সংখ্যা তত্ত্ব সম্পর্কে অনেকের কম বেশি ধারনা রয়েছে। শোনা যায় সেই সংখ্যা তত্ত্ব মনে রেখেই করা হয় জার্সি নম্বর। আসলে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ক্রিকেটে কখনো জার্সি নম্বর ব্যবহার করা হয়নি। ফুটবল খেলাতে বরাবর ব্যবহার করা হয় এই জার্সি নম্বর। সেদিক থেকে পিছিয়ে ছিল আমাদের ক্রিকেট অঙ্গন। ফুটবলে যেমন জার্সি নম্বর দিয়ে একটি খেলোয়াড়ের খেলার পজিশন বোঝা যায় ক্রিকেটে তেমনটি নয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের দিকে নজর দিলে আমরা দেখতে পাব অধিনায়ক মাশরাফি এখন পরছেন জার্সি নম্বর ২। তিনি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ২০ নম্বর জার্সি দিয়ে পড়ে সেটি বদল করে এখন পরছেন ২ নম্বর জার্সি।
জাতীয় দলের অন্যতম পেসার তাসকিন পরছেন ৩ নম্বর জার্সি। তাসকিনকে জিজ্ঞেস করলে জানা যায় এই রহস্য। মাশরাফিকে গুরু মানা তাসকিন গুরুর পরের স্থানেই রেখেছেন নিজেকে। এইজন্যই নিয়েছেন জার্সি নম্বর ৩। একই রকম বক্তব্য শোনা গেল ৪ নম্বর জার্সি পরাহিত আল আমিনের কাছে। গুরুর থেকে ২ গুণে রয়েছেন তিনি। মূলকথা, মাশরাফিকে অনুকরণ করেই তাদের এই জার্সি নাম্বার লেখা।
অন্যদিকে তামিম ইকবালের পছন্দের নম্বর ২৮ তবে তিনি ২৯ নম্বর জার্সি দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। পড়ে অবশ্য নম্বর খালি পেয়ে পরিধান করেছেন পছন্দের ২৮ নম্বর। সাকিব আল হাসানের দিকে তাকালে দেখব বিসিবির দেয়া ৭৫ নম্বর জার্সি নিয়েই তিনি এখনও খুশি আছেন।
মুশফিকুর রহিমের পছন্দের জার্সি নম্বর ৯। ব্রায়ান লারা’র জার্সি নম্বর পরবার ইচ্ছা ছিল তার। তবে যখন তিনি জাতীয় দলে প্রবেশ করেন, আশরাফুল ছিলেন ৯ নম্বর জার্সির খেলোয়াড়। বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের উত্তর, ‘বোর্ড থেকে ১৫ দিয়েছে, সেটাই রেখে দিয়েছি। আমি অবশ্য কিছুদিনের জন্য ৯ নম্বর পরেছি। পরে আবার ১৫ নম্বরে ফিরে গেছি।’
মুশফিকের কাছে ‘১৫’ যেমনই হোক, ইমরুল কায়েস-শুভাগত হোমের খুব ইচ্ছে ছিল নম্বরটা পাওয়ার। ‘জাতীয় দলে আসার আগে প্রিয় নম্বর ছিল ১৫। কিন্তু মুশফিকের সেটি থাকায় উল্টে “৫১” নিয়েছি’—বলছিলেন শুভাগত। ইমরুল আগে ‘৬২’ ব্যবহার করতেন। পরে যে ‘৪৫’ নিয়েছেন সেটির পেছনে আছে ১৫-এর প্রভাব, ‘গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে ৪৫ ব্যবহার করছি। সিরিজটা আমার দারুণ গেছে। মনে হয়েছে ৫ আমার জন্য সৌভাগ্যের নম্বর। যদি পেতাম ১৫-ই নিতাম। কিন্তু ওটা তো মুশফিকের। ৫ সংখ্যাটার প্রতি ভালো লাগা থেকেই ৪৫ নিয়েছি। ৫ তো থাকল।’
পছন্দের জার্সি পাননি মাহমুদউল্লাহও। প্রিয় খেলোয়াড় অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের ‘৩৯’ তাঁর বেশি ভালো লাগত। কিন্তু পরে ‘৩০’-এর সঙ্গে কীভাবে যেন মাহমুদউল্লাহর বন্ধনটা দৃঢ় হয়ে গেল, ‘আমি চাইনি, জানিও না, ৩০ নম্বর পেলাম। এই জার্সিতে অনেক সাফল্য পেয়েছি। নম্বরটা তাই ভীষণ ভালো লেগে গেছে।’
বিকেএসপিতে পড়ার সময় সৌম্য সরকারের রোল নম্বর ছিল ৪৫৯। প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভালোবাসা থেকেই বাঁহাতি ওপেনারের জার্সি নম্বর ৫৯। অবশ্য এ জন্য তাঁকে ‘৪’ ফেলে দিতে হয়েছে। নিজেকে ‘নম্বর ওয়ান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই কি ‘১’ নিয়েছেন সাব্বির রহমান? একগাল হাসলেন বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, ‘নাম্বার ওয়ান হতে হবে, এমন ভাবনায় ‘১’ নেওয়া নয়। তবে এখন ভাবনায় ঢুকে গেছে, ভবিষ্যতে এক নম্বরই হতে হবে। এটা আমার সৌভাগ্যের জার্সি। এর আগে ৯৯ ও ৬৫ নম্বর পরেছি। তবে ১ নম্বরই বেশি মানিয়ে গেছে।’
নাসির হোসেন মানেই মজার কিছু। তাঁর জার্সি নম্বরেও সেটির প্রতিফলন—৬৯! নাসির জার্সিরহস্য উন্মোচন করলেন এভাবে, ‘৬৯ দেখতে সুন্দর লাগে। তবে আমার পছন্দ ছিল “০০”। হার্শেল গিবস পরত দেখে আমি আর এটা নিইনি। ৬৯ মনে হয় না কেউ পরেছে। আমার অন্তত চোখে পড়েনি।’ বাংলাদেশ দলের ৬৬তম টেস্ট খেলোয়াড় এনামুল হক। সব সংস্করণেই তাঁর জার্সি নম্বর তাই ৬৬।
মুস্তাফিজুর রহমানের ‘৯০’, আরাফাত সানির ‘৬’, মুমিনুল হকের ‘৬৮’, রুবেল হোসেনের ‘৩৪’ নম্বরের অবশ্য বিশেষ কোনো গল্প নেই। বিসিবি থেকে দেওয়া সংখ্যাটাই আপন করে নিয়েছেন তাঁরা।
বিবার্তা/প্লাবন