বিশ্বের মসজিদের ইতিহাসে জায়গা করে নিতে যাচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে নির্মাণাথীন ঐতিহাসিক ২০১ গম্বুজ মসজিদ। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনারের মসজিদ হতে যাচ্ছে।
নির্মাণাধীন ২০১ গম্বুজ মসজিদটি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে। মসজিদটির মিনারের উচ্চতা ৪৫১ ফুট। অর্থাৎ ৫৭তলা উচ্চতার মিনারটি হবে বিশ্বের সবচাইতে উঁচু ইটের তৈরি মিনার।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনারটি হলো কুতুব মিনার, যা ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত। যার উচ্চতা ২৪০ ফুট (৭৩ মিটার) এবং এর সিঁড়ি রয়েছে ৩৭৯টি।
প্রায় ১৫ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করা হচ্ছে ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ কমপ্লেক্স। এখানে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। মিহরাবের দুই পাশে লাশ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হবে। পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও মসজিদে ফ্যান লাগানো হবে সহস্রাধিক।
মসজিদের ভেতরের নকশা ২০১টি গম্বুজের মধ্যে মসজিদের ছাদের মাঝখানে থাকবে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি বড় গম্বুজ এবং চারদিকে থাকবে ১৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ২০০টি গম্বুজ। মূল মসজিদের চার কোনায় ১০১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট চারটি মিনার থাকবে। পাশাপশি আরো চারটি মিনার থাকবে ৮১ ফুট করে উচ্চতা বিশিষ্ট। ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদটিতে একসাথে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মসজিদের দেয়ালের টাইলসে অংকিত থাকবে পূর্ণ পবিত্র কোরআন শরীফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে মসজিদের দেয়ালে কোরআন শরীফ পড়তে পারবেন। আর মসজিদের প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হবে ৫০ মণ পিতল। আজান দেয়ার জন্য মসজিদের দক্ষিণপাশে নির্মাণ করা হবে ৪৫১ ফুট উঁচু মিনারটি।
মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে আলাদা আলাদা পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবন। সেখানে থাকবে দুঃস্থ মহিলাদের জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা।
পশ্চিমে ঝিনাই নদী থেকে মসজিদ পর্যন্ত সিঁড়ি করা হবে এবং নদীর উপরে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। চারপাশে করা হবে দেশি-বিদেশি ফুলের বাগান।
গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাই নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে নির্মিত মসজিদটির নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে। কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন।
সার্বক্ষণিক এ মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মো: হুমায়ুন কবির জানান, প্রায় ৪৫০ শতাংশ জায়গায় নির্মাণাধীন মসজিদের কাজ ইতোমধ্যেই অধিকাংশ শেষ হয়েছে। নির্মাণ করা হবে হ্যালিপ্যাড। আশা করা হচ্ছে, ২০১৬ সালের মধ্যে মসজিদের কাজ শেষ হবে এবং ২০১৭ সালের প্রথম দিকে পবিত্র কাবা শরিফের ইমামের উপস্থিতি ও ইমামতির মাধ্যমে মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।
তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যেই নির্মাণাধীন অবস্থায় মসজিদটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য পর্যটক নির্মাণ কাজ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। এলাকার লোকজনের মধ্যেও মসজিদটি নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রাণ-চঞ্চলতা।
সব মিলিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করে গিনেস বুকে নাম লেখাতে চলেছে এই ২০১ গম্বুজ মসজিদ। এ স্থাপনাটি বিশ্বের দরবারে মসজিদের দেশ বাংলাদেশকে নতুন করে তুলে ধরবে এবং এটি পরিদর্শন করতে দেশি-বিদেশি পর্যটক, ওলি আউলিয়ার আগমন ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি