রিজার্ভ চুরির পরও ব্যাংকিং খাতে আস্থা

রিজার্ভ চুরির পরও ব্যাংকিং খাতে আস্থা
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:০০:৪২
রিজার্ভ চুরির পরও ব্যাংকিং খাতে আস্থা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর ব্যাংকিং খাতে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছিল, তা সরকারের নানামুখী দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে আস্থা ফিরেছে। বলা হচ্ছে, রিজার্ভ চুরির পরও ব্যাংকিং খাতে আস্থা বিরাজ করছে। 
 
এটা ঠিক যে, সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের অর্থ লুট, ঋণ বিতরণে অগ্রণী ব্যাংকের নানা অনিয়ম এবং সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিশাল অঙ্কের চুরির ঘটনায় দেশের ব্যাংকিং খাত ঝুঁকিতে পড়েছিল। কিন্তু সেই ধাক্কা সামলে আস্থা ফিরেছে ব্যাংকিং খাতে। একই সঙ্গে এই খাতের সক্ষমতাও আগের থেকে অনেক বেশি বেড়েছে।
 
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, ‘অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারনেই বর্তমানে আমাদের আর্থিক স্বাস্থ্য অনেক ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে’।
 
অর্থমন্ত্রীর কথার মিল পাওয়া গেছে আগেই। ব্যাংকিং খাতকে সচল ও স্বচ্ছ রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের অনিয়মের ঘটনায় অপসারণ করছিল ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে।
 
এছাড়া দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আবদুল হামিদকেও অপসারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি শক্ত অবস্থানও বলা চলে।
 
অর্থনীতিবিদদের মতে, স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথেষ্ট ভুমিকা পালন করছে এবং এর সুফল হিসেবে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে জনগনের মাঝে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে এবং সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ছে।
রিজার্ভ চুরির পরও ব্যাংকিং খাতে আস্থা
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কার, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নজর দেয়া হয়েছে এবং কোথায় কী ধরনের দুর্বলতা আছে, ত্রুটি আছে, ঘাটতি আছে, সব কিছু চিহ্নিত করা হয়েছে ও সেগুলোকে ঠিক করতে কাজও চলছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার (রিজার্ভ চুরি) পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য বিশ্বের সব থেকে উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
 
এদিকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (সঞ্চয়ন) ৩১ বিলিয়ন বা তিন হাজার ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
 
ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থিতিশীল ধারা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে বড় অবদান রেখেছে। বিশ্লেষকেরা জানান, ৩১ বিলিয়ন ডলারের এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসেবে প্রায় ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী জানান, সময়োপযোগী বৈদেশিক মুদ্রা মজুত ব্যবস্থাপনার কারণে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যের দাম কম থাকায় পরিমাণের দিক দিয়ে আমদানি বাড়লেও বৈদেশিক মুদ্রার তুলনামূলক ব্যয় কম হচ্ছে।
 
তিনি আরো বলেন, রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি আছে। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নতুন এ মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
 
এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে বেসরকারি খাতকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সাধুবাদ জানিয়েছে। তারা এবারের মুদ্রানীতিকে বিনিয়োগবান্ধব বলেও ঘোষণা করেছে।
 
ব্যবসায়ীদের মতে, ঘোষিত মুদ্রানীতি পুরোটাই ব্যবসায়ীদের পক্ষে। কারণ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ ধরলেও তারা ১৭ শতাংশ অতিক্রম করবে বলে তারা আশা করছেন।
 
এদিকে চলতি বছরের জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে রেমিটেন্স প্রবাহ ১৮ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে দেশে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা গত জুলাইয়ে ছিল ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স আয় সামান্য কমেছে। সাধারণত ঈদের সময় রেমিট্যান্স আসার প্রবণতা বাড়ে।
 
আবার ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মোট ৩৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা এর আগের প্রান্তিক অর্থাৎ এ বছরের জানুয়ারি-মার্চে পাঠানো রেমিট্যান্সের তুলনায় ২৯ কোটি ৯০ লাখ ১০ হাজার ডলার বা ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।
 
২০১৬ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৩৫৭ কোটি ২৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। রেমিট্যান্স নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি বিভাগ থেকে সর্বশেষ প্রকাশিত এ বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
 
এতে আরো জানানো হয়, দীর্ঘ দিন রেমিট্যান্স প্রেরণে শীর্ষে থাকা সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখলে নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মজীবী প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ৭২ কোটি ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন আমিরাতে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা।
 
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে নতুন করে শীর্ষে ওঠা সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা প্রবাসীরা ৭২ কোটি ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা মোট রেমিট্যান্সের ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। একই প্রান্তিকে ৭২ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন সৌদি আরবে থাকা প্রবাসীরা; যা মোট রেমিট্যান্সের ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ।
 
এ ছাড়া মোট রেমিট্যান্সের ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, ৯ দশমিক ১১ শতাংশ মালয়েশিয়া প্রবাসী, ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ কুয়েত প্রবাসী, ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ ওমান প্রবাসী এবং ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ অন্যান্য দেশে কর্মজীবী প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন।
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com