পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে নতুন সাজে সাজছে ‘বাংলার দার্জিলিং’ খ্যাত বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়। বর্ষা ও শরতে মেঘ ঢেকে রাখে এ পাহাড়কে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নতি না হওয়ায় ক্রমে পর্যটক বিমুখ হচ্ছিলো প্রায় ১৬শ ফুট উচ্চতার এ পাহাড়টি। জেলা প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগে নতুনভাবে সাজছে এ পর্যটন কেন্দ্রটি। এরই মধ্যে রেস্ট হাউজের নির্মাণ কাজ শেষ।
পাহাড় ঘিরে চলছে বিভিন্ন ধরনের ফল, ফুল, ওষুধি গাছের চারা লাগানোর কাজ। আর এসব কিছুর পেছনে কাজ নিরলস কাজ করে চলেছেন জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক ও এনডিসি হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ।
বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক। যাওয়ার পুরো রাস্তা সাপের মতো আঁকাবাঁকা। রাস্তার দু’ধারের নৈসর্গিক দৃশ্য মন ছুঁয়ে যাবে। চিম্বুক পাহাড়ে যেতে বান্দরবান রুমা-থানচি সড়কের পাশেই পাঁচমাইল নামক স্থানে পড়বে অপরূপ প্রাকৃতিক জলপ্রপাত ‘শৈলপ্রপাত’।
মূল সড়ক থেকে সিঁড়ি বেয়ে বেশ খানিকটা নিচে নেমে শৈলপ্রপাতে যেতে হয়। এর স্বচ্ছ জলধারা আর জল কলকল শব্দ সকালটা করে দিতে পারে অন্যরকম আবেশী সুন্দর। তবে সৌন্দর্যের মোহে সামনে বেশি না এগোনোই ভালো। বেশ পিচ্ছিল এর পাথুরে পাদদেশ। একবার পা হড়কে পড়ে গেলে প্রবল পানির তোড় টেনে নিয়ে আছড়ে ফেলবে ২৫/৩০ ফুট নিচে পাথরের উপর।
চান্দের গাড়িতে চিম্বুক পাহাড়ে যেতে গেলে নামতে হবে বুলি বাজারে। এরপর পাকা সড়ক দিয়ে হেঁটে উঠতে হবে পাহাড় চূড়ায়। নিজস্ব যানবাহন হলে সরাসরি পাহাড়ে ওঠা যায়। চিম্বুক পাহাড়ের চূড়া থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ শ্যামল পাহাড় আর পাহাড়।
প্রকৃতি অপরূপ সুন্দর রূপে সাজিয়ে বান্দরবানকে। এ পাহাড় থেকেই দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। পর্যটকদের এখানে থাকার ভালো কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। সম্প্রতি পাহাড়ের চূড়ায় রাত্রিযাপনের জন্য নির্মিত হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের একটি করে রেস্ট হাউজ। তবে রাত্রে থাকতে হলে বান্দরবান শহর থেকেই রেস্ট হাউজ কনফার্ম করে যেতে হয়।
দু’টি রেস্ট হাউজই গোলাকৃতির। জেলা প্রশাসনের রেস্ট হাউজটিতে রয়েছে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। রুম রয়েছে ৩/৪টি। এতে থাকতে পারবেন ৭/৮ জন। রেস্ট হাউজটি দোতলা। আর সড়ক ও জনপদের রেস্ট হাউজটি তিনতলা। এটি আরও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন। রয়েছে সুইট রুমও।
তিনতলার উপরের তলাটি ফাঁকা। এখান থেকে পাহাড়, আর চাঁদনি রাত উপভোগ করার মোহনীয় সুযোগ রয়েছে। এমন ভিউ বান্দরবানের অন্য কোথাও পাওয়া কঠিন। চিম্বুক পাহাড়কে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে বান্দরবান জেলা প্রশাসন পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে লাগিয়েছে ৭৭৫টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এর মধ্যে রয়েছে জাম, আমলকি, পেয়ারা, লেবু, জলপাই, নিম, অর্জুন, চম্পা, জারুল, কৃষ্ণচূড়া, হরিতকি, বহেরা, তমাল, হাসনাহেনা, কাঠগোলাপ প্রভৃতি ফলদ, বনজ, ওষুধি ও ফুলের গাছ। গাছগুলো বড় হলে নতুন রূপ পাবে চিম্বুক।
বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ জানান, পাহাড়টিতে আরও গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। রেস্ট হাউজটি সংস্কার করা হয়েছে। পাহাড়টিতে পর্যটক বসার জন্য বেঞ্চ, দোলনা, সিঁড়ি ও ভিউ পয়েন্ট নির্মাণেরও পরিকল্পনা আছে। এতে পর্যটকরা চিম্বুকের প্রতি আরও আকর্ষিত হবেন।
বিবার্তা/জিয়া