মা! পৃথিবীর সর্ববহুল উচ্চারিত, সর্বোত্তম শ্রুতিমধুর এক অক্ষরের একটি শব্দ, যে শব্দের সাথে অন্য কোনো শব্দের তুলনা হয় না। তাইতো কবি বলেছেন, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’
মা, এই ছোট শব্দটির ভূমিকা আমাদের জীবনে অসীম। এই শব্দটি এত শান্তির যে মনের অজান্তেই উচ্চারিত হয় ‘মা’। সকল দুঃখ-কষ্ট লাঘব করে দেয় এ শব্দটি। সন্তানের মুখে এই ডাকেই একজন নারী পান তার জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান। তেমনি এই ছোট শব্দটির ওপর নির্ভর করে একজন মানুষের জীবন।
পৃথিবীর বুকে পদার্পণের পরেই মায়ের মমত্বের পরশ বা মাতৃস্নেহ পৃথিবীর সবকিছুর উর্ধ্বে। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে মানুষ করার, প্রতিষ্ঠিত করার সার্বক্ষণিক চেষ্টা থাকে মায়ের। সন্তানের মঙ্গল কামনায় মা নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।
পৃথিবীর সব দেশের শিশুর প্রথম ভাষা ‘মা’। তাই এক কথায় মা শব্দটি আসলে কোনো ভাষার নিজস্ব সম্পত্তি নয়। মা শব্দের কোনো বিকল্প নেই। নানা ভাষায় মা সর্বোত্তম শ্রুতিমধুর একটি শব্দ। কিন্তু মা ডাকটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় এবং বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। আসুন জেনে নিই বিশ্বের কয়েকটি দেশের মা ডাক সম্পর্কে-
বাংলা–মা, উর্দু-আম্মি, হিন্দি-মা, ফ্রান্স-মেরে, জার্মান-মুট্টার, ইংরেজি-মম, মাম্মি, মাদার; ইতালিয়ান-মাদ্রে, পর্তুগিজ-মায়ে, আলবেনিয়ান-মেমে, বেলরুশান-মাটকা, সার্বিয়ান-মাজকা, ডাস মোয়েন্ডেরে-মোয়ের, ক্রিশ্চিয়ান-এমো, গ্রিক-মানা, হাওয়াইয়ান-মাকুয়াহাইন, ক্রোয়েশিয়া-মাতি কিংবা মাজকা, ড্যানিশ–মোর, আইসল্যান্ড-মোয়ির, আইরিশ-মাতাইর, নরওয়েজিয়ান-মাদার, পোলিশ-মামা বা মাটকা, পাঞ্জাবি-মাই বা মাতাজি, রোমানিয়ান-মামা/মাইকা, রাশিয়ান-মাত, তেলেগু-আম্মা, সিন্ধি-উম্মি, আক্কাদিয়ান-উম্মা, বসনিয়ান-মাজকা, ফরাসি-মেরি/মামা, পারসিয়ান- মাদার/মামা, ব্যাবিলন-উম্ম, ইউক্রেনিয়ান-মাতি, বুলগেরিয়ান –মাজকা, প্রাচীন গ্রিক-মাতির মায়ের সমার্থক শব্দ।
লক্ষণীয় পৃথিবীর সব ভাষার মা শব্দটির প্রথম বর্ণ ‘ম’ ধ্বনি, এবং শব্দের উচ্চারণও প্রায় একই রকম। তবে কিছু ভাষা এমনও রয়েছে যেখানে ‘ম’ নেই কিন্তু এসব ভাষার সংখ্যা খুবই কম। যেমন ফিলিপিনো ভাষায় মাকে বলা হয়, ‘নানায়’ এবং তুর্কি ভাষায় বলা হয়, ‘এন্নে’ যেখানে ম নেই।
এছাড়া আমাদের সমাজে মাকে আরো বলা হয়, আম্মাজান, মাম্মী বা মম। এখানেও দেখা যাচ্ছে ‘ম’ আছে। ধারণা করা হয় বাংলা ভাষায় প্রথম শব্দ ‘ওম’, যার প্রচলিত রূপ ‘মা’।
মা নামের শব্দের অনেক সমার্থক শব্দও রয়েছে। যেমন: জননী–জনী প্রজানিকা-প্রজায়িনী, মা-মাতা, অম্বা-অম্বালা, আই-আক্কা, মামনি –মাম্মি, স্বর্ণপ্রসূ-বীরা, জনয়িত্রী-জনিকা, প্রসূতি-জন্মধাত্রী, মাতৃ-মাতৃকা, অম্বালিকা –অম্বিকা, আম্মা-আম্মি, রত্নগর্ভা-স্বর্ণপ্রসবা।
বিবার্তা/নিশি/কাফী