ছবি তৈরি করে ফটোগ্রাফারের মগজ

ছবি তৈরি করে ফটোগ্রাফারের মগজ
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৬, ১৯:২৬:০২
ছবি তৈরি করে  ফটোগ্রাফারের মগজ
৭১পিক্স 'ফটো অব দ্যা উইক'
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+
ফটোগ্রাফি তার পেশা নয়, ভালোবাসা। ১৯৮২ সাল থেকেই ছবি তোলেন। সে সময় সাহিত্য নিয়ে পাগলামিও ছিলো তার। সবটুকু নেশা আর স্বপ্ন ছিলো কবিতাকে ঘিরে। পাশাপাশি ছিলো ছবি তোলা। ইতোমধ্যে তার চারটি কবিতার বই প্রকাশ হয়েছে। ১৯৯৩ সালে প্রকাশ হয় প্রথম কবিতার বই - `যে নামেই ডাকো তুমি‘। 
 
কবিতা লেখার পাশাপাশি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ছবি তুলতে ভালো লাগে তার। মানুষের সাধারণ জীবনের হাজারো অসাধারণ মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করতে ভালবাসেন কবি ও ফটোগ্রাফার জিয়া রায়হান।
 
জিয়া রায়হানের জন্ম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বেড়ে ওঠা জয়পুরহাটের খঞ্জনপুরে। শৈশবের দুরন্ত সময়গুলো কেটেছে গ্রামীণ পরিবেশে। স্কুল ও কলেজ জয়পুরহাটে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন রায়হান।
 
বিবার্তা’র আয়োজনে গত সপ্তাহে ৭১পিক্স 'ফটো অব দ্যা উইক' প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সেরা হয়েছেন জিয়া রায়হান। এরপর তিনি মুখোমুখি হন বিবার্তার। জানান  নিজের জীবনের গল্প। সেই গল্প পাঠকদের জানাচ্ছেন বিবার্তা২৪ডটনেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ।
 
বিবার্তা : বিবার্তা৭১পিক্স ফটো অব দ্য উইক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। 
 
জিয়া রায়হান :  যে কোনো প্রাপ্তিই ভালো লাগা ও আনন্দের। বিবার্তা৭১পিক্স ফটো অব দ্য উইক প্রতিযোগিতায় আমাকে বিজয়ী করা হয়েছে এই খবর আমার কাছে নিঃসন্দেহে ভালো লাগার বিষয়। এই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। একটা অন্যরকম ভাললাগার অনুভূতি। এই পুরস্কার আমাকে আগামীতে আরো ভালো ছবি তোলার অনুপ্রেরণা যোগাবে। 
বিবার্তা :  আপনার নির্বাচিত ছবিটির পেছনের কথা জানতে চাই।
 
জিয়া রায়হান :  ছবিটি আমার গ্রাম খঞ্জনপুরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ছোট যমুনার বেড়ি বাঁধের ওপর গড়ে ওঠা ছিন্নমূল মানুষের বসতবাড়ি। অধিকাংশ মাটির ঘর। সেখানেই এটি এক গ্রামীণ বধুর পোর্ট্রেট। যেখানে আলো-ছায়ার খেলা আর বধুয়ার চোখে প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষার আকুতি।
 
বিবার্তা  :  ছবি তোলার অনুপ্রেরণা পেলেন কীভাবে?
 
জিয়া রায়হান :  ছবি তোলার অনুপ্রেরণা বা আগ্রহ যদি বলতে হয় তাহলে জয়পুরহাটের কামরুল ভাই আর আমার কলেজে যাবার পথেরে জোনাকী স্টুডিওর কথা বলতে হয়। আমি সব সময় তাদের ছবি তোলা দেখতাম। তাদের কাজ আমাকে মুগ্ধ করতো। আমি ছবি তুলে তাদের দেখাতাম। তারা আমাকে ছবি তুলতে উৎসাহ যোগাতেন।
 
বিবার্তা :  আপনি কোন বিষয়ের ছবি তুলতে বেশি পছন্দ করেন?
 
জিয়া রায়হান :  ছবিকে আমি আসলে বিষয়ভিত্তিক কাঠামোতে ফেলে তার পরিধিকে ছোট করতে চাই না। টোটাল ছবির ব্যাপারটাই আমার ভালোলাগার জায়গা। তবে ছবি দিয়ে কিছু বলা বা একটি ছবি যেন একটি কবিতা হিসেবে ধরা পড়ে সেটাই করার চেষ্টা করি। কতটুকু পারি তা জানি না।
ছবি তৈরি করে  ফটোগ্রাফারের মগজ
বিবার্তা :  বর্তমানে কি করছেন ? 
 
জিয়া রায়হান :  আমি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাযাবর জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরি ১৯৯৮ সালে। এর পর ব্যবসা শুরু করি। সেই থেকে এখনো আমি একজন ব্যবসায়ী। খেটে খাওয়া মানুষ। না, কোন ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠানের সাথে আমি যুক্ত নই। আমি ফ্রীল্যান্স ফটোগ্রাফি করি। এখন পরযন্ত ফটোগ্রাফি আমার ভালোলাগা ও ভালোবাসার জায়গা। তবে ভালোলাগার মতো কাজের অফার পেলে পেশাদারিত্বের সাথে তা করার চেষ্টা করবো।
 
বিবার্তা :  ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য আসলে কী দরকার - দামি ক্যামেরা নাকি অন্য কিছু?
 
জিয়া রায়হান :  আমার মতে শুধু বড় লেন্স, দামি ক্যামেরা থাকলেই ফটোগ্রাফার হওয়া যায় না। ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য ছবি তোলার ব্যাকরণ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দরকার। ক্যামেরা চালানো, ছবির কারিগরি বিষয় সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। পাশাপাশি বড় বড় ফটোগ্রাফারদের প্রসিদ্ধ ছবিগুলো দেখতে হবে এবং ছবির কারিগরি ও শৈল্পিক কলাকৌশল বোঝার চেষ্টা করতে হবে।  আসলে সহজে একজন ফটোগ্রাফার হওয়া যায় না। ফটোগ্রাফার হওয়ার সংক্ষিপ্ত কোনো উপাই নেই। অপরিসীম ধৈর্য, আগ্রহ, সদিচ্ছা ও চেষ্টার সমন্বয়েই সম্ভব একজন ফটোগ্রাফার হওয়া। তবে ক্যামেরা ছবি তোলে আর ছবি তৈরি করে ফটোগ্রাফারের মগজ।
ছবি তৈরি করে  ফটোগ্রাফারের মগজ
বিবার্তা :  তাহলে একজন ফটোগ্রাফারকে কোন বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হয়?
 
জিয়া রায়হান :  ফটোগ্রাফির সম্পূর্ণ  বিষয় হলো আলোর খেলা। ছবিকে বলা হয় আলোকচিত্র। ক্যামেরা একটা যন্ত্রমাত্র। এই যন্ত্র ব্যবহার করে ফটোগ্রাফারকে ছবি তুলতে হয়। তাই ছবি তোলার আগে একজন ফটোগ্রাফারকে আলোর উৎস, পরিমাণ, প্রতিফলন ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে হয়। ছবির সাবজেক্ট, আলো, ব্যাকগ্রাউন্ড, ভিউ অফ অ্যাঙ্গেল, এক্সপোজার  সব ঠিক আছে কিনা। প্রয়োজনে সাবজেক্টের অনুকূলে ক্যামেরার এক্সপোজার ও কম্পোজার সেটিং করে নিতে হয়। সাবজেক্টের ব্যাকগ্রাউন্ড যতটুকু সম্ভব প্লেইন রাখার চেষ্টা করতে হবে। আর কালার সাবজেক্টের কালারের চেয়ে যেন উজ্জ্বল না হয়। 
 
বিবার্তা :  ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে নিশ্চয়ই অনেক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। তেমন মজার কোনো ঘটনার কথা কি বলবেন?
 
জিয়া রায়হান :  যখন ইটালিতে ছিলাম তখন ওলান্দা নামের এক ৮৫ বছরের বৃদ্ধার একটা পোর্ট্রেট করতে আমার সময় লেগেছিলো ১০ দিন। তিনি রাস্তায় ঘুমাতেন, রাস্তায় থাকতেন।  আমি প্রতিদিন তার কাছে যেতান শুধু একটু ভাব জমাতে। প্রথম প্রথম পাত্তাই দিতেন না। আমাকে দেখলেই বিরক্তি প্রকাশ করতেন। আমিও নাছোড়বান্দা, ছবি তুলবই। পর পর ৭ দিন গেলাম তার কাছে। ধীরে ধীরে তিনি অমার সাথে কথা বললেন। শুনলাম তার জীবনের কথা। তার জীবনকাহিনী ছিল একটি উপন্যাসের মতো। তিনি এখন আমার খুব ভালো বান্ধবী।
 
বিবার্তা/উজ্জ্বল/মৌসুমী/হুমায়ুন
 
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com