শুয়োপোকা সুস্বাদু খাবার- এ ধারণা হয়তো সবার মনে নাও হতে পারে। তবে মধ্য আফ্রিকায় এটি প্রোটিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ সুস্বাদু খাবার হিসেবে পরিচিত। আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনের বাজারগুলোতে ছোট ছোট শুয়োপোকার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য জিনিসের চেয়ে এগুলোর দিকেই অধিকাংশ ক্রেতার নজর থাকে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
ক্যামেরুনে শুয়োপোকাদের প্রোটিনের অন্যতম উৎস হিসেবে ধরা হয়। দেশটিতে অনেকে এটি রান্না করে, আবার অনেকে ভেজে খান। এসব পোকা মাছের পরিপূরক খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। দেশটিতে প্রতি তিনজন শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভোগে। কারণ পুষ্টিকর খাবার তারা গ্রহণ করতে পারে না, ফলে শারিরীক ও মানসিকভাবেও এসব শিশুরা বেড়ে উঠছে না। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই শুয়োপোকা ক্যামেরুনের শিশুদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের উৎস হতে পারে।
ক্যামেরুনের একটি গ্রামের একজন পরিসেবক মেবেদে দিউদোনে বলছেন- ‘আমাদের দেশের শিশুরা যদি পাম গাছ থেকে উৎপাদিত এসব শুয়োপোকা নিয়মিত খায় তাহলে আর তাদের শারীরিক অপুষ্টি থাকবে না। কারণ প্রোটিনসমৃদ্ধ প্রাণীদের মধ্যে শুয়োপোকা অন্যতম। প্রোটিনের চাহিদা মিটলে অপুষ্টির সমস্যা একদম হারিয়ে যাবে।’
কিন্তু সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় বাজারেও এর দাম বাড়ছে। বাজারে এক ঝুড়ি শুয়োপোকা প্রায় ৪ ডলারে বিক্রি হচ্ছে যা অন্য সব মাংসের চেয়ে বেশি। এসব শুয়োপোকা খুঁজে পাওয়াটাও খুব একটা সহজ নয়। ঘন বনজঙ্গলের ভেতর পাম গাছের ডালে থাকে এসব শুয়োপোকা। তবে শুয়োপোকার উৎপাদন বাড়াতে ক্যামেরুনে নতুন একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
‘লিভিং ফরেস্ট ট্রাস্ট’এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জন মোয়াফোর বলেন, ‘এটি খুব সফল একটা ঘটনা। প্রথমত কেউ জানতেনই না যে শুয়োপোকা বৈজ্ঞানিকভাবে উৎপাদন করা যায়। আমরা যখন এই ধারণা স্থানীয় লোকদের বললাম তারা আমাদের কথা বিশ্বাসই করছিল না। আমাদের বুঝাতে হয়েছে যে তাদের প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে আমাদের এই উদ্যোগ। আর আমার মনে হয় বৈজ্ঞানিকভাবে এই শুয়োপোকা উৎপাদনের ফলে এখানকার মানুষের অনেক লাভ হবে, তাদের জীবনমান আরও উন্নত হবে।’
নতুন উপায়ে এই পোকা উৎপাদনে দরকার একটি প্লাস্টিক বক্স। প্লাস্টিক বক্সের ভেতরে রাখা পাম গাছের ডালের মধ্যে যে শুয়োপোকা জন্মায় তা বনজঙ্গলের তুলনায় আট থেকে দশ গুণ বেশি। একজন চাষী মিশায়েল সোনগুই বলছেন-এ প্রক্রিয়ায় তার সময় বেঁচেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি এখন মাসে মাত্র চারবার জঙ্গলে যাই। কিন্তু আগে হয়তো প্রতিদিনই আমাকে জঙ্গলে যেতে হতো। বক্সের মধ্যে পাম গাছের ডালগুলো প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দেয়ার পর সেখানে আমার অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই। আমার অনেক সময় বেচে যাচ্ছে। এভাবে পাম গাছ থেকে শুয়োপোকা উৎপাদন করে আমি খুবই গর্বিত।’
মিশায়েল এই পোকা কাঁচা খেতেই পছন্দ করেন কিন্তু তার পরিবার এটি রান্না করে খেতেই বেশি আগ্রহী।
ক্যামেরুনের তিনটি গ্রামে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আর এটি যদি পুরোপুরি সফল হয় তাহলে হর্ন অব আফ্রিকার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুখের বার্তাই নিয়ে আসবে। সূত্র: বিবিসি
বিবার্তা/নিশি