হাওয়া ভবনের কর্তারা কে কোথায়-১

হাওয়া ভবনের কর্তারা কে কোথায়-১
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৬, ১৬:২৮:৪৭
হাওয়া ভবনের কর্তারা কে কোথায়-১
বিশেষ প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+
দেশের রাজনীতিতে হাওয়া ভবনের নামটি বেশ প্রসিদ্ধ। এটি ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানের রাজনৈতিক অফিস। অফিসটি ঘিরে তখন মানুষের কৌতূহলের অন্ত ছিল না। কথিত আছে ওই ভবন থেকেই নিয়ন্ত্রিত হতো সরকার ও রাজনীতি। ২০০১ হতে ২০০৬ সালে যারা এই ভবন নিয়ন্ত্রণ করতেন তারাই বেশি সুবিধা নিয়েছেন খালেদা জিয়ার কাছ থেকে। হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্টরাই ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। 
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাদের গায়ে তখন হাওয়া ভবনের হাওয়া লাগতো তারাই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যেতেন। এমন অনেকের নাম আছে যারা শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু দুর্দিনে তারেক রহমান কিংবা খালেদা জিয়ার পাশে তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এসব মন্তব্য খোদ বিএনপির তৃণমুল নেতাদের মুখে মুখে। অবশ্য হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্ট অনেকে এখনো তারেক রহমানের আশেপাশে আছেন বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক সুদিন এলে তাদেরকে দেশের মাটিতে দেখা যাবে।  
 
বনানীর ১৩ নং সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়িটির নামই হাওয়া ভবন। লন্ডনপ্রবাসী হাওয়া বেগম ছিলেন এই বাড়ির মালিক। তার কাছ থেকে বাড়িটি ভাড়া নেন খুলনার সাবেক এমপি আলী আজগর লবী ও এওয়াইএম কামাল। ওই ভবনের ২য় তলায় ছিল খালেদা জিয়ার অফিস। কিন্তু তিনি সেখানে নিয়মিত বসতেন না। ২য় তলার আরেক রুমে বসতেন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও দলের তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং বর্তমানে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নাম ভাঙিয়ে এই হাওয়া ভবন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হতো সারাদেশ।
 
বিএনপির আমলে কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি ও তাঁর ঘনিষ্ঠজন এই ভবনের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখাতেন। এছাড়া হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক মন্ত্রী নন- এমন ব্যক্তিদের চেয়েও হাওয়া ভবনের নেতাদের ক্ষমতা বেশি ছিল। সেসব নেতার ভয়ে তটস্থ থাকতেন দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিকসহ সব দফতরের কর্মকর্তারা।
 
হাওয়া ভবনের দুর্নাম হলেও তদবির, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি হতো গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের আরেক অফিস থেকে। তার পাঁচ তলাবিশিষ্ট অফিসটি ছিল হাওয়া ভবন থেকে পূর্বদিকে বনানী লেকের পাড়ে।
 
একটি সূত্রে জানা যায়, হাওয়া ভবন নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর তারেক রহমান তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে হাওয়া ভবনে নিয়মিত আসতে নিষেধ করেন। এরপর মামুন বনানী লেকের পাড়ে ওই পাঁচতলার ভবনটি ভাড়া নিয়ে অফিস করেন। যেখানে বিভিন্ন কাজের জন্য বস্তায় বস্তায় টাকা নিয়ে আসা হতো বলে তখন অভিযোগ ছিল।
 
হাওয়া ভবন ও মামুনের অফিসে যেসব মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের দাপট ছিল, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিএনপির এই দুঃসময়ে দলের পাশে নেই। ওয়ান ইলেভেনের সময় কেউ গ্রেফতার হয়েছেন, আবার কেউ কেউ জিয়া পরিবারকে বিপদে রেখে পালিয়ে গেছেন। এখন কেউ বা দল ছেড়ে অন্য দল করছেন, আবার কেউ কেউ ব্যবসাবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বিএনপির কোনো কর্মকাণ্ডে তাঁদের দেখা যাচ্ছে না।
 
অনেকের প্রশ্ন, একসময় যাঁরা হাওয়া ভবন এবং তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে লাভবান হয়েছেন, লুটপাট করেছেন, দুর্নীতি করেছেন, তাঁরা এখন কোথায়?
 
হাওয়া ভবনের দাপুটে নেতারা হলেন, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, হারিছ চৌধুরী, ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল, রফিকুল ইসলাম বকুল, তৌহিদুল ইসলাম ওরফে আশিক ইসলাম, নুর উদ্দিন অপু, আলী আজগর লবী, এমএএইচ সেলিম (সিলভার সেলিম), সাজ্জাদুল ইসলাম জয়সহ বেশ কয়েকজন।
 
সূত্রে জানা যায়, তারেক রহমানের সবচেয়ে কাছের লোক ছিলেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। হাওয়া ভবনের সবচেয়ে বিতর্কিত এই মামুন তারেক রহমানের বাল্যবন্ধু। হাওয়া ভবন ও তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতির শীর্ষে ছিলেন এই মামুন। বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলায় ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
 
বিএনপির আমলে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনি ছিলেন হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। হাওয়া ভবনে তাঁর নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তারেক রহমানের সঙ্গে একত্রে তারাবি নামাজ পড়তেও তিনি হাওয়া ভবনে যেতেন বলে নেতাকর্মীদের বলে বেড়াতেন। সিএনজি অটোরিকশা খাতে তারেক রহমানের নাম করে বিপুল অর্থ আদায় করেছেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
 
এছাড়া তাঁর স্ত্রীর মানবাধিকার সংগঠনের অফিসের জায়গাও বিএনপির আমলে নেয়া। সেই নাজমুল হুদা এখন আর বিএনপির সঙ্গে নেই। তিনি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির বিপক্ষে কথা বলেছেন, বিভিন্ন দল গঠন করেছেন। সম্প্রতি গুজব ছড়িয়েছে নাজমুল হুদা মহাজোটে যোগ দিচ্ছেন। 
 
হারিছ চৌধুরী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। হাওয়া ভবনে তাঁর বেশ প্রভাব ছিল। তখন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৩৭টি বাড়ি তিনি নিলামে বিক্রি করে দেন। এছাড়া সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে যে বাড়িটিতে তিনি থাকতেন, সেই বাড়িটি নিলামে বেনামে ক্রয় করেন। তবে যে ব্যক্তির নামে বাড়িটি ক্রয় করেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি দলিল জমা দিয়ে দেন, যা পুনরায় সরকার নিয়ে নেয়। বাংলাদেশে দৃশ্যমান তার কিছুই নেই। দেশের বাইরেও আছে কি-না তা জানা যায়নি। ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে হারিছ চৌধুরীর খোঁজ কেউ জানে না।
 
একটি সূত্র জানিয়েছে, ওয়ান ইলেভেনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িতে করে তাকে ভারতে পার করে দিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে তিনি কোথায় আছেন তা কেউই জানে না। তবে অনেকের ধারণা, তিনি ভারতে নেই। অন্য কোনো দেশে আছেন।
 
(হাওয়া ভবনের পরবর্তী ইতিহাস জানতে চোখ রাখুন বিবার্তায়)
 
বিবার্তা/এমহোসেন.
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2025 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com