। সর্বোপরি, আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণার গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বব্যাপী তার প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য এই আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ছিল অত্যন্ত জরুরি।
 
এ সকল কারণেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিণত হয় সত্যিকার অর্থে একটি সার্থক জনযুদ্ধে যার প্রধান প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু, তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্ব। পরবর্তীকালে নতুন সরকার পরিচালনার প্রতিটি পদে আমরা সেটি অনুধাবন করেছি।
 
এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ এই জন্য যে, এটি সংঘঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের মাটিতে। এর ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আমাদেরই কয়েকজন নিবেদিতপ্রাণ সহকর্মী। সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয় সে সময়ে মেহেরপুরের মহকুমা কর্মকর্তা অসীম সাহসী তরুণ তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, (পরে ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বীর-বিক্রম, বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা); ঝিনাইদহের টগবগে তরুণ মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুবউদ্দীন আহমেদ (এসপি মাহবুব নামেই সমধিক পরিচিত), বীর মুক্তিযোদ্ধা। কুষ্টিয়া-যশোর এলাকার ইপিআর কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী তাঁর বাহিনী নিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করেন। বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে তখন পাকিস্তানিদের আক্রমণ মোকাবিলা করে স্বাধীন বাংলার নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছিল কঠিন কাজ। সম্ভাব্য বিমান হামলার মুখে স্থান নির্বাচন ছিল সুচতুর কৌশল। এ বিষয়ে ভারতীয় সরকারের সহযোগিতা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
 
মুজিবনগর দিবস আরেকটি বিষয়ের জন্য ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। স্বাধীন, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে মুক্তিবাহিনী (তখনও সুগঠিত হয়নি) কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদান, যার নেতৃত্ব দেন মাহ্বুব - আর অনার গার্ডের সদস্যরা ছিলেন পুলিশ ও আনসার বাহিনীর কতিপয় সদস্য। তাঁদের অনেকেই এখনও বেঁচে আছেন। তাঁদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। গার্ড অব অনারের এই দৃশ্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে গোটা পৃথিবী অবলোকন করে। আর বাংলার মুক্তিপাগল তরুণদের তথা সমগ্র জনগণকে করে অনুপ্রাণিত। 
 
মুজিবনগর শুধু একটি স্থান নয়, এটি হয়ে ওঠে একটি প্রতীক। সরকার যুদ্ধকালে যেখানেই গেছেন  (দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্বাধীন অঞ্চলে, যেমন রৌমারী, বেলোনিয়া ইত্যাদি) সেটিই হয়ে উঠে মুজিবনগর। এর একমাত্র কারণ: একটি অবিস্মরনীয় নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিইতো এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি, তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। দৈহিকভাবে অনুপস্থিত থেকেও তিনি ছিলেন আমাদের মাঝে সর্বদা বিরাজমান, সকল প্রেরণার উৎস। তিনি ছিলেন বাংলার ঘরে ঘরে, আমাদের সকলের হৃদয়ে। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ সকল ক্যাম্পে, শরণার্থী শিবিরে, মুক্তিবাহিনীর ছাউনিতে শোনা যেত সার্বক্ষণিকভাবে। তাঁর ভাষণে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার যে সকল নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন সেগুলো যুব-শিবির, প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে মোটিভেটররা অনুসরণ করতেন, কৌশল শেখাতেন গেরিলাদের। 
 
মেহেরপুরের মুজিবনগর আজ আমাদের কাছে তীর্থস্থানের মতো। লক্ষ লক্ষ বাঙালি যান সেই পবিত্র স্থানটি দেখতে, যেখানে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস পালিত হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। জনতার ঢল নামে সেখানে।
 
সেই অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনগণের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ৪৫ বছর আগে স্থানীয় যেসব সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁদেরকে আমরা আজ বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। যাঁরা ইতোমধ্যে প্রয়াত হয়েছেন তাদের পবিত্র আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
 
সমগ্র জাতির গৌরবের এই দিনে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ বৈদ্যনাথতলার নাম মুজিবনগর বলে ঘোষণা দেন। মুজিবনগরকে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন; মুজিবনগর হবে সরকারের প্রধান কার্যালয়। তিনি আরও জানান যে, এখান থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা হবে। সরকার যেখানে তাঁর কার্যালয় স্থাপন করবেন সেটিই হবে মুজিবনগর। অন্য অর্থে বঙ্গবন্ধু, সরকার এবং মুজিবনগর- এই শব্দগুলো একই সূত্রে গাঁথা।   
এই প্রসঙ্গে শপথ গ্রহণের প্রেক্ষাপটটি আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান থেকে নির্বাচিত এবং পাকিস্তান গণপরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমএনএ ও এমপিএ-গণ ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে স্বাধীন, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা (Proclamation of Independence) নামে পঠিত হয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণাপত্রেই সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে যে, যেহেতু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, সেহেতু ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা কার্যকর হবে। সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামানকে মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগ করা হয়। ১০ই এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ঐ দিনই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারেরও যাত্রা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ বেতারে মন্ত্রিসভা গঠনের ঘোষণা দেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভা ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননে শপথ গ্রহণ করেন। এই স্থানটির নামকরণ করা হয় “মুজিবনগর”। ঐ অনুষ্ঠানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ভাষণ প্রদান করেন যা শুধু দেশবাসীর জন্য নয়, বিশ্বকে জানিয়ে দিতে যে আমরা ন্যায় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি।
 
যেহেতু এই সরকার মুজিবনগরে তার প্রধান দপ্তর স্থাপন করে তাই এর ব্যাপক পরিচিতি হয় ‘মুজিবনগর সরকার’ রূপে। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে এই সরকারের প্রধান কার্যালয় কলকাতায় স্থাপন করা হয় প্রধানত নিরাপত্তা এবং মুক্তিযুদ্ধে নির্বিঘ্ন নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজনে। সরকারের বিভিন্ন কার্যাবলি পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে কত ব্যাপক এবং সুসংগঠিত ছিল সরকারের কর্মসূচি এবং গঠন-কাঠামো।
 
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকার আকারে বিশাল না হলেও অত্যন্ত সুসংগঠিত ছিল। প্রচ- প্রতিকূলতার মধ্যে এই সরকার গঠন করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে একদিকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া, অন্যদিকে এক কোটির ওপর শরণার্থীর জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা; দেশের অভ্যন্তর থেকে লক্ষ লক্ষ মুক্তিপাগল ছাত্র-জনতা, যুবাদেরকে ‘‘যুবশিবিরে” পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে গেরিলা বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানিদের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি করা, স্বাধীন বাংলা বেতারের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ রাখা এবং সাথে সাথে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি এবং আমাদের মুক্তি সংগ্রামের যথার্থতা তুলে ধরা- এ সবই ছিল এই সরকারের কৃতিত্ব। এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের বৈরি নীতি সত্ত্বেও সেখানকার জনগণ এবং বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ আমাদের পক্ষে অবস্থান নেন এবং সাহায্যের হাত প্রসারিত করেন। এমনটি ঘটে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপসহ অন্যান্য অঞ্চলেও। 
 
 ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামকরণেই বোঝা যায় এটা প্রজাতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের অবিসংবাদিত নেতা। কর্নেল ওসমানী সশস্ত্র বাহিনীপ্রধান নিযুক্ত হন (১৭-০৪-১৯৭১)। অধিকন্তু, তাঁকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়। এত ছোটো আকৃতির মন্ত্রিসভা এবং সরকারি দপ্তর নিয়ে সরকারের কাজকর্ম চালানো এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার অনুপ্রেরণা ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ৭ মার্চের অবিস্মরণীয় ভাষণ এবং বাংলার আপামর জনগণের স্বাধীনতার চেতনা, যেটি বঙ্গবন্ধু বপন করেছিলেন।
 
সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি-পদ্ধতি অনুসরণ করে যেভাবে রাষ্ট্রের শাসনকাজ পরিচালিত হয়ে থাকে তা থেকে যুদ্ধকালীন অস্বাভাবিক অবস্থায় দুটো বিষয়ে ব্যত্যয় করা হলো- এক. অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি প্রতিটি মন্ত্রিসভা-বৈঠকে উপস্থিত থেকে সভাপতিত্ব করতেন, দুই. যেহেতু অধিকাংশ বৈঠকে প্রতিরক্ষা এবং যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়সমূহ মুখ্য আলোচ্য বিষয় থাকত, তাই কর্নেল ওসমানী প্রায় প্রত্যেক বৈঠকেই যোগদান করতেন। 
 
মূলত প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরেই সরকারের কাজকর্ম পরিচালিত হতো। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিল প্রতিরক্ষা, তথ্য ও বেতার, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ, শিক্ষা, স্থানীয় প্রশাসন, শ্রম, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিকল্পনা। খন্দকার মোশতাক আহমেদকে দেওয়া হয় পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদীয় বিষয়। ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ওপর দায়িত্ব ছিল অর্থ, জাতীয় রাজস্ব, বাণিজ্য ও শিল্প, পরিবহণ। এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান ছিলেন স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে।
 
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অপর তিন মন্ত্রী এবং প্রধান সেনাপতি- এঁরাই ছিলেন সরকার পরিচালনায়। নীতি-নির্ধারণের সর্বময় কর্তৃত্ব ছিল তাঁদের। প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্দেশনায় আমরা, অর্থাৎ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/ বিভাগের সচিববৃন্দ সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতাম। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধান সেনাপতি মুক্তিযুদ্ধ-সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকা- পরিচালনা করতেন সেক্টর কমান্ডারদের মাধ্যমে। তাঁকে সহায়তা করতেন উপপ্রধান দু’জন- অব. কর্নেল রব (এমএনএ) এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার।
 
যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি এই সরকার একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে যার দায়িত্ব ছিল যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের গৃহহীন এবং বাস্তচ্যুত মানুষের পুর্নবাসন এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশের পুনর্গঠন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ এর অনেক আগে থেকেই তাঁর সহকর্মীদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের একটি রূপরেখা দেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নই ছিল সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে যে মুক্তির সংগ্রামের ডাক দেন এবং যে সোনার বাংলার স্বপ্ন তাঁর অনুসারীদের প্রায়ই বলতেন তারই আলোকে মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিকল্পনা কমিশন একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে।
 
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল জনগণের মুক্তি এবং সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিবেদিত। তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজ অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং নিপুণভাবে বাস্তবায়ন করছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সফলতম প্রধানমন্ত্রী।
 
লেখক: প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com