বিএনপির চেয়ারপারসন ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরলেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে মনে করছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা।
তাদের মতে, খালেদা জিয়া লন্ডনে বড় ছেলে বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন ও আগামীর আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছেন। কারণ, দল পুনর্গঠন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির চেয়ারপারসন আবারো আন্দোলনে নামতে চান। গত ১৮ জুলাই রাজধানীতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। সে কারণে দেশে ফিরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল কমিটি গঠনের কড়া নির্দেশনা দিবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে পৌঁছান খালেদা জিয়া। সেখানে অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করা তারেক রহমান ও ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন তিনি। আগামী ২ অক্টোবর বেগম জিয়ার দেশে ফেরার কথা রয়েছে বলে শনিবার বিবার্তাকে জানিয়েছেন তাঁর প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
কমিটি নিয়ে সম্প্রতি জবি ছাত্রদলের একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে বিবার্তার এ প্রতিবেদকের কথা হয়। এ সময় তারা বলেন, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে বিএনপি বর্তমানে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে সুসংগঠিত বিএনপিকে আন্দোলনে নামতে হবে। আর আন্দোলনের মধ্য দিয়েই নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। তবে রাজধানীতে বিশেষ করে পুরান ঢাকা এলাকায় সে আন্দোলনকে সফল করতে হলে জবি ছাত্রদলকে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সে জন্য রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ছাত্রনেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করে জবি ছাত্রদলের কমিটি গঠন করতে হবে। আর সে কমিটি হতে হবে সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত।
জানা যায়, তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ শাখা (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্রদলের কমিটি গঠনে সিন্ডিকেটের প্রভাব ছিল সর্বজনবিদিত, যা থেকে এখনো বের হতে পারেনি সংগঠনটি। কেননা, বিগত কমিটিতেও (সজল-মুন্না) ছিল সিন্ডিকেটের প্রভাব। আর এ ব্যাপারটি যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে!
এদিকে, সিন্ডিকেটের প্রভাবে কমিটি হওয়ায় জগন্নাথের কমিটিগুলোতে যোগ্য ও ত্যাগীদের পরিবর্তে নিজেদের পকেটের লোক স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে আন্দোলন-সংগ্রামেও তেমন জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেনি জবি ছাত্রদল। বিএনপির বিগত দু’টি আন্দোলনে পুরান ঢাকার সরকারি কবি নজরুল কলেজ, কোতোয়ালি ও বংশাল থানা শাখা ছাত্রদল মাঝে মধ্যে মিছিল করলেও জবি ছাত্রদল ছিল রাজপথে অনুপস্থিত। এমনকি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’-তেও তাদেরকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
সূত্র মতে, জবির সিন্ডিকেটের ব্যাপারটিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলও নিরুপায়। কারণ, তারাও কোনো না কোনো সিন্ডিকেটের বদৌলতেই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের শীর্ষ নেতৃত্বে এসেছেন। ফলে সিন্ডিকেটের প্রভাব অক্ষুন্নই থাকছে। তবে সময়ের পরিক্রমায় জবির এসব সিন্ডিকেটে পরিবর্তন হলেও কোনো কোনো সিন্ডিকেটের প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু ছাত্রদলের বৃহত্তর স্বার্থে জবিসহ সব ইউনিটে যোগ্য ও ত্যাগীদের সমন্বয়ে সিন্ডিকেটমুক্ত কমিটি হওয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক ছাত্রনেতারা।
জানা যায়, তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) শাখা ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া বিএনপির তখনকার ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক (বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব) আমান উল্লাহ আমান ও সাগির আহমেদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এরপর এই প্রক্রিয়া সাগিরের একক নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তবে সে সময়ও আমানের প্রভাব ছিল। আর তখন পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক কমিটি হতো। অর্থাৎ ওই কমিটিগুলোতে শুধুমাত্র পুরান ঢাকার নেতারাই স্থান পেতেন। তবে সাগির আহমেদ নিহত হবার পর থেকে জগন্নাথ শাখা ছাত্রদলের কমিটি গঠনে আমানের একচ্ছত্র প্রভাব শুরু হয়। বর্তমানে আমানের সরাসরি প্রভাব না থাকলেও ওই সিন্ডিকেটের প্রভাব এখনো অটুট রয়েছে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা সাগির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। সাগির সিন্ডিকেটে আরও ছিলেন হামিদুর রহমান হামিদ। তবে তিনি আমানের লবিংও মেইনটেইন করতেন। পুরান ঢাকার ঠাঠাঁরিবাজারের ছেলে হামিদ জগন্নাথ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বর্তমান সভাপতি।
জানা যায়, জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদলের প্রায় প্রতিটি কমিটির শীর্ষ পদে আমান সিন্ডিকেটের লোক স্থান পেয়েছে। এমনকি নির্বাচনে পরাজিত হয়েও তাদের লোককে কমিটির শীর্ষপদে অন্তর্ভুক্ত করানোরও নজির রেখেছে। ব্যাপক জোরালো না হলেও বর্তমানেও এই সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে। বলতে গেলে, জবি ছাত্রদলের কমিটিতে এই সিন্ডিকেটের প্রভাব স্বীকৃত। আর ছাত্রদলের নেতাদের কাছেও এ তথ্য নতুন নয়।
আরো জানা যায়, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ও জগন্নাথ কলেজের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শরিয়তপুরের ছেলে মিয়া নূর উদ্দিন অপু (সেশন : ১৯৯২-৯৩), জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক বরিশালের ছেলে গোলাম মওলা শাহীন (সেশন : ১৯৯২-৯৩), ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জগন্নাথের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাদারীপুরের ছেলে আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন (সেশন : ১৯৯৪-৯৫), জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নরসিংদীর ছেলে বেলায়েত হোসেন (সেশন : ১৯৯৪-৯৫), জগন্নাথ কলেজের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক টাঙ্গাইলের ছেলে খলিলুর রহমান খলিল (সেশন : ১৯৯৪-৯৫), জগন্নাথের বর্তমান সভাপতি শরিয়তপুরের ছেলে ফয়সাল আহমেদ সজল (সেশন : ১৯৯৬-৯৭) ও জগন্নাথের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক পটুয়াখালীর ছেলে এবিএম মোহসীন বিশ্বাস (সেশন : ১৯৯৮-৯৯)- এরা সবাই তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন। সবাই আমান গ্রুপ মেইনটেইন করেন। আর জগন্নাথ ছাত্রদলে এরা সবাই কাজী রওনকুল ইসলাম টিপুর রিক্রুটমেন্ট। এদের সবার আদর্শিক গুরু হামিদুর রহমান হামিদ।
অন্যদিকে, আমান উল্লাহ আমানের এক নম্বর শিষ্য হচ্ছেন হামিদ। আর দুই নম্বর শিষ্য হলেন টিপু। টিপু জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে আমান গ্রুপের পক্ষে অপু ও বেলায়েত বিএনপির উচ্চ পর্যায় মেইনটেইন করে আসছেন। আর হামিদ ফিল্ড পর্যায়ে সক্রিয় রয়েছেন। এ তথ্য ছাত্রদলে ওপেন সিক্রেট।
বর্তমানে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর প্রভাব সর্বজন স্বীকৃত। জবিতে এ্যানী সিন্ডিকেটে আরও রয়েছেন জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ আব্দুল আজিজ ও বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. কাজী মাযহারুল ইসলাম দোলন। জবির কমিটি গঠনে বর্তমানে বিএনপির সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। এছাড়া জবিতে এবিএম পারভেজ রেজা ও আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল সিন্ডিকেটও সক্রিয়। আর হামিদুর রহমান হামিদ সিন্ডিকেটের প্রভাব তো রয়েছেই।
জানা যায়, আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ শাখা ছাত্রদলে বিএনপির ওই সময়ের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানের প্রভাব শুরু হয়। চার সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটিতে আমানের লোক হিসেবে আবদুল খালেক হাওলাদারকে আহ্বায়ক করা হয়। সাগির আহমেদ তখন জেলে থাকায় আমান নিজের পকেটের লোক দিয়ে এ কমিটি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে জগন্নাথে সাগিরের প্রভাবের কারণে তার বন্ধু আব্দুস সাত্তারকেও কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয়। বাকি দুই যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল্লাহ তালুকদার ও শামসুজ্জামান সুরুজও আমানের লোক ছিলেন।
এরপর সাগির আহমেদ জামিনে মুক্ত হয়ে আহ্বায়ক কমিটির খালেক, শহীদুল্লাহ ও সুরুজকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন। তখন জগন্নাথ কলেজে সাগিরের প্রভাব বিবেচনায় আমান তার সঙ্গে সমঝোতায় আসেন এবং সাগির আহমেদ ও হামিদুর রহমান হামিদকে ওই কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন।
জগন্নাথ কলেজে এরপর রওনকুল ইসলাম টিপুকে সভাপতি, আব্দুস সাত্তারকে সাধারণ সম্পাদক এবং এবিএম পারভেজ রেজাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে আংশিক কমিটি হয়। সভাপতি টিপু, আমানের এবং সেক্রেটারি সাত্তার ও সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ, সাগির আহমেদের লোক ছিলেন। এই টিপু-সাত্তারের সময়ে জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদলে নির্বাচনের মাধ্যমে ১৯টি ডিপার্টমেন্টাল (বিভাগীয়) কমিটি গঠিত হয়। আবাসিক হল না থাকায় তখন এই ডিপার্টমেন্টাল কমিটি দেয়া হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে।
এরপর আব্দুস সাত্তারকে সভাপতি এবং এবিএম পারভেজ রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ কলেজ শাখা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিও ছিল সাগির প্রভাবিত। সাগির তখন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন।
জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদলে এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয়। সাগির সিন্ডিকেট প্রভাবিত সে কমিটিতে এবিএম পারভেজ রেজা সভাপতি, জিয়াউর রহমান জিয়া সাধারণ সম্পাদক এবং ইমরান হোসেন মানিক সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তবে আমান ব্লকের আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন সেক্রেটারি পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার আট মাস অতিবাহিত হলেও লাল্টু (সাহাবুদ্দিন লাল্টু)-হেলালের (আজিজুল বারী হেলাল) নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটি জগন্নাথের ওই নির্বাচিত কমিটিকে অনুমোদন দেয় না। এরপর বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় জিয়াউর রহমান জিয়ার পরিবর্তে আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয় লাল্টু-হেলাল কমিটি। (ওই পরিবর্তনে আমান উল্লাহ আমান এবং তৎকালীন হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্ট মিয়া নূরউদ্দিন অপু সিন্ডিকেট কলকাঠি নাড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে)। পারভেজ-খোকন কমিটির পর সাগির আহমেদ নিহত হন।
এরপর জগন্নাথের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আমান সিন্ডিকেটের হাতে। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে প্রথম আহ্বায়ক কমিটি হয়। ১৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে গোলাম মওলা শাহীন আহ্বায়ক এবং খলিলুর রহমান খলিল সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হন। ওই কমিটির পুরোটাই ছিল আমান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত। লক্ষ্যণীয় যে, এই কমিটিতে পুরান ঢাকার বাইরে থেকে প্রথম নেতৃত্ব আসা শুরু হয়।
সর্বশেষ ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফয়সাল আহমেদ সজলকে সভাপতি, ওমর ফারুক মুন্নাকে সাধারণ সম্পাদক, রাজীব রহমানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, খন্দকার আল-আশরাফ মামুনকে যুগ্ম সম্পাদক এবং এবিএম মহসিন বিশ্বাসকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষিত হয়। এই কমিটিও সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি। সজল ছিলেন আমান সিন্ডিকেটের লোক। এ্যানী-আজিজ সিন্ডিকেটের লোক ছিলেন মুন্না। রাজীব ছিলেন পারভেজ-জুয়েল সিন্ডিকেটের অনুসারী। টুকুর অনুসারী ছিলেন মামুন। আর মহসিন বিশ্বাস ছিলেন হামিদ তথা আমান সিন্ডিকেটের লোক। জবি ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও (যদিও জবির নেতারা মনে করেন মেয়াদ দুই বছর) ওই সুপার ফাইভ কমিটি এখনো বহাল রয়েছে।
ছাত্রদলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, গত মাসের (আগস্ট) মাঝামাঝি নাগাদ কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), ঢাকা মহানগর ও জবি ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার জোরালো সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ঢাবির কমিটি গঠন নিয়ে ছাত্রদল নিয়ন্ত্রণকারী একটি সিন্ডিকেট ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ঢাবির কমিটি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আর এর প্রভাবে জবি ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আহ্বায়ক ও আংশিক-দুই ফরমেটেই ছাত্রদলের কমিটি হতে পারে। আংশিক কমিটি হলে তা পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আর আহ্বায়ক হলে সেটির কলেবর বড় হতে পারে। তবে সিনিয়রদের সমন্বয়ে কমিটি হলে সেক্ষেত্রে আহ্বায়ক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর তুলনামূলক জুনিয়রদের সমন্বয়ে কমিটি হলে তা পূর্ণাঙ্গ (আংশিক) হতে পারে। তবে শুধু জুনিয়রদের সমন্বয়ে কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
২০০৫-০৬ সেশনের ছাত্রদল নেতারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। জুনিয়র বলতে এই ’০৫-’০৬ সেশন এবং ২০০৪-০৫ সেশনের ছাত্রদল কর্মিদের বোঝানো হয়ে থাকে। জবিতে আহ্বায়ক কমিটি হলে এই দুই সেশনের ছাত্রনেতারা সে কমিটিতে যু্গ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই ব্যাচ থেকে নেতা নির্বাচন করা হতে পারে।
সিনিয়রদের সমন্বয়ে কমিটি হলে আহ্বায়ক হিসেবে জবির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কুমিল্লার ছেলে ওমর ফারুক মুন্নার (সেশন : ১৯৯৭-’৯৮) সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তিনি এ্যানী-দোলন-আজিজ সিন্ডিকেটের অনুসারী। এছাড়া আরও আলোচনায় রয়েছেন জবির বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আল আশরাফ মামুন (সেশন : ১৯৯৮-’৯৯) । মামুন কিশোরগঞ্জের ছেলে। তিনি টুকু-রাজীবের (ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজীব আহসান) লবিং মেইনটেইন করেন। জবির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম মহসিন বিশ্বাসও আলোচনায় রয়েছেন। বরিশালের ছেলে মহসিন বরিশাল বেল্ট মেইনটেইন করেন। এছাড়া তিনি আমান-হামিদ সিন্ডিকেটের আশীর্বাদপুষ্ট।
এই তিনজনের মধ্যে থেকে আহ্বায়ক হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও এ ক্ষেত্রে ওমর ফারুক মুন্না এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা যায়। আর মুন্না আহ্বায়ক হলে সেক্ষেত্রে খন্দকার আল আশরাফ মামুন ও এবিএম মহসিন বিশ্বাসের মধ্যে থেকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
সেক্ষেত্রে জবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আলোচনায় রয়েছেন- জগন্নাথ কলেজের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন মিঠু (সেশন : ১৯৯৯-২০০০)। মাগুরার ছেলে মিঠু ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদের অনুসারী। এছাড়া তিনি জগন্নাথের সাবেক সভাপতি ও সূত্রাপুর থানা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তারকেও মেইনটেইন করেন। এছাড়া রয়েছেন জবি ছাত্রদল নেতা মাহমুদুল হাসান রঞ্জু (সেশন : ২০০০-’০১)। বরিশালের ছেলে রঞ্জু বরিশাল বেল্ট মেইনটেইন করেন। তিনি রাজীব আহসানেরও অনুসারী। আলোচনায় রয়েছেন জবি ছাত্রদলের আরেক নেতা পুরান ঢাকার ছেলে আসিফ রহমান বিপ্লব (সেশন : ২০০১-’০২)। তিনি পারভেজ-জুয়েল সিন্ডিকেট মেইনটেইন করেন। তিনি ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তারেকুজ্জামান তারেকেরও অনুসারী। এছাড়া তিনি ডা. দোলনকেও মেইনটেইন করেন।
আলোচনায় আরও রয়েছেন জবি ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক (সেশন : ২০০১-০২)। বরিশালের ছেলে রফিক বরিশাল বেল্ট মেইনটেইন করেন। এছাড়া তিনি হামিদুর রহমান হামিদেরও অনুসারী। রয়েছেন জবি ছাত্রদলের আরেক নেতা নোমান (সেশন : ২০০১-০২)। এছাড়া রয়েছেন জবি ছাত্রদল নেতা জনিও (সেশন : ২০০১-০২)। তিনি আব্দুস সাত্তারের অনুসারী। জবি ছাত্রদলের আরেক নেতা ওমর ফারুক কাওসারও (সেশন : ২০০৩-’০৪) রয়েছেন। কাওসার নোয়াখালীর ছেলে। তিনি এ্যানী-দোলন-আজিজ সিন্ডিকেটের অনুসারী।
এছাড়া আরও রয়েছেন জবি ছাত্রদল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ওরফে মোটা মিলন (সেশন : ২০০৩-’০৪)। ঝিনাইদহের ছেলে মিলন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবু সাঈদ ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের অনুসারী। তবে মিলনের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জবি ছাত্রদল নেতা কাজী বেলাল হোসেন রাকেশেরও (সেশন : ২০০১-’০২) সম্ভাবনা রয়েছে। যশোরের ছেলে রাকেশ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের আশীর্বাদ পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
আলোচনায় আরও রয়েছেন পিরোজপুরের ছেলে জবি ছাত্রদল নেতা মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাফিজ (সেশন : ২০০৪-০৫)। রাজীব আহসানের অনুসারী মুস্তাফিজ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন জবি ছাত্রদলের আরেক নেতা সাখাওয়াৎ হোসেন খান (সেশন : ২০০৪-০৫)। সাখাওয়াৎ শরীয়তপুরের ছেলে। তিনি আমান-অপু-খোকন সিন্ডিকেটের অনুসারী। রয়েছেন জবি ছাত্রদল নেতা ঝিনাইদহের ছেলে আব্দুল মান্নানও (সেশন : ২০০৫-০৬)। তিনি আসাদুজ্জামান আসাদের অনুসারী। এছাড়া রয়েছেন জবি নেতা সাদিক (সেশন : ২০০৫-০৬)। সাদিক বৃহত্তর ফরিদপুরের ছেলে। তিনি আমান-অপু-খোকন সিন্ডিকেটের অনুসারী।
এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছেন জবি ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান শরিফ (সেশন : ২০০৫-০৬)। জামালপুরের ছেলে শরিফ ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির অনুসারী। আর মনি তৎকালীন হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্ট রুমনের বন্ধু। নরসিংদীর ছেলে জবি নেতা আবুল খায়ের ফরাজিও (সেশন : ২০০৫-০৬) রয়েছেন। তিনি ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের অনুসারী। আরও রয়েছেন জাকির হোসেন খান উজ্জ্বল (সেশন : ২০০৫-০৬)। উজ্জ্বল নেত্রকোনার ছেলে। তিনি পারভেজ-জুয়েল সিন্ডিকেটের অনুসারী।
তুলনামূলক জুনিয়রদের সমন্বয়ে জবি ছাত্রদলের কমিটি হলে তা পূর্ণাঙ্গ (আংশিক) হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রেও শীর্ষ পদের লড়াইয়ে খন্দকার আল আশরাফ মামুন ও এবিএম মহসিন বিশ্বাস থাকছেন। তবে কোনো কারণে কমিটির শীর্ষপদ ১৯৯৮-৯৯ সেশন থেকে না দেয়ার সিদ্ধান্ত হলে সেক্ষেত্রে মহসিন বিশ্বাসের পরিবর্তে রফিকুল ইসলাম রফিকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
এছাড়া আরও আলোচনায় রয়েছেন-আসিফ রহমান বিপ্লব, জনি, কাজী বেলাল হোসেন রাকেশ, ওমর ফারুক কাওসার, মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ওরফে মোটা মিলন ও মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাফিজ।
তবে রফিক, বিপ্লব ও কাওসারের মধ্য থেকে জবির সুপার থ্রি কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
জানা যায়, এ্যানী-দোলন-আজিজ সিন্ডিকেট ওমর ফারুক মুন্নাকে সভাপতি এবং ওমর ফারুক কাওসারকে সাধারণ সম্পাদক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, এবিএম মহসিন বিশ্বাসকে সভাপতি এবং রফিকুল ইসলাম রফিককে সাধারণ সম্পাদক করতে আমান-হামিদ সিন্ডিকেট তৎপর। আর পারভেজ-জুয়েল সিন্ডিকেট আসিফ রহমান বিপ্লবকে জবির শীর্ষপদে আনতে চান। এছাড়া খন্দকার আল আশরাফ মামুনকে জবির সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক বানাতে তৎপর রয়েছেন টুকু-রাজীব।
জবি কমিটি প্রসঙ্গে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বিবার্তাকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিগত দু’টি আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী এবং সংগঠনের প্রতি অনুগত, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মেধাবীদের সমন্বয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হবে।
জবি কমিটি গঠন নিয়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের সিন্ডিকেটের বিষয়ে আমরা অবগত নই। কেউ বা কোনো মহল এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে।’
জবির কমিটি প্রসঙ্গে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুনও সাধারণ সম্পাদকের সুরে কথা বলেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারুণ্যের অহংকার দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ছাত্রদলকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনের কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে শিগগিরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রদলের প্রতি অনুগত, ত্যাগী, পরীক্ষিত, মেধাবী ও আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ছাত্রনেতাদের সমন্বয়েই এ কমিটি গঠন করা হবে।
জবি কমিটি গঠন নিয়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মামুন বলেন, ‘জবিসহ ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের সিন্ডিকেটের কোনো অস্তিত্ব নেই।
জবির কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেটের তৎপরতা প্রসঙ্গে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ ইমরান বিবার্তাকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সিন্ডিকেটের কবলে রয়েছে। তবে শুধু জগন্নাথ নয়, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলও পুরোপুরি সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। আর জবির কমিটি কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের ধারা মাত্র। তাই সিন্ডিকেট মুক্ত না হলে ছাত্রদল কখনোই স্বাভাবিক ধারা তথা তার পুরানো ঐতিহ্যে ফিরতে পারবে না। সেজন্য ছাত্রদলের সাংগঠনিক নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এখনই এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলন বিবার্তাকে বলেন, জবি শাখা ছাত্রদলের কমিটি গঠনে কোনো সিন্ডিকেটের তৎপরতা সম্পর্কে আমি অবগত নই। এ ব্যাপারে এ্যানী (শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী) বলতে পারবে। তবে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় যদি কোনো সিন্ডিকেট জড়িত থাকে তাহলে সেটি ঠিক নয়। কারণ, ছাত্রদলের বৃহত্তর স্বার্থে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মেধাবীদের সমন্বয়ে কমিটি হওয়া উচিত। আর এটিই কাম্য।
জবি ছাত্রদলে সিন্ডিকেটের তৎপরতার বিষয়ে জানতে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া হামিদুর রহমান হামিদ, শেখ আব্দুল আজিজ, এবিএম পারভেজ রেজা ও আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের মুঠোফোনেও একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদেরকেও পাওয়া যায়নি।
বিবার্তা/আরকেএন/আরএন.