রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আক্তার জাহান জলির (৩৮) স্বাক্ষরবিহীন একটি ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে কিছুটা রহস্য দেখা দিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, ওই শিক্ষিকা আত্মহত্যা করেছেন।
শুক্রবার রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষে শিক্ষিকা আক্তার জাহানের ল্যাপটপের নিচ থেকে সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই কক্ষেই থাকতেন। এখান থেকেই তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
সুইসাইড নোটে লেখা আছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক, মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করলাম। সোয়াদকে (ছেলে) যেন ওর বাবা কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে। যে বাবা সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে- সে যে কোনো সময় সন্তানকে মেরে ফেলতে পাওে বা মরতে বাধ্য করতে পারে। আমার মৃতদেহ ঢাকায় না নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেয়ার অনুরোধ করছি।’
রাত ১০টার দিকে পুলিশ, ডিবি পুলিশ, র্যাব, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও পুলিশের অপরাধ দমন বিভাগের (সিআইডি) উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্ষটিতে তাদের অনুসন্ধান শেষ করেন। এরপর কক্ষটিতে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়।
পরে রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) আমির জাফর সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষিকা আক্তার জাহানের কক্ষে একটি ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া গেছে। নোটে তার স্বাক্ষর নেই। তবে তার সহকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন নোটটি তার হাতেরই লেখা। এছাড়া তার কক্ষে একটি বোতলে তরল রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে। সেটি কী তা পরীক্ষা করা হবে।
উপ-কমিশনার বলেন, ওই শিক্ষিকার কক্ষ থেকে আলামত হিসেবে বেশকিছু জিনিস জব্দ করা হয়েছে। সবকিছুই যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে আক্তার জাহানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার লাশ বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
কয়েক বছর আগে স্বামী তানভীর আহমেদের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে আকতার জাহানের। তার সাবেক স্বামী তানভীর আহমেদও রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক।
বিভাগের সাবেক সভাপতি তানভীর আহমেদ দ্বিতীয় বিয়ে করে ক্যাম্পাসের আলাদা একটি কোয়াটারে থাকেন। অন্যদিকে জুবেরি ভবনে একাই থাকতেন সহযোগী অধ্যাপক আক্তার জাহান। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আজম শান্তনু বলেন, অধ্যাপক আক্তার জাহানের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা বিষয়টি নিয়ে এখন পুলিশের ওপরই নির্ভরশীল। পুলিশের তদন্তে কী বের হচ্ছে, তার দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি। তদন্তে অন্য কিছু বের হলে রাবির শিক্ষক সমাজ এর প্রতিবাদ করবে।
বিবার্তা/রিমন/রয়েল