ষড়যন্ত্রের মুখে গার্মেন্টস খাত : গোপন প্রতিবেদনে তথ্য

ষড়যন্ত্রের মুখে গার্মেন্টস খাত : গোপন প্রতিবেদনে তথ্য
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২০:১৯:৫৪
ষড়যন্ত্রের মুখে গার্মেন্টস খাত : গোপন প্রতিবেদনে তথ্য
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+
স্থানীয় ও বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাত। গুলশানে জঙ্গিহামলা করে বায়ারদের নৃশংসভাবে হত্যার পর বিশ্বজুড়েই তৈরী হয়েছে উদ্বেগ। এছাড়া ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যে রফতানিবাণিজ্যেও অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা না গেলে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক গোপন প্রতিবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এমন আশঙ্কাজনক বার্তাই দিয়েছে।
 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব উম্মে সালমা সানজিদা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, তৈরী পোশাকশিল্পে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ৪০ লাখ শ্রমশক্তি, আর পরোক্ষভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ। বিপুলসংখ্যক মানুষের সম্পৃক্ততায় তৈরীকৃত পোশাকই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্ববাজার। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এ খাত বর্তমানে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক জঙ্গিহামলা, ভারত সরকার কর্তৃক সে-দেশের পোশাক খাতের উন্নয়নে প্রণোদনা প্রদান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ায় আমাদের পোশাকশিল্প নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা না গেলে ২০২১ সালের মধ্যে এ খাতে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত্ হবে। 
 
গার্মেন্টসখাত নিয়ে তৈরী করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঁচ পাতার গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অন্তত সাতটি চ্যালেঞ্জ। ভারত তার পোশাকখাতের জন্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ায় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে বাংলাদেশ। এছাড়া ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসায় সংকটের মুখে পড়বে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়। এছাড়া পোশাক খাতের নতুন ক্রেতা আগমন এবং নতুন বাজার তৈরী বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা, নতুন কারখানায় যথাসময়ে বিদেশি টেকনিশিয়ান  না পাওয়া, পণ্যের অর্ডার কমে যাওয়াসহ এ খাতের যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 
 
সংশ্লিষ্টরা জানান, পোশাকশিল্পে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ধরনের অপঘটনায় (আগুন, ভবনধস ইত্যাদি) বিশ্বজুড়ে যে ভাবমূর্তির সংকট সৃষ্টি হয়েছে  পড়েছে, তা পুনরুদ্ধারে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিহামলায় বিদেশি নিহতের ঘটনায় বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের চলাফেরায় সতর্কতা জারি করে। ফলে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাভীতি ও নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এখন বায়াররা পণ্যের অর্ডার প্লেস, আলোচনা বা চুক্তির জন্য এদেশে না এসে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং বা ভারতের মতো তৃতীয় কোনো দেশে উদ্যোক্তাদের যাওয়ার অনুরোধ করছেন। এতে পণ্যের সার্বিক ব্যয় বেড়ে যাবে। 
 
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ভারতের মন্ত্রীসভা ওই দেশের তৈরী পোশাক শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে ছয় হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর পাশাপাশি দেশটি ২০১৮ সালে তৈরী পোশাক রফতানিতে ৪,৩০০ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অপরদিকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ আগামী দুই বছরের মধ্যে ভারত আমাদের চেয়ে কমপক্ষে ৩০০ কোটি ডলার বেশি মূল্যের পোশাক রফতানির চেষ্টা করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রবল প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হতে হবে। 
 
প্রতিবেদনে  বলা হয়, পোশাক খাতের ক্রেতারা বিদেশি। যদি দেশে জঙ্গিহামলার মতো ঘটনা ঘটতে থাকে তাহলে তারা শঙ্কিত হয়ে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। কারণ, তৈরী পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, শ্রীলংকা ইত্যাদি দেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনার সুযোগ নিয়ে প্রতিযোগী দেশগুলো এদেশের বিরূদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে পোশাক খাতের বাজার তাদের দখলের চেষ্টা চালাতে পারে।
 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তৈরী পোশাক খাতে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা ও শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। এরা শ্রমিক অসন্তোষের নামে বিশৃংখল পরিস্তিতি তৈরী করে স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে সরকারকে চাপে ফেলার জন্য সর্বদা সক্রিয় রয়েছে। দেশি-বিদেশি এসব ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে।
 
প্রতিবেদনে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া ব্রিটেনে আগের মতো শুল্কমুক্ত কোটায় তৈরী পোশাকের বাজার যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সে বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
 
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ১২ জাতি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তিতে আমাদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সে দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক চ্যানেলে প্রচেষ্টা চালানো যেতে পারে। 
 
বিদেশি অধ্যুষিত এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। 
 
আার দেশের অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে যে কোনো মূল্যে জঙ্গীবাদ নির্মূলে আইন-শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির পাশপাশি এর বিরূদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, ধর্মগুরুসহ সবার সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 
 
এ প্রসঙ্গে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, পোশাকশিল্পে একটার পর একটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যেসব দেশে আমাদের নতুন মার্কেট তৈরি হয়েছে, সেসব মার্কেটের ক্ষেত্রে সমস্যাটা বেশি। কেননা, বায়ারদের অর্ডার দেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। কিন্তু এ সময়ই যদি তারা দেশ ছেড়ে চলে যায় সেটা পোশাকশিল্পের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। কারণ, বিদেশীরা গভীরভাবে জঙ্গিহামলার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছেন। তাই সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। 
 
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com