পুনর্জন্ম সম্পর্কে কী বলছে হিন্দুশাস্ত্র?

পুনর্জন্ম সম্পর্কে কী বলছে হিন্দুশাস্ত্র?
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০১৬, ১০:১০:৪৫
পুনর্জন্ম সম্পর্কে কী বলছে হিন্দুশাস্ত্র?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
এক জন্ম থেকে অন্য জন্মে আত্মার গমন এক জটিল বিষয়। জন্মান্তর সম্পর্কে কিছু তথ্য এখানে সন্নবিষ্ট রইল, যা হয়তো অনেক ভ্রান্তিরই নিরসন ঘটাতে পারে।
 
প্রাচীনকালের অনেক সভ্যতাতেই জন্মান্তর স্বীকৃত ছিল। সাম্প্রতিক কালে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ ধর্ম ছাড়া সবিশেষ কেউ পুনর্জন্মকে স্বীকার করে না। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, আত্মা অবিনশ্বর। কারণ তা পরমাত্মার অংশ। মৃত্যুর পরে তা পরম সত্তায় বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিটি জন্মেই তা হয় না। কার্যত কর্মফল মানুষকে এক জন্ম থেকে অন্য জন্মের দিকে নিয়ে যায়। এই তত্ত্বকে অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা করেন।
 
এক জন্ম থেকে অন্য জন্মে আত্মার গমন এক জটিল বিষয়। তাকে বৌদ্ধ ধর্ম যেভাবে ব্যাখ্যা করে, তা এক বিরাট যুক্তি পরম্পরা। জন্মান্তর সম্পর্কে কিছু তথ্য এখানে সন্নবিষ্ট রইল, যা হয়তো অনেক ভ্রান্তিরই নিরসন ঘটাতে পারে।
 
১. সাধারণত, মানুষ বেশিরভাগ সময়েই মানব জন্মের দিকেই ধাবিত হয়। তবে তার অন্য জীব হিসেবে জন্মও ঘটে।
 
২. কোনও পুরুষ পর পর তিনবার পুরুষ হিসেবে এবং কোনও নারী পর পর তিনবার নারী হিসেবে জন্ম নেন। তবে এর ব্যত্যয়ও ঘটে।
 
৩. কর্মফলবাদ অনুসারে সুকর্মগুলি দুষ্কর্মকে অতিক্রম করে না। দুষ্কর্মের জন্য দুর্ভোগ প্রত্যেককেই পোহাতে হয়। সুকর্ম থেকে জাত সুখও ভোগ করতে হয়।
পুনর্জন্ম সম্পর্কে কী বলছে হিন্দুশাস্ত্র?
৪. কারও যদি কোনও ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়, মৃত্যুর পরে সে প্রেতযোনি প্রাপ্ত হয়। এবং পরবর্তী জন্মের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দেবযান’ এই ‘অপেক্ষা’রই কাহিনি।
 
৫. ‘শ্রীমদ্ভাগবত গীতা’-র ‘বাসাংশী জীর্ণানী’ পড়ে কারও যদি মনে হয়, মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই আত্মা অন্য শরীরে প্রবেশ করে, তবে তিনি ভুল করবেন। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, আত্মাকে দুই জন্মের মধ্যবর্তী পর্বে সাতটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। তার পরে কর্মফল অনুযায়ী তার পুনর্জন্ম হয়।
 
৬. জন্ম থেকে জন্মান্তরে পরিভ্রমণ করতে করতে আত্মা অভিজ্ঞতা লাভ করতে থাকে। প্রাথমিক জাতকগুলিতে সে পার্থিব সুখগুলিকে গুরুত্ব দেয়। পরবর্তী জন্মগুলিতে তার মধ্যে আধ্যাত্মচেতনার উন্মেষ ঘটে।
 
৭. আমাদের সৎ ও অসৎ কর্মগুলি আমাদের শরীরেই নিহিত থাকে। মৃত্যুর পরে তা আত্মার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব কর্মের স্মৃতি যুক্ত হয়। এই স্মৃতিগুলির সঞ্চয়ই আত্মাকে জ্ঞানী করে তোলে এবং মুক্তির দিকে নিয়ে যায়।
 
৮. অনেকেই মনে করেন সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মহাজগতের যাবতীয় স্মৃতি আমাদের দেহে সঞ্চিত রয়েছে। একে উপলব্ধি করতে পারাটাই ‘আত্মোপলব্ধি’। এই উপলব্ধিই নির্বাণ বা মোক্ষের দিকে নিয়ে যায়।
 
৯. কেবলমাত্র মানুষেরই মোক্ষলাভ সম্ভব। মানবজন্মে পৌঁছতে গেলে আত্মাকে ৮৪ লক্ষ যোনি পরিভ্রমণ করতে হয়। মানবজন্মই শ্রেষ্ঠ। এখান থেকেই আত্মার পূর্ণ মুক্তি সম্ভব।
 
১০. ন্যায়শাস্ত্রে জন্মান্তর সিদ্ধ। প্রমাণ হিয়েবে ন্যায় জানায়, জন্মের অব্যবহিত পরেই মানুষ স্তন্যপান করতে চায়। তার জানার কথাও নয় সেটি কী বস্তু। পূর্বজন্মের স্মৃতিই তাকে সে দিকে চালিত করে।
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2025 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com