গরুকে ভীষণ হিংসে হয়!!!!!

গরুকে ভীষণ হিংসে হয়!!!!!
প্রকাশ : ২৯ মে ২০১৬, ১২:৩৩:২৮
গরুকে ভীষণ হিংসে হয়!!!!!
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
গরুকে ভীষণ হিংসে হয়। কারণ গরু মহাশয় আরামসে অর্ধশয়ন করে জাবর কাটতে কাটতে বাংলা ভাষার শ্রীবৃদ্ধিতে কত্তো যে বড় মাপের অবদান রেখেছে, তা হিসেব করে নিজেকে নিতান্ত ‘গোবেচারা’ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না। অথচ গরু স্কুল-কলেজের সিঁড়ি না ভেঙেই বাংলা ভাষাকে ‘গোবেচারা’ নামের কান লাল করা বিশেষণটি উপহার দিতে পেরেছে। আমাকে যখন ‘গোমূর্খ' বলা হয়, তখন কিন্তু গরুর স্ট্যাটাস আমার ওপরেই থাকে!
 
পেটে ছুঁচোর দুরন্ত দাপাদাপি শুরুর পর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিডিয়া সেন্টার থেকে রাত সোয়া এগারটায় ফিরে ডাইনিংয়ে বসে যখন ‘গোগ্রাসে’ গিলি, তখনও গরু আমাকে হাম্বা রবে তার ঋণের কথা মনে করিয়ে দেয়।
 
শুধু কি তাই, পরম পূজনীয় আব্বাজান যখন সখেদে বলতেন, ‘তুই ব্যাটা একটা আস্ত গরু’, তখন থেকেই গরুকে হিংসে না করে আমার উপায় ছিল না। বিস্মিত হয়ে ভাবতাম ঠিকই তো, এই চার পা-ওয়ালা জন্তুটি বাংলা ভাষায় যতগুলো শব্দ, উপমা আর প্রবাদ বাক্য উপহার দিয়েছে, তার তুলনায় আমি যে নস্যি!
 
মনে আছে, এ গরুর খুরকে মস্তকে ধারণ করেই বিষাক্ত গোখরা (‘গোক্ষুরা’) সাপও জাতে উঠেছে। শুধু সাপ কেন মুখ কিছুটা গরুর মতো বলেই কুমির সভ্য হতে ‘গোমুখ’ ধারণ করে বসে আছে। কুমিরের আরেক নাম কিন্তু গোমুখ। নদীও তো পিছিয়ে নেই। গরুর লেজ ধরে ধন্য হতে ‘গোমতী’ নাম ধারণ করেছে। গরুর স্বচ্ছ, ঢাউস আর নিষ্পাপ চোখের মর্যাদা দিতে মানুষ জানালার নাম রেখেছে ‘গবাক্ষ’। ‘গোধূলি’ নিয়ে বাংলা ভাষায় কবিকুল যেভাবে বন্দনায় মেতেছেন, তা আমার মতো অনেক ‘দ্বিপদ’ গরুর মর্মজ্বালার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
ব্লগে একজনের নিক দেখলাম ‘অবলষ্ট’। শতবর্ষী চলন্তিকা অভিধানে ‘গরুখোঁজা’ করেও শব্দটির মর্ম উদ্ধার করতে পারলাম না। জ্ঞানীজনরা বহু আগেই বলে গেছেন, ‘গরু, জরু, ধান রাখ বিদ্যমান’। হায়! হায়! গরু আর জরুকে (স্ত্রী) একই সোশাল স্ট্যাটাস তো তারাই দিয়ে গেছেন!!!
 
গরুকে নিয়ে জ্ঞানীমুর্খদের একটাই অপবাদ। আর তা হচ্ছে ‘গরু তো গরুই’। সো হোয়াট? চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে।
 
বাংলা ভাষার প্রবাদ-তোরঙ্গটি খুলুন। দেখবেন, ওখানে লেখা আছে হাজার রকমের গরু-বন্দনা। ‘গোণা গরু বাঘে নেয় না’, ‘গাই নাই তো বলদ দুয়ে দে’, ‘গাঁয়ের গুণে গরু বিকায়’, ‘গাই ছিল না হল গাই, চালুনি দিয়ে দুইতে যাই’, ‘গাছে গরু চরানো’, ‘কানা গরু বামনকে দান’, ‘গোকুলের ষাঁড়’, ‘গোবর গণেশ,’ ‘কানা গরুর ভিন্ন মাঠ’, ‘কুঁড়ে গরুর এটুলী সার’, ‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়’ ইত্যাদি হাজারো প্রবাদ বাক্য তো গরুই ভাষাকে দান করেছে। ‘চিনির বলদ’ আর ‘কলুর বলদের’ কথা নাইবা বললাম।
 
এখন কি কারো সন্দেহ আছে বাংলা ভাষায় গরুর অবদান নিয়ে? আমি তো ছার, খোদ কবিগুরুর গো-বন্দনার উদাহরণ দিয়ে ইতি টানছি:
‘শুভ্র খণ্ড মেঘ
মাতৃদুগ্ধ পরিতৃপ্ত সুখনিদ্রারত
সদ্যোজাত সুকুমার গোবৎসের মতো
নীলাম্বরে শুয়ে… ।’
 
জিয়াউদ্দিন সাইমুমের ব্লগ থেকে
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com