সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে লাগাম টানার উদ্যোগ

সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে লাগাম টানার উদ্যোগ
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০১৬, ১৭:৪৪:৩১
সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে লাগাম টানার উদ্যোগ
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+
বেড়েই চলেছে সঞ্চয়পত্রের চাহিদা। মুনাফার হার বেশি, তাই বিক্রিতেও উল্লম্ফন। সরকার প্রতিবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করে, শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয় তার চেয়ে অনেক বেশি। তা্ই বিক্রির লাগাম টানতে কমিটি গঠন করেছে অর্থমন্ত্রনালয়। ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করেই করা হবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার।  
 
ব্যাংকে যেখানে আমানতের সুদহার সাড়ে ছয় শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেখানে সঞ্চয়পত্র কিনলে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ এক লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রাখলে মাস শেষে ব্যাংকে মুনাফা মেলে প্রায় ৭০০ টাকা। আর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে মুনাফার পরিমাণ ৯৬০ টাকা। মুনাফার হারের এই তারতম্যের কারণে একদিকে আমানতকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও বাড়ছে সরকারের বোঝা। তাই গত বছরের (২০১৫) মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমিয়ে দেয়া হয় ২ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, তিন মাস পর পর সুদের হারের সমন্বয় হবে। কিন্তু এক বছর পার হলেও সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে, সম্প্রতি সুদহার নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করেছে অর্থমন্ত্রনালয়। এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ চলছে।
 
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার পুনঃনির্ধারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুস সাকিবকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা নিযুক্ত হয়েছেন। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এই কমিটির প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
 
জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০১৬ অর্থবছরেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় সঞ্চয়পত্র। তার আগের দুই বছর অর্থাৎ ২০১২ ও ২০১৩ সালে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। ২০১১-১২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নীট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার কোটি টাকা। বিক্রি হয় মাত্র ৪৭৯ কোটি টাকার। আর পরের বছর ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিক্রি হয় ৭৭২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। অথচ সেই অর্থবছরে বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭,৪০০ কোটি টাকা। 
 
২০১৩-২০১৪ অর্থ বছর থেকে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ওই বছরে আট হাজার কোটি টাকার বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বিক্রি হয় ১১,৭০৭ কোটি টাকার। পরের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২১ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে বিক্রি হয় ২৮,৭৩২ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকার বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বিক্রি হয় ৩৩,৬৮৮ কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকার।  
 
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, বর্তমানে ব্যাংকের আমানতে সুদহার বেশ কম, সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ সেদিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু ব্যাংকের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করলে সেটা ভুল হবে। কারণ, সাধারণ মানুষ, যারা বড় ধরণের বিনিয়োগ করতে পারবে না বলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। এজন্য শুধু অর্থনৈতিক লাভের দিক না দেখে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তাই এ মুহূর্তে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টেনে ধরা যুক্তিসঙ্গত নয়।   
 
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com