৭০০ বছরের পুরনো একটি গ্রাম। নাম ওশতোবিন। গ্রামটির অবস্থান ইরান ও আজারবাইজানের সীমান্তে। পূর্ব আজারবাইজানের আরাস নদী থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬২০ উপরে।
ওশতোবিন নামের এই ইরানী গ্রামটি আসলে তিনটি ছোট ছোট পল্লীর সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো হচ্ছে হারা'স, সিয়ভাশন ও জাফরাবাদ। গ্রামটিকে পার্বত্য ও উপত্যকার মধ্যবর্তী গ্রামের নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়।
এলাকাটি ইরানের শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোর অন্তর্ভুক্ত। বছরের বেশ কয়েক মাস অঞ্চলটি বরফে ঢাকা থাকে।
গ্রামটিতে যেসব স্থাপত্য নিদর্শন পাওয়া গেছে, তা বিশ্লেষণ করে বলা হয়ে থাকে যে গ্রামটি ৭০০ বছর আগের। এই গ্রামে এবং আশেপাশে শাহ মাতমাসোব সাফাভি'র আমলের কিছু প্রস্তর খোদাইকর্মের নিদর্শন পাওয়া গেছে। পাথর-খোদাইকর্মগুলো হিজরী নবম ও দশম শতাব্দির। গ্রামটি যে বেশ প্রাচীন তা এই শিলালিপিগুলো থেকে প্রমাণিত হয়।
এই গ্রামের লোকজন অজারি ও তাতি ভাষায় কথা বলে।
ওশতোবিন গ্রামটি আরাস উপত্যকায় অবস্থিত হওয়ায় এবং মাগন ও কাস্পিয়ানের পশ্চিমা আবহাওয়ায় প্রভাবিত হবার কারণে এখানে নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা বিরাজ করে। আর এ কারণে এখানে সবুজ বাগ-বাগিচা গড়ে উঠেছে প্রচুর। এইসব বাগ-বাগিচার ফল-ফলাদি ইরানের বিভিন্ন বাজারে যায়।
ওশতোবিন গ্রামে চেরি ফল, যার্দালু, তুত ফল, ডালিম, মিষ্টি ডুমুর, আঙ্গুর, আখরোট, আপেল, নাশপাতি, পিচ ফল, ব্ল্যাক চেরি এবং মেডলারজাতীয় বিচিত্র ফলের বাগান রয়েছে। এই গ্রামের ফলমূল, বিশেষ করে চেরিফল ও যার্দালু আজারবাইজানের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানি হয়।
ওশতোবিন গ্রামের অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি হলো এই বাগবাগিচা আর পশুপালন। আরো একটি বিষয়ের জন্যে এ গ্রামের খ্যাতি রয়েছে, তা হলো সিল্ক উৎপাদন। এ গ্রামের বহু মানুষ রেশম পোকা চাষের কাজে নিয়োজিত। এ এলাকায় রেশম তৈরির বহু কারখানা রয়েছে।
গালিচা তৈরিও এখানকার লোকজনের আরেকটি প্রচলিত পেশা। এখানকার মহিলারাও বিভিন্ন রকম হস্তশিল্পসামগ্রী তৈরি করে থাকে। গালিচা বোনা তেমনি একটি হস্তশিল্প। গালিচা বোণার মাধ্যমেও এখানকার লোকজন বেশ আয় করে থাকে।
ঐতিহাসিক এই গ্রামের ঘরগুলো পাহাড়ের ঢালুতে অবস্থিত। এ কারণে এগুলোর নির্মাণশৈলিতে অনেক বেশি সতর্কতার চিহ্ন সুস্পষ্ট। এখানকার প্রতিটি ঘরের ছাদ অপর ঘরের উঠোন। বিশাল খোলা বারান্দা, তার পাশে সাদা রঙের কাঠের দরোজা, মাটির দেয়াল, ঘরের মূল দরোজার উপরের লেখা ইত্যাদি গ্রামগুলোকে আলাদা সৌন্দর্য দিয়েছে।
বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী