সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি মন্ত্রিপরিষদ থেকে দলের সদস্যরা বের হয়ে আসুক। জাতীয় পার্টি সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করুক। কিন্তু তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি আমলে না নিয়ে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদে থাকতে চায়। শুধু তাই নয়, আরো দু’জন সিনিয়র নেতাকে মন্ত্রী করার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে তদবির করা হচ্ছে বলেও দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সম্প্রতি বিবার্তাকে জানান, মন্ত্রীপরিষদ ছাড়ার জন্য পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। এ নিয়ে বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এ মন্ত্রীপরিষদ ছাড়ার বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যানকে একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সময়মত তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা তাকে সহযোগিতা করবো। পার্টির চেয়ারম্যান অতীতে যত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের স্বার্থে নিয়েছেন, মেনে নিয়েছি। ভবিষ্যতেও মেনে নেব।
রুহল আমিন হাওলাদার বলেন, আমাদের কাছে দল এবং জনগণের স্বার্থ বড়। কে মন্ত্রী হল এটা বর্তমানে আমাদের কাছে বিচার্য নয়। তবে সরকারের জাতীয় পার্টি থাকাতে দল উপকৃত হচ্ছে কিনা তা বিচারের ভার সকল নেতাকর্মীর ওপর ছেড়ে দিলাম।
জানা যায়, সরকারেই থাকছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। মন্ত্রিপরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে দলটি। এ ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা না দিলেও আপাতত চুপ থাকার কৌশল নিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এইচ এম এরশাদ মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং দলের তিনজন প্রেসিডিয়াম সদস্য মন্ত্রিপরিষদে থাকায় ‘সরকারি’ না ‘বিরোধী দল’ এমন আত্মপরিচয় সংকট। এইচএম এরশাদ প্রতিনিয়ত সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করলেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়ায় বিরোধী দলের প্রধান হিসেবে তা আমলে নিচ্ছেন না খোদ দলের নেতাকর্মীরাই। পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার দলকে সংগঠিত করার জন্য সারা দেশে একের পর এক কর্মসূচি পালন করে চললেও বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারছে না।
জানা যায়, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী, মজিবুল হক চুন্নু শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও মশিউর রহমান রাঙ্গা সমবায় মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। নেতাকর্মীরা বলছেন, জাতীয় পার্টিতে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক নিপীড়ন-নির্যাতন, কিংবা ধরপাকড় সামলাতে না হলেও শুধু ‘সরকারি দল’ না ‘বিরোধী দল’ এ রকম আত্মপরিচয় সংকটে থাকার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না।
অথচ এরশাদের রয়েছে অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার। বর্তমান আত্মপরিচয় না থাকায় ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে দলটি। জাপা সরকারি দল না বিরোধী দল, বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ার কারণে অনেক নেতাকর্মী দল ছাড়ছেন।
এদিকে দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সংসদে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, মন্ত্রিপরিষদ ছাড়ার বিষয়ে ভাবছেন তিনি। আর পার্টির চেয়ারম্যান বলেছেন, এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিশালী করা। আগামী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় যাওয়া। এ দিকে দীর্ঘদিনের মন কষাকষি ও সব মান অভিমান ভুলে আবারো একসাথে পথ চলছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং তার সহধর্মিনী ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ।
জাপার একটি সূত্র দাবি করেছে, পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ তার ভাই জি এম কাদেরসহ তার দলের মোট তিনজনকে নতুন করে মন্ত্রিত্ব দেয়ার আবদার জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দূতিয়ালী করতে জাপা থেকে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া একজন প্রতিমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন এরশাদ। রওশন এরশাদও চান আরো মন্ত্রিত্ব। আর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বিষয়ে দাবি না মানায় ক্ষোভ বাড়ছেই তৃণমূলে।
বিবার্তা/বিপ্লব/জিয়া