ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি তুলছে ভারত

ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি তুলছে ভারত
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০১৬, ১৪:২৩:৩৩
ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি তুলছে ভারত
মিরসরাই প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+
দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমার ১৭টি সীমান্ত পয়েন্টে ফেনী নদী থেকে পানি অবৈধভাবে পানি তুলে নিচ্ছে ভারত। এ জন্য সাব্রুমসহ বিভিন্ন পয়েন্টের ২৬টি স্থানে পাম্প মেশিন বসিয়েছে। কোনো চুক্তি ছাড়াই এক যুগ ধরে রামগড়, উত্তর ফটিকছড়ি ও মিরসরাইয় সীমান্তের ওপারে ভারত পানি তুলে নিচ্ছে। তবে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিজিবি এই বিষয়ে সজাগ হয়েছে। মেশিনগুলো তুলে নিতে সম্প্রতি বিএসএফকে চিঠি দিয়েছে বিজিবি।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমার ১৭টি সীমান্ত পয়েন্টে ফেনী নদী থেকে পানি উত্তোলনের জন্য নোম্যান্সল্যান্ডে ভারত অবৈধভাবে ২৬টি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎচালিত লো লিফট পাম্প মেশিন বসিয়েছে। কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়াই ভারত দীর্ঘদিন ধরে এ পাম্প মেশিনগুলোর মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে ফেনী নদী থেকে দৈনিক এক শতাধিক কিউসেক পানি তুলে নেয়। একতরফাভাবে পানি নেয়ার ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের ফেনী নদী শুকিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়। 
 
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রামগড় সীমান্তের ওপারে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে বিএসএফের কাছে এ চিঠি হস্তান্তর করা হয়। জানা গেছে, এ নদী থেকে ভারত চুক্তির মাধ্যমে আরো ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি তুলে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। 
ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি তুলছে ভারত
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে পানি উত্তোলন বন্ধ করার পর ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টনচুক্তি করতে কোনো আপত্তি নেই। সম্প্রতি সাব্রুমে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বৈঠকে বিজিবির গুইমারা সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম জাহিদুর রশীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন রামগড় ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর হুমায়ুন কবির, গুইমারা সেক্টরের জি টু মেজর রেজাউল হান্নান শাহীন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী খ ম জুলফিকার তারেক।
 
ভারতের পক্ষে বিএসএফের উদয়পুর সেক্টরের ডিআইজি ইয়াদ ভান্দ্রার নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে সাব্রুমের ৩১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার টি সিং নেগী ও সাব্রুম মহকুমার পানি উন্নয়ন বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন। 
 
বিজিবির গুইমারা সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম জাহিদুর রশীদ গতকাল বলেন, ভারত ফেনী নদী থেকে ২৬টি পাম্প মেশিনের মাধ্যমে দৈনিক এক শতাধিক কিউসেক পানি তুলে নিচ্ছে। এখন বাংলাদেশের সাথে চুক্তির মাধ্যমে আরো এক দশমিক ৮২ কিউসেক পানি নিতে চায়। সাব্রুম মহকুমার বাসিন্দাদের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে তারা এ দাবি করছে।
 
তিনি বলেন, বৈঠকে ভারতীয় পক্ষকে ফেনী নদীর পাড়ে অবৈধভাবে স্থাপিত পানির পাম্প মেশিনগুলো তুলে নিতে অনুরোধ জানানো হয়। এ ব্যাপারে একটি লিখিত পত্রও বিএসএফকে দেয়া হয়েছে। মেশিনগুলো তুলে নেয়ার পর নদীর পানির পরিমাণ নির্ণয় করে হিস্যা অনুযায়ী ভারত পানি নিতে পারে।
 
জানা যায়, ভারত ফেনী নদীর জলপ্রবাহ থেকে ৩০-৫০ গজ দূরে ঢেউটিন দিয়ে স্থায়ীভাবে পাম্প হাউজ নির্মাণ করে সেখানে বিদ্যুৎচালিত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মোটর বসিয়ে নদী থেকে পানি তুলে নেয়। মোটর চালানোর জন্য প্রতিটি পাম্প হাউজে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে। মানুষের নজরে না আসার জন্য অধিকাংশ পাম্প হাউজ মাটির নিচে টিন অথবা পাকা দেয়াল তৈরি করে স্থাপন করা হয়েছে। 
 
এছাড়া পাম্প হাউজ থেকে নদীর পানি পর্যন্ত খনন করে মাটির নিচ দিয়ে ৬-৮ ইঞ্চি জিআই এবং পিভিসি পাইপ বসানো হয়। এসব পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে সাব্রুম মহকুমার সীমান্ত এলাকার হাজার হাজার একর ফসলি জমিতে সেচ দেয় ভারত। আষাঢ়-শ্রাবণ ছাড়া বাকি ১০ মাসই ভারত পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি তুলে নেয়। ১৯৮২ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে এ পাম্প হাউজগুলো স্থাপন করা হয়।
 
পাউবোর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী খ ম জুলফিকার তারেক বলেন, কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়া ভারত অন্যায়ভাবে এত বছর ফেনী নদী থেকে পাম্প বসিয়ে পানি নিয়ে গেছে। বিষয়টি সমাধান হতে ঢাকা-দিল্লি বৈঠক ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা বার বার নিষেধ করেছি। এবারও চিঠি দিয়েছি। তারা পানি নিতে পারে, তবে তিস্তার বিষয়ে আমাদের ছাড় দিতে হবে। 
 
তিনি জানান, আগামী ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দুই দেশের বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে সংকট উত্তরণের সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ইতিমধ্যে ওরা পানি চুরি করলে তা সেই বৈঠকে উত্থাপিত হবে। 
 
প্রসঙ্গত, ফেনী নদীর মোহনায় বাঁধ দিয়ে মুহুরি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচের জন্য ফেনী নদীতে পানি রিজার্ভ করে রাখে বাংলাদেশ। ভারত সেখান থেকেই অবৈধভাবে পানি উত্তোলন করছে।
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com