‘ওদের’ প্রিয় খাবার বাংলাদেশী কাঁকড়া

‘ওদের’ প্রিয় খাবার বাংলাদেশী কাঁকড়া
প্রকাশ : ২৫ মে ২০১৬, ১০:৫৬:০১
‘ওদের’ প্রিয় খাবার বাংলাদেশী কাঁকড়া
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
প্রিন্ট অ-অ+
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি চিংড়ির চাহিদায় কৌশলগত কারণে কিছুটা ভাটা পড়লেও সেই স্থান দখল করছে দেশীয় কাঁকড়া। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্রমেই এদেশের কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ছে। কাতার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, ভিয়েতনাম, ইউকে, ইউএই, সৌদি-আরব, তাইওয়ান, হংকং নেদারল্যান্ড, জার্মান ওমানসহ বিশ্বের নামীদামি হোটেলগুলোতে খাবারের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশি এই পণ্যের। বর্তমানে তাদের প্রিয় খাবারের তালিকায় যুক্ত হয়েছে এই কাঁকড়া। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্ব এ খাবারের চাহিদা বেড়েছে বলেই প্রতিনিয়ত কাঁকড়া রপ্তানি বাড়ছে।
 
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)এর সূত্র মতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের  প্রায় এক লাখ ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হয়। ২০১৫এর  জুলাই থেকে ২০১৬ মার্চ পর্যন্ত যার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ডলারে। বছর শেষে এর পরিমাণ দুই লাখ ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন ইপিবি কর্তৃপক্ষ।  
 
সূত্র মতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে  ৫৮ হাজার ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হয় আর ২০১১-১২ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৭২ লাখ ডলারের কাঁকড়া। কা঳কড়া ব্যাবসায়ীরা জানান  প্রতিকেজি ছোট কাঁকড়া  ৬০-৮০ টাকায় সংগ্রহ করে মোটাতাজা করা হয়। তিন মাসেই ওই পুরুষ কাঁকড়া ৪০০-৬০০ গ্রাম এবং মহিলা কাঁকড়া ১৮০-২৫০ গ্রাম ওজন বেড়ে যায়। পরিপুষ্ট কাঁকড়া ৯০০শ' থেকে হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। দেশি কাঁকড়া মোট ৫টি গ্রেডে বিক্রি করা হয়। সাধারণত অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার সময় ব্যবসা জমজমাট থাকে। আবার শীত মৌসুমে মহিলা কাঁকড়ার চাহিদা বেশি থাকে।
 
বাংলাদেশি কাঁকড়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ১০ পা বিশিষ্ট কাঁকড়ার। এই কাঁকড়া সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় খুলনা অঞ্চলে। ১৯টি দেশে রপ্তানি হয় খুলনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের ১০ পা বিশিষ্ট চিংড়ি প্রজাতির কাঁকড়া। এতে বছরে আয় হয় ২২৫ কোটি টাকা।  
 
এই কাঁকড়া ইতিমধ্যে রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। খুলনাসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে  প্রচুর কাঁকড়া আহরণ করা হয়। আমাদের দেশের খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, ডুমুরিয়াও বটিয়াঘাটা  সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেভাটা ও তালাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঁকড়া চাষ হয়। এসব কাঁকড়া, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, কুয়েত, কাতার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, ভিয়েতনাম, ইউকে, ইউএই, সৌদি-আরব, তাইওয়ান, হংকং নেদারল্যান্ড, জার্মান ওমান, বাহারাইন, উগান্ডা, হন্ডুরাস, ইউএসএ ও ভারতে উপকূলীয় অঞ্চলের রপ্তানি করা হয়ে থাকে। 
 
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো রেজাউল আলম মণ্ডলের মতে, উপকূলীয় অঞ্চল থেকে কাঁকড়া বেশি রপ্তানি হয়।  সেই জন্য কাঁকড়া উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে আরও সচেতন হওয়া  প্রযোজন। তিনি জানান কাঁকড়া রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর ইনকাম করতে পারে। এ দেশ কাকড়া রপ্তানির জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। 
 
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রজেন ফুডস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ)এর নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাশার বিবার্তাকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশিও কাঁকড়ার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুয়ায়ী এর উৎপাদন হচ্ছে না।  সে দিকে বিবেচনা করে কাঁকড়া চাষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার। এছাড়া কাঁকড়া চাষিদের সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্পসুদে  ঋণ দিলে  তারা কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠবেন।  এতে দেশ এবং চাষি উভয়ে লাভবান হবেন।
 
দেশে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয় ১৯৭৭ সালে ২০০০ ডলার আয়ের মধ্যে দিয়ে। সর্বশেষ যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫২০ টনে। টাকার অংকে যার পরিমাণ ২২৫ কোটি টাকা। 
 
বিবার্তা/নাহিদ/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com