সরকারি স্কুলগুলোতে ৩০ বছরের মধ্যে কোনো নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ পদ সৃষ্টি না হওয়ায় তিন পার্বত্য জেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো চরম শিক্ষক-কর্মচারী সংকটে ভুগছে।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বলেছেন, তিন পার্বত্য জেলার শিক্ষা কার্যক্রমে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পেছনে তিনটি মৌলিক কারণ সক্রিয় রয়েছে। প্রথমত, ৩০ বছর ধরে নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়া। দ্বিতীয়ত বিদ্যমান পদের চেয়ে জনবল কম থাকা। তৃতীয়ত এসব জেলায় চাকরি করতে শিক্ষকদের অনীহা।
সূত্র মতে, তিন পার্বত্য জেলার ১৮টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট ৪৫২টি শিক্ষক-কর্মচারীর পদের মধ্যে ১৫৩টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে গড়ে প্রতি শ্রেণীতে ১৪/১৫টি আবশ্যিক বিষয় (সাবজেক্ট) থাকলেও তিন জেলার সাতটি স্কুলে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন মাত্র ৫/৯ ও ১০ জন করে।
এই সমস্যা সম্পর্কে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখার উপ-পরিচালক একেএম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আশির দশকে এসব স্কুল জাতীয়করণ করা হয়। এরপর এগুলোতে আর নতুন পদ সৃষ্টি হয়নি। আমরা পদ সৃষ্টির জন্য বারবার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এ সংক্রান্ত ফাইল অর্থমন্ত্রণালয় হয়ে জনপ্রশাসনে গিয়েই আটকে যায়। আবার নতুন শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না এবং কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এজন্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’
সূত্র মতে, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার মোট ছয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীর পদ রয়েছে ১৪৮টি, যার মধ্যে ৪৬টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীর মোট পদই রয়েছে মাত্র পাঁচটি, যার মধ্যে একটি পদ শূন্য ও জুরাছড়ির ভুবনজয় উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ৯টি পদের মধ্যে পাঁচটিই খালি এবং রাজস্থলীতাইতংপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট ৯টি পদের তিনটি শূন্য রয়েছে।
এছাড়া জেলার রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট ৫০টি পদের মধ্যে ১৮টি শূন্য ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০টি পদের ১০টি শূন্য এবং কাপ্তাই নারানগিরি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫টি পদের মধ্যে ৯টি পদ শূন্য রয়েছে।এ ব্যাপারে রাঙ্গামাটির জেলা শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশীদ সরকার বলেন, ‘জেলা সদরের দুটি স্কুল ছাড়া বাকি চারটি হাই স্কুলের অবস্থা খুবই খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা সরকারি স্কুলে ভর্তিই হতে চায় না। মাত্র ৪/৫ জন শিক্ষক দিয়ে একটি সরকারি হাই স্কুল কীভাবে চলে?’
এদিকে বান্দরবানের মোট সাতটি সরকারি হাই স্কুলের চারটিই বন্ধের পথে। বাকি তিনটির অবস্থাও করুণ। এর মধ্যে বান্দরবান সরকারি হাই স্কুলের মোট ৫০টি পদের ১৪টি শূন্য ও সরকারি বালিকা হাই স্কুলের মোট ৪৯টি পদের ১৭টি শূন্য, লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫টি পদের ১৬টি খালি, আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশটি পদের তিনটি খালি, রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নয়টি পদের চারটি শূন্য, রুমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নয়টি পদের চারটি শূন্য এবং নাইক্ষ্যংছড়ি ছালেহ আহমদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাত্র নয়জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। সবমিলিয়ে বান্দরবানের মোট সাতটি সরকারি স্কুলের ১৬১টি পদের মধ্যে ৫৮টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
খাগড়াছড়ির পাঁচটি সরকারি হাই স্কুলের মোট ১৪৩টি শিক্ষক-কর্মচারীর পদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই ৪৯টি শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট ৫০টি পদের মধ্যে ১৪টি শূন্য ও খাগড়াছড়ি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪০টি পদের মধ্যে ১৪টি শূন্য, রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫টি পদের মধ্যে ১২টিই শূন্য, দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯টি পদের মধ্যে ৯টিই শূন্য এবং জেলার মানিকছড়ি রাণী নীহার দেবী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাত্র নয়জন শিক্ষক কর্মচারী আছেন।
বিবার্তা/জিয়া