আমাদের এই পৃথিবী অনেক সুন্দর, সেই সৌন্দর্য্য আরও বৃদ্ধি করেছে মানবসৃষ্ট অসংখ্য স্থাপনা। তেমনই একটি স্থাপনা ভারতের দিল্লির কুতুব মিনার। ‘কুতুব মিনার’ নামের মাঝেই ইতিহাসের গন্ধ রয়েছে।
‘কুতুব মিনার’ বিশ্বের সর্বোচ্চ ইট নির্মিত মিনার। এটি কুতুব কমপ্লেক্সে অবস্থিত।
ভারতের মুসলমান শাসক কুতুবদ্দিন আইবেকের আদেশে এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু তিনি মিনারের কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে ফিরোজ শাহ তুঘলক ১৩৮৬ সালে মিনারের বাকি কাজ শেষ করেন।
অসাধারণ এই কুতুব মিনারটি ভারতীয়-মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। এর আশে পাশে আরও বেশ কিছু প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় স্থাপনা এবং ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যারা একত্রে কুতুব কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত। এই কমপ্লেক্সটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাবদ্ধ হয়েছে এবং এটি দিল্লির অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।
এবার মিনারের সৌন্দর্য্য নিয়ে কিছু কথা, যা আপনার মাঝে মিনারটি দর্শনের ইচ্ছে জাগাবে। কুতুব মিনারটি বিভিন্ন নকশার আদলে গঠিত, যা বারান্দা দ্বারা পৃথকীকৃত। মিনার লাল বেলে পাথর দিয়ে তৈরী। যার আচ্ছাদনের ওপর পবিত্র কোরআনের আয়াত খোদাই করা। কুতুব মিনারের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ২৫ ইঞ্চি ঢাল আছে। যা নিরাপদ সীমার মধ্যে বিবেচিত। আফগানিস্তানের জাম মিনার এর অনুকরণে এটি নির্মিত হয়।
পাঁচতলা বিশিষ্ট মিনারের প্রতিটি তলায় রয়েছে ব্যালকনি বা ঝুলন্ত বারান্দা। কুতুব মিনারের নামকরণের পেছনে দুটি অভিমত রয়েছে, প্রথমত এর নির্মাতা কুতুব উদ্দিন আইবেকের নামানুসারে এর নামকরণ। দ্বিতীয়ত ট্রান্স-অক্সিয়ানা হতে আগত বিখ্যাত সুফী সাধক হযরত কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকীর সম্মানার্থে এটি নির্মিত হয়। কুতুব মিনারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মনোরম একটি কমপ্লেক্স।
১০০ একর জমির উপর স্থাপিত এ কমপ্লেক্সে রয়েছে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ, আলাই মিনার, আলাই গেট, সুলতান ইলতুৎমিশ, সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবন, সুলতান আলাউদ্দিন খলজী ও ইমাম জামিনের সমাধি ও লৌহ পিলার। এছাড়া মিনারের প্রাচীর গাত্র নানা প্রকারের অলঙ্করণ দ্বারা শোভিত।
কুতুব মিনারটির উচ্চতা ৭২.৫ মিটার। মিনারের অভ্যন্তরে উপরে উঠার সিঁড়ি রয়েছে ৩৭৯ টি। নিচের দিকে মিনারের আয়তন ১৪.৩ মিটার এবং উপর দিকে ব্যাস ২.৭৫ মিটার। দিল্লি শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই কুতুব মিনার।
প্রতি বছর দিল্লি পর্যটন কর্তৃপক্ষ নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসে কুতুব কমপ্লেক্সে ৩ দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করে থাকে। রাত্রিবেলা বৈদ্যুতিক আলোর ঝলকানিতে কুতুব মিনার কমপ্লেক্স ধারন করে দীপ্তিময় ও বর্ণিল রূপ। সাত’শ বছরের ব্যবধানে কুতুব মিনারের জৌলুস একটুও ম্লান হয়নি।
বিবার্তা/ইফতি/কাফী