ভুল নীতি: রপ্তানির চার গুণ চা আমদানি

ভুল নীতি: রপ্তানির চার গুণ চা আমদানি
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৫:২০:২৯
ভুল নীতি: রপ্তানির চার গুণ চা আমদানি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+
ষষ্ঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষাগুলোতে একসময় চা নিয়ে রচনা লিখতে বলা হতো। চা ছিল তখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। রপ্তানি করে আয় হতো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এখন আর সেই রচনা আসে না। কারণ, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকেই এখন বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে চা আমদানি করতে হচ্ছে। অবশ্য এখনো কিছু চা রপ্তানি হয়। তবে আমদানি হয় এর প্রায় চার গুণ বেশি।
 
চা সংসদের অভিযোগ, সরকারের মনোযোগের বাইরে থাকা এই শিল্পটি ভুল নীতির কারণেই বিপদে পড়েছে। অন্যান্য চা উৎপাদনকারী দেশ আমদানি নিরুৎসাহিত করলেও বাংলাদেশ হেঁটেছে উল্টো পথে। ৮৪ শতাংশ শুল্ক হারে এ দেশে চা আমদানি করা যায়। অথচ ভারতে এ হার ১১০ এবং শ্রীলঙ্কায় ১৩০ শতাংশ।
 
চা সংসদ জানিয়েছে, নিম্নমানের চায়ে সয়লাব হচ্ছে দেশ এবং বিনা কারণে শিল্পটি মার খাচ্ছে। বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জানান, চা আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো এবং বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার (বিএসটিআই) মাধ্যমে চায়ের মান নিয়ন্ত্রণের বাধ্যবাধকতা আরোপের কথা ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি কার্যকর করবে শিল্প মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাদের এ ব্যাপারে চিঠি পাঠানো হবে।
 
এদিকে ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবেই চা রপ্তানি কমেছে। কমেছে রপ্তানি আয়ও। চা রপ্তানি করে ১৯৯০ সালে যেখানে আয় হয়েছিল ১৫৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকায়। চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে দুই কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়েছিল। ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র পাঁচ লাখ ৪০ হাজার কেজিতে। সে কারণেই নব্বইয়ের দশকে চা রপ্তানিকারক হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। এখন কোনো অবস্থানই নেই।
ভুল নীতি: রপ্তানির চার গুণ চা আমদানি
২০০৯ থেকে ২০১৪— এই পাঁচ বছরে চা রপ্তানি হয়েছে ৭৫ লাখ ৭০ হাজার কেজি। ২০০৯ সালে ৩১ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করে ৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০১০ সালে নয় লাখ ১০ হাজার কেজি রপ্তানি থেকে ১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ১৪ লাখ ৭০ হাজার কেজি রপ্তানি করে ২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ১৫ লাখ কেজি থেকে ২২ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং ২০১৩ সালে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার কেজি রপ্তানি থেকে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা আয় করে বাংলাদেশ।
 
চা বোর্ডের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘চা আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে একশ্রেণির আমদানিকারক সুযোগ নিয়েছেন। আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক হার অন্তত ভারতের সমান করা উচিত।’
 
চা সংসদের তথ্যমতে, ২০০৯-২০১৩ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৭৫ লাখ ৭০ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়। অন্যদিকে এই সময়ে দেশে দুই কোটি ৮৭ লাখ ৯৩ হাজার কেজি চা আমদানিও হয়। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৪০ লাখ ১৩ হাজার, ২০১০ সালে ৪৯ লাখ ৮০ হাজার, ২০১১ সালে ১৯ লাখ ২০ হাজার, ২০১২ সালে এক কোটি ছয় লাখ ২০ হাজার এবং ২০১৩ সালে ৬৯ লাখ ৬০ হাজার কেজি চা আমদানি হয়।
 
চা সংসদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, ‘২০১০ সাল থেকে নিম্নমানের ও সস্তা দামের চা আমদানি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চা উৎপাদকেরা শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।’
 
এনবিআর ২০১১ সালে চা আমদানির ওপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করলে আমদানিতে কিছুটা ভাটা পড়ে। দুই বছর অব্যাহত থাকার পর ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট পাসের আগে হঠাৎ করেই তা প্রত্যাহার করা হয়।
 
এ কারণেই নিম্নমানের চা আমদানি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন চা সংসদের সাবেক সভাপতি সাফওয়ান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এতে শুধু নিম্নমানের চা-ই আমদানি হচ্ছে না, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও চলে যাচ্ছে বিদেশে।’
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com