হাইল হাওর আপনাকে মুগ্ধ করবেই

হাইল হাওর আপনাকে মুগ্ধ করবেই
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১০:৪৭:১৯
হাইল হাওর আপনাকে মুগ্ধ করবেই
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
পড়ন্ত বিকেলে রক্তিম সূর্যের আলোয় লালচে আকাশ। রাখালিয়ারা গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছে। জেলেরা তীরে নৌকা ভিড়াচ্ছে। একদল জেলে নৌকার বৈঠা কাঁধে একপ্রান্তে জাল অন্যপ্রান্তে মাছের ঝুড়ি বেঁধে গাঁয়ের বাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। পাখির দল এপ্রান্ত হতে ওপ্রান্তে ছুটে চলছে। দেশী বিদেশী পাখির কিচির মিচিরে মুখরিত চারিপাশ।
 
আর কিছুক্ষণ পরই ডুবে যাবে লাল সূর্য। ঘনিয়ে আসবে সন্ধ্যা। এমনই অপরূপ দৃশ্য আর কোথাও নয় ধরা দেয় শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরে। শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী এই হাইল হাওর প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র ও জীবন জীবিকার বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ন জলাভূমি। মৌলভীবাজার উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন যথা-কালাপুর, শ্রীমঙ্গল, ভূনবীর ও মির্জাপুর নিয়ে বিস্তৃত এ হাওরের।
 
পর্যটক কিংবা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বরাবরই প্রিয় মৌলভীবাজার। কিন্তু এখানে যে চমৎকার একটি হাওর আছে, এটা খুব কম পর্যটকই জানেন। অবশ্য সেখানে ভ্রমণে যাওয়ার পর জানতে পারেন। স্থানীয় লোকজনের কাছে এ হাওরটি লতাপাতার হাওর নামেই পরিচিত। কারণ এখানে প্রচুর লতা এবং গুল্মজাতীয় গাছ রয়েছে।
হাইল হাওর আপনাকে মুগ্ধ করবেই
হাইল হাওরের আসল সৌন্দর্য হল এখানকার পাখি। বহুদিন ধরেই এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বারো মাসই হাইল হাওর মুখরিত থাকে পাখিদের কলতানে। আর এই কলতান বছরের যে কোন সময়কে ছাড়িয়ে যায় শীতকালে। এ সময় স্থানীয় পাখির পাশাপাশি অসংখ্য প্রজাতির পাখি এসে ভিড় জমায় এখানে। হাইল হাওরের একটা অংশে বেশ কিছু ছন জাতীয় গাছ রয়েছে। এসব গাছের আড়ালে পাখিরা ডিম পাড়ে। যারা এখানে বেড়াতে যান তারা নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব থেকে পাখি কিংবা পাখির বাসা দেখতে পারেন।
 
বর্ষা মৌসুমে হাইল হাওরের সুনীল জলরাশি চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। শুধু পানি আর পানি। হাইল হাওরের পানির প্রধান উৎস গোপলা নদী। উজানে বিলাসছড়া থেকে উৎপত্তি লাভ করে হাইল হাওরকে দ্বিখন্ডিত করে গোপলা নদী ভাটিতে বিজনা নদীর মাধ্যমে মেঘনার উধাংশের সাথে মিলিত হয়েছে। হাইল হাওরে গেলে আপনি এর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নৌকা ভ্রমনের উৎকৃষ্ট স্থান হল এই হাইল হাওর। ভোরে ঘুমন্ত হাইল হাওর যেন জেগে উঠে। হাওরের চারপাশে হাজার হাজার মৎস্যজীবির মাছ আহনরনের দৃশ্য অত্যন্ত মোহনীয়। বিকেলের হাইল হাওর থাকে যেন পাখিদের দখলে। সন্ধ্যায় হাইল হাওরে ভ্রমণ করলে মনে হবে সারা রাত কাটিয়ে দেই পাখিদের এ রাজ্যে।
 
বহুল পরিচিত বাইক্কা বিল হল হাইল হাওরের একটি মৎস্য অভয়াশ্রম। এখানে দর্শনাথীদের সুবিধার জন্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করেছে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন এবং ইউএসএআইডি’র আর্থিক সহায়তাপুষ্ট ম্যাচ। পর্যটক ও দর্শনার্থীর জন্য নির্মিত পর্যবেক্ষণ দ্বিতল বিশিষ্ট এ টাওয়ার থেকে দুরবীন ও বাইনোকুলার দিয়ে পাখি এবং বিশাল বিস্তৃত হাইল হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পর্যটকদের জানার জন্য টাওয়ারের বিভিন্ন তলায় রয়েছে পাখি ও মাছের ছবিসহ পরিচিতি।
 
যেভাবে যেতে হবে: শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়ক ধরে কালাপুর বাজার থেকে একটু সামনে এগুলেই বরুনা-হাজীপুর পাকা রাস্তার দেখা মিলবে। এ রাস্তায় প্রবেশ করে যেতে হবে হাজীপুর বাজারে। স্থানীয়দের কাছে এ বাজারটি ঘাটেরবাজার নামে পরিচিত। সেখান থেকে মোটর সাইকেলে বা পায়ে হেটে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হাইল হাওর। হাজীপুর বাজারে বেশ ক’জন গাইড রয়েছে। আপনি চাইলে গাইডের সাহায্যও নিতে পারেন। গাইড আপনাকে পুরো হাওর ও বাইক্কা বিল দেখতে সাহায্য করবে।
 
কোথায় থাকবেন: হাওর এলাকায় বিল ইজারাদারদের দোচালা কুটিরগুলোয় দু‘চারজন পর্যটক থাকার জন্য চমৎকার। তবে অবশ্যই বিল মালিকের অনুমতি নেয়া আবশ্যক। সবচেয়ে ভালো হয় বিল এলাকায় তাঁবু ফেলে রাত্রি যাপন। জোছনা রাতে তাঁবুতে যাপন, পাখি পর্যবেক্ষণ যে কোনও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটককে বিমোহিত করবে।
 
তাছাড়া শ্রীমঙ্গল যেহেতু খুব বেশি দূরে নয়, তাই শ্রীমঙ্গল ভাল কোন হোটেলে রাত্রিযাপন করেও হাইল হাওর পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। তবে সত্যিকার অ্যাডভেঞ্চার চাইলে হাওরের পাশের কুটির কিংবা টাবুতে থাকা উত্তম।
 
হাওর ভ্রমণের সেরা সময়: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় হাওর ভ্রমণের জন্য সেরা। এসময় এখানে প্রচুর সংখ্যায় পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে চারদিক মুখর থাকে। জলজ উদ্ভিদ, মাছপ্রেমীদের জন্য এটা সেরা মৌসুম।
 
খাওয়া দাওয়া: সঙ্গে আনা চাল-জলের রেশন হাওর এলাকার শ্রমজীবী মানুষকে সামান্য কিছু টাকা দিলে পছন্দ মতো টাটকা মাছের ঝোলের তরকারি দিয়ে তা পরিবেশন করবে অথবা ওদের সঙ্গেও সুস্বাদু খাবার শেয়ার করা যাবে অনায়াসে। এখানকার বাথানে গরু-মহিষের দুধও খুব সস্তায় পাওয়া যায়। সঙ্গে হালকা চা, নাশতা, বিস্কুট, পাউরুটি নিলে খুব ভালো হয়।
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com