সরকারের যুগোপযোগী, ভারসাম্যপূর্ণ ও কৌশলী সিদ্ধান্তের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র যেমন বাংলাদেশকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে তেমনি রাশিয়াও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাইছে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে পিছিয়ে নেই চীনও। আর সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আগামী ১৪ অক্টোবর দুই দিনের ঢাকা সফরে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের প্রায় ২৬টি প্রকল্পে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার অর্থায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে। এই সফরের সময় প্রায় ২০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, শিল্প উৎপাদন বিষয়ক রূপরেখা চুক্তি এবং বিনিয়োগ ও উৎপাদন বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চীনের প্রেসিডেন্টের আসন্ন ঢাকা সফরে বেশ কয়েকটি প্রকল্পে দেশটির বিনিয়োগের ঘোষণা আশা করছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। তবে কৌশলগত কারণেই সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পে বিনিয়োগ নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা করবে না বাংলাদেশ। এই দুটি প্রকল্পের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতকে গুরুত্ব দিতেই বাংলাদেশ এই দুটি প্রকল্প নিয়ে চীনের সঙ্গে কথা বলছে না।
তবে চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ চূড়ান্ত হবে, তবে সফরটি ভূ-রাজনৈতিকভাবেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকার বর্তমান ও সাবেক কূটনীতিকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফর করে গেছেন। এখন চীনের প্রেসিডেন্ট আসছেন। বিগত ৩০ বছরের মধ্যে এটাই হবে চীনের কোনো প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর। এশিয়ার শক্তিশালী এই দেশ দুটির মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উঠানামা করলেও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিন থেকেই একইরকম। বাংলাদেশ সরকার সার্বিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক দিক থেকে এই দুই দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। আর এই দুটি দেশ তাদের স্বার্থেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে কাজ করছে। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের সঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ঢাকা সফর করে গেছেন।
আগামী ১৪ অক্টোবর ঢাকা সফরে এসে চীনের প্রেসিডেন্ট পরের দিন ভারতের গোয়ায় যাবেন। এর আগে ১৯৮৬ সালের মার্চে চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শিয়ান আন এক দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন।
বিবার্তা/জিয়া