উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, জিএসপি সুবিধা বন্ধ, গ্যাসসংকট, ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়া, বিদেশিদের অনীহাসহ বিভিন্ন কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের পোশাক শিল্প। বর্তমানে দেশের ৩১৯টি পোশাক কারখানা হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোনো সময় এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর সেটা হলে দেশের পোশাকশিল্পের অস্তিত্ব নিয়ে শংকা আরও জোরদার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন কারণে সক্ষমতা হারিয়ে গত তিন বছরে ৬১৮টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে আরো ৩১৯টি কারখানা। অন্যদিকে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাওয়া আরো প্রায় ৬০০ কারখানাকর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবসা সংকুচিত করে ফেলছে। ফলে উৎপাদন যেমন কমে গেছে তেমনি কমে গেছে আয়ও।
বর্তমানে পোশাকশিল্পে উৎপাদন খরচ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে। অন্যদিকে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশি মুদ্রা শক্তিশালী হওয়ায় এই শিল্পের অবস্থান আরো নড়বড়ে হয়েছে।
গত চার বছরে ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশিদের চোখ পড়ছে প্রতিযোগী দেশগুলোতে। অন্যদিকে অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের মাধ্যমে কারখানাগুলোকে রিমেডিয়েশন প্ল্যান দেয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন করতে একটি ক্ষুদ্র বা মাঝারি শ্রেণীর কারখানা মালিককে খরচ করতে হয় পাঁচ থেকে ১০ কোটি টাকা। এসব কারণে মালিকদের মধ্যে এ শিল্পের প্রতি অনীহা বাড়ছে।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে এই শিল্পের ওপর কর ধরা হয়েছে দেড় শতাংশ। এতে শিল্পের বিরাজমান সংকট আরো প্রকট হবে বলে মনে করছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। অন্যদিকে বাজেটে রপ্তানি খাতে প্রণোদনা হিসাবে ৪৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। মালিকদের মতে, শুধু পোশাকশিল্পের জন্যই বরাদ্দ রাখা দরকার ৫০০০ কোটি টাকা। যে কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাকশিল্পের ওপর আরোপিত কর কমানোর অনুরোধ করেছে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।
প্রস্তাবিত বাজেটে সব ধরনের রফতানির ক্ষেত্রে উৎসে কর ০.৬০ থেকে বাড়িয়ে ১.৫০ করা হয়েছে, যা পোশাকশিল্পের জন্য হুমকি বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি আরোপিত করের হার কমিয়ে ০.৩০ এ আনার অনুরোধ করেন।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, উৎসে করের পরিমাণ ০.৬০ থেকে বাড়িয়ে ১.৫০ শতাংশ করা এ শিল্পের জন্য সাংঘর্ষিক। এটা পোশাক শিল্পের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে আরো সচল করার জন্য পোশাক শিল্পের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আশা করি, সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন।
বিবার্তা/নাহিদ/ মৌসুমী