জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ দেশের ছোট-বড় সকল দল রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি বারবার আহবান জানাচ্ছে। কিন্তু সরকার জাতীয় ঐক্যের আদলে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার চেয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে সামাজিক ঐক্য গড়ে তোলার ওপর বেশি জোর দিচ্ছে।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর থেকে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঢাকাসহ সারা দেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, ধর্মীয়সহ বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় প্রতিদিনই জঙ্গিবাদবিরোধী সভা সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে বলেন, বিএনপিসহ কয়েকটি দল জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে। জাতীয় ঐক্য মানে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঐক্য। কিন্তু বিএনপি বা তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরণের রাজনৈতিক ঐক্য প্রয়োজন আছে বলে আওয়ামী লীগ মনে করে না। আওয়ামী লীগ চায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে ঐক্য ইতিমধ্যে হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ-মানববন্ধন হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ অংশ নিচ্ছে। আমরা চাই, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এভাবে যে সামাজিক ঐক্য গড়ে উঠেছে তা সামনের দিনে আরো জোরদার করতে।
সম্প্রতি সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারী-কর্মকতারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একযোগে এক ঘন্টার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এই কর্মসূচিতে অন্তত ৩০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে।
এছাড়া, চিকিৎসক, নার্স, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, শ্রমিক, গার্মেন্টকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে গত এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ধরণের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আর এই কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর সহযোগিতা করছে। এছাড়া দলগতভাবে আওয়ামী লীগও এই ধরণের কর্মসূচি পালনে সার্বিক সহযোগিতা করছে।
জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার হওয়ায় এই দুই দিন সারা দেশে জঙ্গিবাদবিরোধী সভা-সমাবেশ-মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে পেশাজীবী সংগঠনগুলো। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনও প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজনের জন্য শুক্রবারকে বেছে নেয়।
গত শুক্রবার রাজধানীতে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বড় ধরণের সমাবেশ ও মিছিল করেছে।একই দিনে অন্যান্য অরাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগেও সারা দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী কয়েক শ’ মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সমাবেশ করেছে। নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান সমাবেশে অংশ নেন। বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় কনভেনশন করেছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন মোর্চার সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী। অংশ নেন ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর আহম্মেদ, অধ্যাপক শ্যামলী শীল, সামিনা লুতফা নিত্রা, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া, ফয়জুল হাকিম লালা, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকী, মোশারফ হোসেন নান্নু, মোশরেফা মিশু, হামিদুল হক, সাংবাদিক গোলাম মোর্তুজা প্রমুখ।
এছাড়া বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাঘর আসর, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ছাত্রলীগ. ছাত্র ফ্রন্ট, মাদ্রাসার বিভিন্ন সংগঠন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ, কলেজ শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন অরাজনৈতিক শ্রমিক, কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠন, নাট্যসংগঠন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বিভিন্ন এলাকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, জেলা উপজেলাভিত্তিক অরাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে গত এক মাস ধরে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
শনিবারও জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক বলেছেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্যে সামাজিক ঐক্য গড়ে উঠেছে। এই ঐক্য আরো জোরদার করতে চাই।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসবিরোধী যে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সামাজিক, ধর্মীয়, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের রাখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বিবার্তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিটি থানায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আমরা চাই এই ইস্যুতে জোরদার সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলতে। এজন্য আমাদের কমিটিতে আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সামাজিক, পেশাজীবী ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের রাখা হচ্ছে।
বিবার্তা/বিপ্লব/মৌসুমী/হুমায়ুন