ফিরে এলো রূপালি ইলিশের সুদিন

ফিরে এলো রূপালি ইলিশের সুদিন
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৭:০২:০২
ফিরে এলো রূপালি ইলিশের সুদিন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

এই মুহূর্তে দেশের খাদ্যপণ্যে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ইলিশের দাম কমে যাওয়া। কারণ সাগরে এখন টনে টনে ইলিশ মিলছে। অথচ মাত্র কয়েকদিন আগেও বাংলাদেশের মানুষের খাবার তালিকা থেকে প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছিল ইলিশ। আকাশচুম্বী দামে বিক্রি হতো বছর কয়েক আগে।

শুধুমাত্র উচ্চবিত্তরাই এর দেখা পেতেন। বিশেষ দিনগুলোতে ইলিশ পেতে অনেকে অগ্রিম অর্ডারও করে রাখতেন বিক্রেতাদের কাছে। দুর্লভ হয়ে ওঠা সেই রূপালি ইলিশ আবার মানুষের পাতে ফিরে এসেছে। পাড়া-মহল্লায় এখন বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। গ্রামগঞ্জসহ শহর বন্দরে হরদম বিক্রি দেখে বলা যায় ফিরে এসেছে রূপালি ইলিশের সুদিন। দামও ক্রেতার নাগালে এসেছে। আগে যেখানে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় একটি মাত্র ইলিশ কেনা যেত, সেখানে এখন এই দামে মাঝারি সাইজের ৪-৬টি ইলিশ কিনছেন ক্রেতারা।

ইলিশ নিয়ে মৎস্য অধিদফতর যে কর্মসূচি চালু করেছিল তা আজ অনেকটাই সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে। ইলিশকে শুধু হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষাই নয়, এর উৎপাদনও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে দেশের মানুষের পাতে বেশি বেশি করে ইলিশ উঠছে। কিছুদিন ধরে বাজারে ইলিশের জোয়ার তার প্রমাণ দিচ্ছে। এমনটিই দাবি মৎস্য অধিদফতরের ইলিশ প্রকল্পের পরিচালক জাহিদ হাসানের।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সাগর-নদী বিধৌত উপকূলীয় এলাকা চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, পটুয়াখালীর ২১ উপজেলার জাটকা নিধন বন্ধ, মা ইলিশ রক্ষা ও ইলিশের বংশ বিস্তারের জন্য ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। পরবর্তীতে এ কর্মসূচি ছড়িয়ে দেয়া হয় দেশের ২৫ জেলার ১৩৬ টি উপজেলায়। তার সুফল এখন আমাদের হাতে।


তিনি জানান, ভোলা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ইলিশ বিচরণ ক্ষেত্র গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২১ দিন দেশের সব নদীতে মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এ সময় ইলিশ শুধু শিকারই নয়, বিক্রির জন্য হাট-বাজারে তোলা বা সংরক্ষণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।

জাহিদ হাসান বলেন, ইলিশ অভয়ারণ্য ঘোষণা ও নতুন প্রকল্প গ্রহণ সংক্রান্ত একটি সভা ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় কাকরাইলের মৎস্য অধিদফতরে অনুষ্ঠিত হবে। আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস অভয়াশ্রমের ঘোষণা দিয়ে জাটকাসহ (ইলিশের পোনা- ২৫ সে.মি. দৈর্ঘ্য পর্যন্ত) সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকরণের।এসব কার্যক্রমের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে বলেই মনে করেন তিনি।
ফিরে এলো রূপালি ইলিশের সুদিন


পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ইলিশের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৯৮ মেট্রিকটন। ২০১৪-১৫ সালে সে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টনে। এ বছরের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। এছাড়া মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধের সময়সহ কর্মহীন মৎস্যজীবীদের ক্ষতিপূরণ/প্রণোদনা হিসেবে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় প্রতি মৎস্যজীবী পরিবারে প্রতি মাসে ৪০ কেজি হিসেবে চার মাস চাল দেয়া হচ্ছে। এবার তাদের ৮০ কেজি করে চাল দেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি মৎস্য অধিদফতরের জাটকা সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে হতদরিদ্র মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা হচ্ছে।

এদিকে ইলিশ নিয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ মাছ বিষয়ে গবেষক ড: আনিসুর রহমান বলেন, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় বাজারে এর দামও কমে এসেছে। মা ইলিশ এবং জাটকা রক্ষার জন্য বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশের উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘একটি ইলিশ একবারে গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ ডিম ছাড়ে। ভেবে দেখুন এটা কত বড় একটা বিষয়।’ ড. রহমান জানান মা ইলিশ যাতে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য প্রতিবছর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে প্রায় তিন সপ্তাহ দেশের সাত হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে।

এ জায়গাগুলো হচ্ছে, ভোলার তজুমুদ্দিন, চট্টগ্রামের গন্ডামারা, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এবং পটুয়াখালীর কিছু এলাকা। তিনি জানালেন, ডিম ছাড়ার পর সে ইলিশ যাতে বড় হতে পারে সেজন্য প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসে দেশের পাঁচটি এলাকায় জাটকা বা ছোট ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

যে জায়গাগুলোতে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সেগুলো হচ্ছে লক্ষ্মীপুর, ভোলা, নোয়াখালী, চাঁদপুর এবং পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ইলিশের উৎপাদন আরো বাড়বে বলে মনে করেন ড. রহমান। তিনি জানিয়েছেন, যে সময়টিতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে সে সময়টিতে জেলেরা যাতে বিকল্প কর্মসংস্থান করতে পারে সেজন্য সরকার প্রকল্পও চালু করেছে। আর এরই জন্য ইলিশের সুদিন ফিরে এসেছে বলে মনে করেন তিনি।

বিবার্তা/জিয়া/নিশি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com