হিমালয়ের কোলে ভারতের উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগে অবস্থিত একটি মন্দিরকে কেদারনাথের শিব মন্দিরের মতো দেখতে লাগলেও আসলে এর নাম ‘ত্রিযুগিনারায়ণ মন্দির’। ‘ত্রিযুগি’ মানে তিনটি যুগ। আর নারায়ণ মানে বিষ্ণু। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বছরের পর বছর এই মন্দিরের ভেতরে এক অদৃশ্য পবিত্র অগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে আসছে। যার আনুমানিক বয়স তিন যুগ পেরিয়ে গেছে। এই তিন যুগকেই হিন্দিতে ‘ত্রিযুগ’ বলা হয়। আর যেহেতু এটি নারায়ণ মন্দির। তাই এর নাম ‘ত্রিযুগিনারায়ণ মন্দির’।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, পার্বতী ছিলেন ‘ত্রিযুগিনারায়ণ’র রাজা হিমাবত’র কন্যা। সতীর মৃত্যুর পর কার্যত পাগলপারা দশা হয়েছিল শিবের। পার্বতী ছিলেন শিবের পূজারিনী এবং শিবকেই মনে মনে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সতী বিরহে কাতর শিব কোনোভাবেই পার্বতীকে নিজের জীবনে প্রবেশ করতে দিতে রাজি ছিলেন না। শেষমেশ গৌরীকুণ্ডে পার্বতীর নাচ এবং ভালোবাসার বিকিরণে চমকিত হন শিব। পার্বতীর প্রেমকে এরপর আর দূরে ঠেলে দিতে পারেননি তিনি।

বিশ্বাস করা হয় গুপ্তকাশী থেকে কেদারনাথ যাওয়ার পথে মন্দাকিনী নদীর তীরে শিব বিবাহের প্রস্তাব দেন পার্বতীকে। রাজা হিমাবতের ব্যবস্থাপনায় রাজধানী ত্রিযুগিনারায়ণের ‘ত্রিযুগিনারায়ণ’ মন্দিরেই বসেছিল বিয়ের আসর। ‘ত্রিযুগিনারায়ণ’র পবিত্র আগুনের সামনেই পার্বতীর সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন শিব। সেই থেকে এই অগ্নিকুণ্ড এবং ‘ত্রিযুগিনারায়ণ মন্দির’কে দেবতাদের স্থান হিসেবেই ধরা হয়। বিয়ের আসরে পার্বতীর ভাইয়ের ভূমিকা পালন করেছিলেন স্বয়ং বিষ্ণু। আর এই বিয়ের পুরোহিত ছিলেন খাস ব্রহ্মা। এমনকি বিয়ের আচার পালনের সময় শিব ও পার্বতী তিনটি কুণ্ডে স্নান করেছিলেন। যা পরবর্তীকালে ব্রহ্মকুণ্ড, রুদ্রকুণ্ড এবং বিষ্ণুকুণ্ড বলে পরিচিতি পায়।
বর্তমানে যারা এই মন্দিরে আসেন তারা সঙ্গে করে একটি কাঠের টুকরো নিয়ে প্রবেশ করেন। ‘অখণ্ড ধুনি’ নামে এই আগুনে সেই কাঠের টুকরো পুড়িয়ে দেন তারা। এরপর সেই কাঠের টুকরোর ছাইকে প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করেন। যারা প্রথমবার এই মন্দিরে আসেন তারা একইসঙ্গে পাঁচ কিলোমিটার দূরে থাকা গৌরীকুণ্ড এবং সরস্বতীকুণ্ড ঘুরে যান।
বিশ্বাস করা হয়, নিঃসন্তান দম্পতি এই ‘ত্রিযুগিনারায়ণ মন্দিরে’ এসে পুজো দিলে মনস্কামনা পূরণ হয়। এমনকি, সদ্য বিবাহিত দম্পতি এই মন্দিরে পূজো দিতে পারলে তাদের সাংসারিক জীবনে সুখ ও শান্তি বিরাজ করে বলেই দাবি করা হয়।
বিবার্তা/নিশি