তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব এক পরিবারের মেয়ে আর্জিনা (১৩)। চার ছেলেমেয়েকে অতি কষ্টে সংসার চালাতে হয় তার বাবা-মাকে। কিন্তু ছেলেমেয়েকে পেটভরে খাওয়ানোর সামর্থ্য নেই তাদের।
তাই দু’বেলা দু’মুঠো খাওয়ার জন্য মাত্র ছয় বছর বয়সে আর্জিনা পরের বাসায় কাজ করতে যেতে হয়েছে। সেখানেও নিঃস্তার মেলেনি হতভাগ্য এই মেয়েটির।
দীর্ঘ ৭ বছর কাজ করার পর গৃহকর্তার স্ত্রী ও মেয়ের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে।
শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়ার দাগ, প্লায়ার্স দিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে শরীরের বিভিন্ন স্থানের মাংস, ডান হাত ও কোমরের হাড় ভাঙা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন, মাথার চুল কাটা।
এমন অবস্থায় রবিবার দুপুরে আর্জিনাকে ডিমলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়েটি ঠিকমত কথাও বলতে পারছে না। এদিকে মেয়ের এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছে তার পরিবার। একে তো অভাবের সংসার, তার উপর মেয়ের চিকিৎসার ভার! ঘটনাটি ঘটে টাঙ্গাইল জেলা সদরের জেলার বিশ্বাস বেতটার সিংনাথ পাড়ায়।
২০০৯ সালে ডিমলার আরজি শেখ সুন্দর গ্রামের আনছের আলীর মেয়ে আর্জিনা বেগমকে ‘কাজের মেয়ে’ হিসেবে নিয়ে যান টাঙ্গাইল জেলার সিংনাথ পাড়ার আমির উদ্দিনের ছেলে তাজুল ইসলাম। মেয়েটি সেখানে দীর্ঘ সাত বছর ধরে কাজ করেছে। তবে গত এক বছর ধরে তাজুল ইসলামের স্ত্রী আমেনা বেগম ও মেয়ে লাভলী আক্তার আর্জিনাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে আসছিল।
আজিনার মা আনজু বেগম বলেন, তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে আর্জিনা সবার বড়। ২০০৯ সালে আর্জিনাকে যখন টাঙ্গাইল পাঠাই তখন তার ৬ বছর। মেয়েটি ৬ বছর সেখানে ভালই ছিল। প্রতি ঈদে বাড়ি আসার সময় সবার জন্য নতুন কাপড় নিয়ে আসত।
গত ৬ মাস থেকে মেয়ের সাথে মোবাইলে কথা হতো না। যখনই সেখানে ফোন দেই, বলে- ‘আমি বাইরে আছি, বাড়িতে গিয়ে রিং দিব।’ কিন্তু আর রিং দেয় না। গত রোজার ঈদে মেয়ে আমার বাড়ি আসেনি- বলেছিল পরের ঈদে যাবে। কিন্তু কোরবানির ঈদে বাড়ি না আসায় সন্দেহ হয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে আর্জিনার দাদা নুর মোহাম্মদ তাকে আনতে গিয়ে দেখে সে বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। অনেক কষ্ট করে শনিবার সকালে তিনি টাঙ্গাইল থেকে আর্জিনাকে ডিমলায় নিয়ে আসেন।
পরে আর্জিনার অবস্থা দেখে গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন তাকে রবিবার দুপুরে ডিমলা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ডিমলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার ইয়াজমিন ইসলাম বলেন, মেয়েটিকে দীর্ঘদিন থেকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়া দাগ রয়েছে। ডান হাতের বাহুর হাড়, কোমরের হাড় ভাঙা, হাতের নখগুলোতে সিরিঞ্জ ঢুকানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্লায়ার্স দিয়ে মাংস তুলে নেয়া হয়েছে। সে মারাত্মক অসুস্থ। তাকে দ্রুত রংপুর হাসপাতালে হস্তান্তর করা দরকার।
এ ব্যাপারে গৃহকর্তা তাজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, নির্যাতনের বিষয়টি সত্য নয়। আমার পরিবারের লোকজন তার উপর নির্যাতন করেছে কিনা বলতে পারব না। ডান হাত ও কোমরের হাড় ভাঙা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটি আগে থেকে ভাঙা ছিল। আগে থেকেই তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘায়ের দাগ রয়েছে।
মেয়েটিকে বিয়ে দিলে যাবতীয় খরচ দেয়া হবে বলে তার পরিবারকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিবার্তা/জিয়া